উচ্চশিক্ষায় বিদেশ গিয়ে হদিস নেই কুবির ৬ শিক্ষকের
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:২৯ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেননি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) মোট ৬ জন শিক্ষক। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশগুলোতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য স্কলারশিপ জোগাড় হলে শিক্ষকদের মধ্যে ফিরে না আসার এমন প্রবণতা দেখা যায় বলে অভিযোগ করছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
এর মধ্যে ফিরে না আসা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইন অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ এবং তাদেরকে চাকরিচ্যুত করলেও এমন প্রবণতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যতে নির্ধারণে কতটা অশনি সংকেত সে উত্তর জানা নেই কারো কাছে। পাশাপাশি আইন অনুযায়ী এসব শিক্ষকদের গ্রহণকৃত বেতন-ভাতা ফেরত নেওয়ার কথা বললেও সেটি বাস্তবায়ন কতটা সহজ হবে প্রশ্ন রয়েছে এ বিষয়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দফতর সূত্রে জানা যায়, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. আবুল বাসার উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য ২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমান। কিন্তু পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান না করায় তার বিরুদ্ধে বেতন-ভাতা বন্ধসহ বিভাগীয় মামলা চলমান। ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. তাসনিমা আকতার একই বছর যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমিয়ে না ফিরে আসায় বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছ। নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হামিদা আক্তার ২০১৭ সালে শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বিদেশ পাড়ি জমিয়ে ফিরে আসেননি।
একই ভাবে পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ মিজানুর রহমান পিএইচডি করতে ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান। মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাহিদ শাহ্ মাস্টার্স প্রোগ্রামের নামে ২০১৬ সালে কানাডা পাড়ি জমান। আইসিটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খন্দকার ফিদা হাসান ২০১৪ সালে পিএইচডি করার নামে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে আর ফিরে না আসায় ২০২১ সালের আগস্টে তাকে ভোগকৃত অর্থ বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলে ফেরত দেয়ার জন্য পত্র প্রেরণ করা হয়।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, যাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তারা ব্যতীত এমন আরও কয়েকজন শিক্ষক আছেন যারা ইতোমধ্যে শিক্ষাছুটির সময় পার করেছেন কিন্তু এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেননি।
বিদেশে উচ্চ শিক্ষার আইন অনুযায়ী বিদেশে গমনকারী শিক্ষকরা বৈতনিক, অবৈতনিকসহ বিভিন্নভাবে সর্বোচ্চ ৪ বছর পর্যন্ত ছুটি নিতে পারেন। এ সময়ে কারও ডিগ্রি বা গবেষণা শেষ না হলে আরও ২ বছরের অবৈতনিক ছুটি দেয়া হয়।
এ ধরনের ছুটি ভোগের পর কেউ যদি পদত্যাগ করতে চান তাহলে তাকে ৪ বছর যাবৎ গ্রহণকৃত অর্থ ফেরত দিতে হয়, নতুবা সমপরিমাণ সময় চাকরি করার পর অব্যাহতি নিতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, যেহেতু নিয়মানুযায়ী শিক্ষকরা সর্বোচ্চ ৪ বছর পর্যন্ত শিক্ষাছুটি নিতে পারেন এবং এ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বেতন-ভাতা সবই পরিশোধ করে, তাই সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা আইনের এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ছুটিতে গিয়ে অনেকে বাইরে আয়-উপার্জন করেন।
ফিরে না আসা শিক্ষকদের ছুটি চলাকালীন বেতন-ভাতার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে সে অনুযায়ী অর্থ দফতর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, যেসব শিক্ষকরা উচ্চ শিক্ষার নামে বিদেশ গিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে ফিরে আসেননি তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা তাদের বেতন ভাতা বন্ধ করে দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশীয় আইন অনুযায়ী দ্রুত সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শিক্ষকদের বন্ড থাকে। যেসব শিক্ষকরা ফিরে আসতে অনীহা প্রকাশ করবে তাদের বিরুদ্ধে সে অনুযায়ী ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী যেসব ব্যাবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন কর্তৃপক্ষ সেটি গ্রহণ করবে।