avertisements 2

শুধু মাধবীর জন্য-১৫

মো: আসাদুজ্জামান
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৬ সেপ্টেম্বর,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:০৪ পিএম, ২৫ এপ্রিল,বৃহস্পতিবার,২০২৪

Text

 

মাধবী, 
অদৃশ্য তুমি আমার রাগ অনুরাগের ছায়া - কায়া, আমার অস্তিত্বের গভীরে প্রোথিত অনুভূতি তুমি যেখানে আমি নিভৃতচারী প্রহরী । তোমাকে যখন দেখি, তার চেয়ে বেশী দেখি যখন দেখিনা । আমি জানি প্রেম একটি জলন্ত সিগারেট, যার শুরুতে আগুন এবং শেষ পরিণতি ছাই।এরপরও ভালোবাসি অস্তিত্বহীন নিরাকার তোমাকেই !
সেপ্টেম্বর মাস মাধবী ,  শ্রাবণ সন্ধ্যা আর শারদ প্রভাত উপভোগের প্রহর গুনছি ! বিএনপি’র  ৪৩তম জন্মতিথি এই সেপ্টেম্বরে । এই সেপ্টেম্বর মাস আমার আরও দু’টি কারনে প্রিয় । সে কথা অন্যদিন লিখবো। আজ তোমাকে রসকষহীন রাজনীতিতে একটি অনাহুত বিতর্কের গল্প বলি । 
মাধবী,
হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, ভালোবাসাহীন জীবনে রক্তক্ষরণ এমনিতেই নিত্য ঘটে ! কিন্ত এ রক্তক্ষরণ, দেশের জন্য প্রগাঢ় ভালোবাসা থেকে নি:সরিত, প্রিয় স্বদেশের ললাটে নষ্ট রাজনীতির কলংক রেখা দেখতে পাচ্ছি । লাখো শহীদের রক্ত আর মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত প্রিয় স্বদেশ আজ মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে নিত্যদিন । এখানে প্রাণের উচ্ছাস নেই, অনেকের কাছে বেঁচে থাকা অর্থহীন মনে হয় ! স্বাধীনতার ৫০ বছর পর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান  বীরপ্রতীক মুক্তিযুদ্ধে গুলি ফুটিয়েছিলেন কি না , তিনি মুক্তিযোদ্ধা কি না এই প্রশ্নের পাশাপাশি চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের কবরে তাঁর লাশের অস্তিত্ব নিয়ে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী বিতর্ক তুলেছেন । আর স্বাক্ষী মেনেছেন ‘৮২-‘৯০ এর স্বৈরশাসক মৃত এরশাদকে যে এখন কবর থেকে উঠে এসে সাক্ষীও দিতে পারবে না । 
এই বিতর্ক অনাহুত, অনাকাংখিত, অপাংতেয়, অবিবেচনাপ্রসূত, উদ্দেশ্যপ্রনোদিত, অনভিপ্রেত একটি বিতর্ক । এই বিতর্ক বাংলাদেশের কিংবা এদেশের মানুষের জন্য কল্যানকর কিছু নয় , এ বিতর্ক প্রতিক্রিয়াশীলতার দিকে দেশকে নিয়ে যাবে । বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাষ্ট্রনায়ক , স্বাধীনতার ঘোষক,  বীর মুক্তিযাদ্ধা শহীদ প্রেসিডন্ট জিয়াউর রহমান বীরপ্রতীক সম্পর্কে এ বিতর্ক কার্যত আওয়ামীলীগের জন্যই বুমেরাং হয়ে দাঁড়িয়েছে ।  এহেন বিতর্কের প্রকাশ্য বিরোধিতা ও সমালোচনা জাতীয়তাবাদী শক্তি , সিভিল সোসাইটি ছাড়াও আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য  জয়নাল হাজারী প্রকাশ্যে করেছেন । অস্ফুট প্রতিবাদ অগনিত কন্ঠে , হৃদয়ে হৃদয় রেখে প্রতিবাদের কন্ঠ সোচ্চার হচ্ছে । বীর প্রতীক জিয়াউর রহমানকে অপমান করতে যেয়ে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী আওয়ামীলীগ সরকারের একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তকে অসন্মান জানিয়েছে বর্তমান আওয়ামীলীগ নেতৃত্ব । কারন, “ ১৯৭৩ সালের ১৫ই ডিসেম্বর”  তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকার মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ৪৭৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে চারটি ভাগে বিভক্ত করে রাষ্ট্রীয় খেতাবে ভূষিত করেছিলেন । চারটি বিভাগ ছিলো যথাক্রমে - বীরশ্রেষ্ঠ, বীরউত্তম, বীরবিক্রম এবং বীরপ্রতীক ।