avertisements 2

কবির নীরবতা

অজল জালাল
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১১ সেপ্টেম্বর,সোমবার,২০২৩ | আপডেট: ০৭:৪৩ এএম, ১৪ অক্টোবর,সোমবার,২০২৪

Text

কবিতা লেখার মন ও মনন

  বিপর্যস্ত বিন্যাসের দুর্বিনীত দোলাচালে

মৃতপ্রায়- এক সাগর ভাসা যেন।

কাল পুর্নিমার কোন্ অশনি

কবিকে করেছে আজ কলম বিমুখ!

 কোন্ ঘুর্ণাচলে কবি নীলকন্ঠ!

 কবি বাক্ রূদ্ধ  - ক্ষতবিক্ষত।

এস আজ বস সবে শোন সাতকাহন

কবিতার কন্ঠ আজ রূদ্ধ কেন-

কেন মুহ্যমান।


সুন্দর শুভ্র সকাল! নাহ্ আসছে না

চোতের ঝরা পাতার মড়মড়ে আওয়াজ

নাহ্! তাও কলমে ধরছে না কবির

বোশেখের কাল বৈশাখীর তান্ডব

মন চায় না ওসব লিখতে।

জোষ্ঠির আম কাঠালেও সায় দেয়না মন

কেন যেন আজ এই অকৃত্রিম প্রকৃতিকে

কোন ধাঁচেই ফেলতে পারছেন না কবি।

বর্ষার রিমিঝিমি-উঠানে বৃষ্টির জল

ভাদরের ভাদুই নাচ কিংবা পাকা তাল

আশ্বিনের কাশফুল আর কার্তিকে

ঘাসের ডগায় শিশিরের শীতাগমন বার্তা

কবিকে নাড়ায় না - ঝাপসা যেন সব।

আঘুনের নবান্ন নতুন ধানের সুবাস

ফাগুনের তা তা থৈ থৈ তারুন্যের বহ্নি

কিছুই কবিকে তার ছন্দে টানে না।


কবিতায় নারী,কবির লালিত স্বপ্নের মৃন্ময়ী

নাহ! সেও ক্ষত বিক্ষত দগ্ধ প্রতিপদে

এসিডে ঝলসানো গলাপচা মাংস

নারীর শরীরে আজ দগদগে ঘা।

বাঙালীর সনাতনী পণপ্রথা না যৌতুক

এসব করেছে তাই নারীকে নীরেশ।

ঐ যে তিন বছরের ধর্ষিত শিশুটির ছবি

সেও নারী - কবির চোখে জল।

বিদ্রোহের বিমুর্ত বাসনায় কলম ধরে কবি

পারে না - ভাষা বিহ্বল নির্বাক যেন। 


উচ্ছ্বল তারুন্যের কবিতা চাই 

কোথা সে উচ্ছ্বল তারুন্যের উজ্জ্বল তরুন

ভার্সিটির হল দখল ছিনতায় রাহাজানি

রাজনীতির পুষ্টতায় শতধর্ষনের সেলিব্রেশন

ক্ষমতার সাহচর্যে আইন শৃংখলার সহযোগী

এরা জনপদে ত্রাসের প্রতীক। 

ছাত্রানাং অধ্যায়নাং তপঃ, অনুশীলনে নেই

ক্ষমতার আঁচলে এরা ক্যাডার মহাশক্তিধর  

তরুন যুবা! এরাই জাতির ভবিষ্যত 

নেতা পাতিনেতা।


রাজনীতি নিয়ে লেখা, উপাদান কোথায়

বাণিজ্যের বেসাতি বসেছে এই তটে

আড়াই'শ বছরের ইংরেজ বেনিয়া আদলে

সেই পুরনো রোমন্থন সবখানে।

ভাগাভাগির আসর বসিয়েছে ওরা

আধাপেটা হা-অন্ন বাঙালীর দোরে।

রাজনীতির ইদানীং - সে এক ভয়ঙ্কর

ফনা তুলা গোক্ষুর, দংশিলেই নীল।

 

ফেরিওয়ালা রিক্সাওয়ালা নৌকার মাঝি

দিনমজুর কামলা ফুটপাত খেলার মাঠ

হাল আমলের অফিস আদালত কিংবা

সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ নতুবা প্রাইমারী!

সর্বত্রই চলছে সেই একই আহাজারি

স্বপক্ষ-বিপক্ষ, দল বাজির বিষাক্ত ছোপ

থকথকে ঘা হয়ে সবখানে সর্বভূমে

সন্দেহ অবিশ্বাস আর ঘৃনার আসর।


সমাজ সংসার আজ দগ্ধ প্রতিপদে

সন্ত্রাস রাহাজানি ছিনতাই পরিণতি লাশ

লাগামহীন অনিয়ম নিত্য প্রতিদিন

লেখনীর কলমটাও স্তব্ধ হয়ে যায়

যখন সময়ের সাহসীরা কলম ধ'রে

বিকৃত লাশ হয়ে অন্তিম শয়নে।

সাহিত্যিক কবিকেও হিসেব মিলাতে হয়

সিএমএইচের ইন্টেনসিভ কেয়ারে।


কি নিয়ে লিখবে কবি! কাকে নিয়ে 

উচ্চকিত হবে তার কলমের শীষ!

শীর্ষ শিখরে যারা আছেন - 

শুধুই আশ্বাসের বাণী

ধোকাবাজি তঞ্চকতায় চোখ দুটি

পড়ে আছে ক্ষমতার চেয়ারে।

শিক্ষা স্বাস্থ্য অর্থনীতি সামাজিক বিন্যাস

দুমড়ে মুষড়ে একাকার স্তুতির জয়গানে

প্রশাসন পরিসেবার বহর! কলুষিত

বিশাল সব উইপোকার ঢিপি।


তবুও যে লিখে যেতে হয় -

মিলনের সুর বোধনের গান

উচ্ছ্বলতার বিমুর্ত বহ্নিদের জাগাতে

রোকেয়ার মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ নারীকে উঠাতে

লোকালয় জনপদ সবখানে জাগরনের 

সুর তুলে কবিকে গাইতেই হয়।

সে তো কবি! সুর ও ছন্দের দোতারায়

এগিয়ে যাওয়ার মিলন গাঁথা

সে তো কবিরই।

নীরবতা ভেঙ্গে এগিয়ে যাও কবি।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2