avertisements 2

‘কাজলা দিদি’ কবিতা মুদ্রণে লাইনে লাইনে ভুল বোর্ড বইয়ে

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৭ ফেব্রুয়ারী,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:১৮ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪

Text

 ‘বাঁশ-বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই, মাগো আমার শোলক-বলা কাজলা দিদি কই?’ কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচী রচিত অসম্ভব জনপ্রিয় এই কবিতাটি পড়েনি এমন অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন বাংলাভাষী খুঁজে পাওয়া যাবে না।

‘কাজলা দিদি’ নামের এ কবিতাটি চতুর্থ শ্রেণীর বাংলা বইয়ের পাঠ্য। অথচ বোর্ড বইতে মূল কবিতাটির লাইনে লাইনে ভুলে ভরা। শুধু দাড়ি-কমাই নয়; কোথাও শব্দ ও বাক্যও বদলে দেয়া হয়েছে। আর কালজয়ী কবিতাটির ভুল বানানে, ভুল শব্দে কবিতার ছন্দই পাল্টে দিয়েছে বোর্ড। বিরামচিহ্নের ভুল বিন্যাসে কবিতাটির উচ্চারণের মাধুর্যও নষ্ট করা হয়েছে। কোমলমতি শিশুরা এ ভুলই মুখস্থ করছে কবিতাটি।

এবারের বোর্ড বইয়ে কবিতাটির প্রথম লাইনের প্রথম শব্দটিই ভুলভাবে লেখা হয়েছে। মূল কবিতায় ‘বাঁশ-বাগানের’ লেখা থাকলেও এখানে হাইফেন তুলে লেখা হয়েছে ‘বাঁশবাগানের’।

দ্বিতীয় লাইনের শুরুতে ‘মাগো’ শব্দের পরে মূল কবিতায় কমা না থাকলেও বোর্ড বইয়ে কমা জুড়ে দেয়া হয়েছে।

তৃতীয় লাইনে ‘পুকুর ধারে’র পর কমা বসানো হয়েছে। তারপরের শব্দ ‘লেবুর তলে’র বদলে লেখা হয়েছে নেবুর তলে।

এই প্যারার বিন্যাসটিও মূল কবিতার সাথে সামঞ্জস্য না রেখে তৃতীয় ও চতুর্থ লাইনকে একটি লাইনে লেখা হয়েছে। এই লেবুর তলে শব্দের পর কমা থাকলেও তা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

‘জোনাক জ্বলে’র জায়গায় লেখা হয়েছে ‘জোনাই জ্বলে’। এরপরের লাইনে ফুলের গন্ধ বানানে ‘ন’ এর বদলে ‘ণ’ দিয়ে গণ্ধ লেখা হয়েছে। এ লাইনের শেষে মূল কবিতায় কমা থাকলেও এখানে সেমিকোলন দেয়া হয়েছে। তারপরের লাইনে মাগো শব্দের পরে কমা বসানো হয়েছে।

এর পরের প্যারার প্রথম লাইন ‘সেদিন হতে কেন মা আর দিদিকে না ডাকো’। বোর্ড বইতে এ লাইন বিকৃত করে লিখেছে ‘সেদিন হতে দিদিকে আর কেনই-বা না ডাকো’। এর পরের দুটি লাইনকেও এক করে দেয়া হয়েছে এবং সেখানে মূল কবিতার লাইন বিকৃত করে ‘দিদি বলে ডাকি তখন,’ এই লাইনটিতে ডাকি শব্দের পরে কমা দেয়া হয়েছে এবং তখন শব্দের পরে কমা দেয়া হয়নি। এর এক লাইন পরে ‘আমি ডাকি,’ শব্দের পরে তুমি শব্দের আগে একটি কোলন দেয়া হয়েছে। তারপরের লাইনে বল্ মা শব্দে ল এর নিচের হসন্ত তুলে লেখা হয়েছে বল মা এবং মা-এর পরে কমা দেয়া হয়েছে।

তারপরের শব্দে পুতুল বিয়ে শব্দ দুটির মাঝে কোলন না থাকলেও এখানে দেয়া হয়েছে। এর পরের দুটি লাইনকেও একটি লাইন করে দেয়া হয়েছে এবং লুকাই শব্দকে লুকোই লেখা হয়েছে। তারপরের লাইনে কেমন ক’রে শব্দে ক-এর পর উহ্য কমা তুলে করে লেখা হয়েছে। তারপরের লাইনে আমিও নাই শব্দের পরে মূল কবিতায় ড্যাশ এবং দিদিও নাই শব্দের পরে ড্যাশ থাকলেও এখানে তা দেয়া হয়নি।

এরপরের লাইনে ‘ভূঁই-চাঁপাতে’ শব্দটিতে ভূঁই বানান লেখা হয়েছে ভুঁই এবং এ দুটি শব্দের মধ্যবর্তী হাইফেন উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এর পরের শব্দে মাড়াস্ শব্দের স-এর নিচের হসন্ত তুলে দেয়া হয়েছে। এ লাইনের শেষে দাড়ির জায়গায় দেয়া হয়েছে সেমিকোলন। এরপরের শব্দে ‘ডালিম গাছের ফাঁকে ফাঁকে’র বদলে লেখা হয়েছে ‘ডালিম গাছের ডালের ফাঁকে’ এবং ‘বুলবুলিটা’র জায়গায় লেখা ‘বুলবুলিটি’। তারপরের লাইনে ‘উড়িয়ে তুমি দিও না মা ছিঁড়তে গিয়ে ফল’ এই লাইনটি পুরোই পরিবর্তন করে লেখা ‘দিস না তারে উড়িয়ে মা গো, ছিঁড়তে গিয়ে ফল’। এ লাইনের শেষে সেমিকোলনের জায়গায় কমা দেয়া হয়েছে। তার সাথের পরের লাইন ‘দিদি এসে শুনবে যখন বলবি কী মা বল্’-এর জায়গায় লেখা ‘দিদি এসে শুনবে যখন, বলবে কী মা বল’। এ লাইনের শেষে দাড়ি থাকলেও দিয়েছে আশ্চর্যবোধক চিহ্ন।

এরপরের একেবারে শেষ প্যারায় আবারো বাঁশ-বাগানের মধ্যবর্তী হাইফেন তুলে দিয়েছে এবং তার পরের লাইনে ‘এমন সময়’-এর পর এবং ‘মাগো’ এর পর কমা দেয়া হয়েছে।

এরপরের ‘লেবুর তলে পুকুর পাড়ে/ ঝিঁঝিঁ ডাকে ঝোপে ঝাড়ে’ এর বিকৃত করে লেখা ‘বেড়ার ফাঁকে পুকুর পাড়ে, ঝিঁঝিঁ ডাকে ঝোপে-ঝাড়ে।’

একেবারে শেষের দুটি লাইন- ‘ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না তাইতো জেগে রই… রাত্রি হল মাগো, আমার কাজলা দিদি কই?’-এর বিকৃত করে লেখা ‘নেবুর গণ্ধে ঘুম আসে না তাইতো জেগে রই… রাত হলো যে মাগো, আমার কাজলা দিদি কই?’

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2