অতৃপ্তি
অজল জালাল
প্রকাশ: ০৯:১০ পিএম, ২৬ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২০ | আপডেট: ০৪:২৬ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
লিখিতে বসিয়াছি আমি মহাকাব্য এক
লিখিতে লিখিতে সব লেখা হয়ে যায়।
রাজ্যপাট রাজনীতি চরাচর গ্রাম গ্রামান্তর
হেন বস্তু নাই যাহা অলিখিত রয়ে যায় ভবে।
আমার চোখের মনি সার্চ লাইটের দ্যুতিতে
সবকিছু এক হয়ে কালির বিন্দুতে।
আমি লিখিয়াছি সেই ছেলেটির কথা
অজগ্রাম কোটালি পাড়ার দুলাল
রাজাসনে-রাজ্যপাট করিয়াছে জয়।
মেয়েটিও বাদ নেই আমার কলমে
ওয়ারিশি পরম্পরায় ভুবন জয়িনী।
আমি লিখিয়াছি সেইসব সেনাপতিদের কথা
যারা ভক্ষকের ভুমিকা শেষে মাথা হেট করে।
ব্যতিক্রমী সেনাপতি ঘোষনার দীপ্র অহংকারে
তার ঘরানার জায়া দেশনেত্রী বটে;
পঞ্চান্ন হাজার মাইল এই বাংলার ঘরে।
বাদ নেই লাল পতাকায় কাস্তে হাতুড়ির দল
দুর্জয় দুর্মর ওরা-রাজপথ ওদেরই দখলে।
আমার কলমে আজ সলু-কদু-ফজু-বাবু
একে একে সিরিয়ালী সারিবদ্ধ নাম-
তবুও কোথায় যেন ফাঁক রয়ে যায়;
সোনালী ধানের ক্ষেত সরু আইলে ভাত বওয়া
কিশোরী মেয়েটির কথা-কিষান বাপের তরে
দুপুরের একবেলা ভাত-আলুসানা বেগুনের ভাজি।
আরো আছে দলবাঁধা নেংটো ছেলেদের কথা
ভররোদে নদীছোরে ঝপাঝপ পালা করে পড়ে।
আমি সেই মেয়েটির কথা লিখিতে পারিনি
নাকের নোলক পরে ঘোমটায় দ্বাদশ বছরে
সরিষার তেল ঘষে প্রৌঢ় পতির পায়ের তালুতে।
ঠোঁট লাল ফ্রক পরা নিশাচর ইতিউতি
সেই মেয়েটি কি আসিয়াছে আমার কলমে!
আমি লিখিতে পারিনি তার কথা-যে বীরের মা
নাড়িছেঁড়া ধন হারিয়ে আজ পথের কাঙালী।
আমি লিখিব কি তাহাদের কথা!
ছিন্নমূল হা-অন্ন ওইসব মানব সন্তান
দুমুঠো অন্নের খোঁজে দিনভর জঠর জ্বালায়!
আমি লিখিব না তাহাদের কথা
অনন্ত পেশী শক্তির কর্তা হয়ে
সমাজকে কলুষিত করিয়াছে যারা।
লিখিতে অরূচি মোর অনৈতিক গণতন্ত্রের কথা
বখে যাওয়া রাজনীতির হাটুরের দল
চেটেপুটে হাড্ডিসার বাঙালী আদম।
আরো আছে কতিপয় আমলার গপ্
প্রজাতন্ত্রের বড়বাবুর সর্বোচ্চ আসনে
দুয়ে দুয়ে এক,দুর্নীতির চ্যাম্পিয়ন জাতি।
ক্লান্ত আমি অবসন্ন বিষন্ন বদনে
অজানা নাজানা যত স্মৃতিভ্রষ্ট কথা
জ্বরাগ্রস্থ সায়াহ্নের শ্রান্ত প্রতিপদে।