avertisements 2

স্মৃতির আকর

অজল জালাল
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৪ আগস্ট,সোমবার,২০২৩ | আপডেট: ১০:৪১ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪

Text

 

মনটা ভাল নেই।

ভাল থাকার কথাও নয়।

সেই কবে পিতৃদেবের

পা ছুঁয়ে কদমবুসি করেছিলাম

মাকে জড়িয়ে আশীর্বাদ নিয়েছিলাম৷ 

মনে নেই সেসব আদব লেহাজের কথা।

পিঠাপিঠি ভাই - বছর দুয়েকের বড়

পান থেকে চুন খসলেই কানমলা -

প্রাপ্যতায় শতভাগ, শাসনের প্রথম সিঁড়ি।

পাড়ার মুরুব্বি আর স্কুলের শিক্ষক

রেহাই নেই বকাবকি হাতে কঞ্চির বাড়ি। 

আরো আছে কতশত নিয়মের বেড়ি। 


চিত্রগুপ্ত! খুলে দাও না আমার 

ছোটবেলার প্রাপ্ত হিসেবের প্যান্ডোরা।

হাড়ির খবর যা আছে তোমার খাতায়!

চিৎকার করে বলো, না না ওসব মিছে

ষোল আনাই মিছে - প্রাপ্তিটাই বেশী।

লেংটো থেকে লেখা সেই হিসেবের কথা

প্রাপ্যতায় ছিল তা বারো আনাই ঠাঁসা - 

চিত্রগুপ্তের খাতা বলে কথা। 


মা বলেছিল বড় হয়ে ডাক্তার হবি

পিতার বড়ই সাধ - সরকারী আমলা।

বড় হলাম বটে তবে চোখের আড়ালে

সব যেন ঘটে গেল অন্তরালে থেকে।

আপন ভুবন স্বপ্নের সিঁড়ি সবই পেলাম

বাবা মার আশীষভরা কাংখিত সম্মান-

নেই শুধু কদমবুসির সেই আয়োজন। 

মাকে জড়িয়ে ধরে পুর্ন হওয়ার স্বাদ।


বদলে গেছে সব, দখিনা উঠানে সেই কবে

তক্তপোষে বসে চাল ভাজা চিবানো

আঙিনায় মায়ের গোবর লেপার দৃশ্য

শৌচাগারের পাশে শান বাঁধানো 

টিপকল- খোলা আসমানে,

হামিদা'বুর তৈজসপত্র ধোয়ার এন্তেজাম।

ওদিকে খুল্ল্যায় মুরগির কক কক শব্দ 

মর্জিনা'বুর ডিম উঠানোর ব্যস্ততা।

বাড়ির বড় বৌ জোবেদা'বু, বসে নেই 

রান্নাবাড়ির আয়োজনে শতব্যস্ত তিনি

দেওর ননদ সবে বৌদিদের বুবু বলে ডাকে।

বাড়ির ঈশান কোণে দরজা ঘেঁষা নিমগাছ

উঠানে পেয়ারা আর জবা ফুলের সুবাস

সব যেন জীবন্ত চোখের পাতায়।

গ্রীষ্মের বিকেলে বারান্দায় গোল হয়ে বসা

জোবেদা'বুর পুঁথিপাঠ, বিষাদসিন্ধু -

মা আমার আন্ পাড় আগ্রহের মূলে

তাঁকে ঘিরেই এই আয়োজন।

ফিরে আর পাব কি সেই স্নেহের ভুবন! 

সব যেন জীবন্ত স্মৃতির আকর। 


রোগশয্যায় পিতৃদেব, হাতের ইশারায়

যেন হুকুমের সুর - যাও পুত্র নিজভূমে

অপেক্ষায় আছে খোলা মাঠ - কর্ষন কর

ফুলে ফলে ভরে তোল আপন ভুবন।

মায়ের আকুতি তার নাড়িছেঁড়া ধন

যেয়ো নাকো বাছা! তোমার মা ডাক 

যেন আযানের ধ্বনি - হৃদয় জুড়াই। 

ফেরা আর হবে নাতো, ভিনদেশ বটে!


নোঙর করেছি ঘাটে, ফেরা আর হোলনাতো

দুয়ে দুয়ে দুই কুড়ি বারো, দুই জেনারেশন

সব ঠিক আছে - নেই শুধু জননীর ডাক

কইরে আমার জালু খেতে আয় বাপ।

অন্তরালে নি:শব্দে চলে গেছে সব

বিধাতার ডাক বলে কথা।

আমারও সময় হোল

চলে যাব একা।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2