যে সকল মহান যোদ্ধা দু:সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিলেন তাদের মধ্যে ৭ জনকে বীর শ্রেষ্ঠ উপাধি দেওয়া হয় । অন্য ৪৬৯ জনের মধ্যে ৬৮ জন বীরউত্তম, ১৭৫ জন বীরবিক্রম এবং ৪২৬ জনকে বীরপ্রতীকের মাল্য পরানো হয় । মুক্তিযুদ্ধে ১ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার এবং জেড ফোর্সের পূরোধা তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমানকে “বীরউত্তম” পদকে ভূষিত করেছিলেন তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকার । এতদসত্বেও, 
 একজন মন্ত্রি বলেছেন, জিয়াউর রহমানকে প্রমান করতে হবে তিনি মুক্তিযাদ্ধা ছিলেন ! হাসবো না কাঁদবো মাধবী ? আমার ক্ষুদ্র আইনী জ্ঞানে আমি পৃথিবীর সাক্ষ্য আইনের ইতিহাসে মৃত মানুষ কবর থেকে উঠে এসে কোন কিছু প্রমান করার দায় সম্বলিত এমন বিধান পাইনি । অর্থাৎ, burden of proof lies with a dead person এর যে তত্ব তিনি দিয়েছেন তা jurisprudence এর ইতিহাসে অচেনা এক তত্ব ? অবশ্য যে সরকার দিনের ভোট রাতে কেটে, মৃত মানুষের ভোট cast করে ক্ষমতা দখল করে তাদের একজন মন্ত্রি মৃত জিয়াউর রহমানকে কবর থেকে তুলে এনে কোন কিছু প্রমান করতে বলবেন এটাতে আশ্চর্য হই নি, হেসেছি, মজা পেয়েছি !!
মাধবী, 
আজকের বাংলাদেশে সত্য মিথ্যার রঙে রাঙিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সংকুচিত করা হচ্ছে । মুক্তিযুদ্ধের মহিমাকে ‘আমিত্ব’  কিংবা ‘I’ness বা myopic দিয়ে ঢেকে দেওয়ার সর্বনাশা খেলা চলছে ! মুক্তিযুদ্ধ মানেই এক ব্যাক্তি, এক পরিবার, আমি এবং আমরা , আমিত্ব এবং আমরাত্ব তত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে যেয়ে লাখো শহীদের রক্ত ঋণ, লাখো মা বোনের সম্ভ্রমকে খাটো করার অপচেষ্টা চলছে । আমি এ সবের বিরুদ্ধে একজন প্রত্যয়দীপ্ত সমালোচক !  আমি দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি মহান মুক্তিযুদ্ধ কোন একক ব্যাক্তি বা পরিবারের বিষয় নয়, আমাদের স্বাধীনতা সর্বজনের, সবার গর্ব এবং অহংকারের , মুক্তিযুদ্ধ সার্বজনীন । এখানে আইনেস কিংবা মায়োপিক এর কোন অস্তিত্ব নেই । 
মাধবী, প্রিয়তমা আমার, রাতের আঁধার যত গভীর হয় প্রভাতের লাল সূর্যের আভা ততই সমাস্যন্ন  ! আর সেই প্রভাত ফেরীতে তুমি হবে আমার অহনা ? কঠিন কিন্ত শ্রুতি মধুর শব্দ অহনার অর্থ জানো ? অহনা হলো ঈষান কোণে ফুটে উঠা ভোরের সূর্যের কিরণ ! যতদিন আমি সেই অহনা’র প্রতিক্ষায় থাকবো ততদিন কবির সুমনের কন্ঠে “তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা” গানটি ইউটিউবে শুনবে, আমার অস্তিত্ব্রহীন অস্তিত্ব খুঁজে পাবে !!
অনেকদিন পর বশির আহমেদ এর কন্ঠে গান শুনছি- ‘ যারে যাবি যদি যা, পিন্জর খুলে দিয়েছি’ ; “ সজনী গো, ভালবেসে এত জ্বালা কেন বলো না “ ;  “ আমাকে পোড়াতে যদি এত লাগে ভালো” …….😭

 

লেখক: 
আইনজীবি ও রাজনৈতিক কর্মী 
৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2