ওসির বিরুদ্ধে নারী পুলিশ কর্মকর্তার যৌন হয়রানির অভিযোগ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০৫ এএম, ২৬ মার্চ,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:২১ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় নারী পুলিশ কর্মকর্তার স্বামীকে জামায়াত-শিবির কর্মী হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী মহানগর পুলিশের এক ওসির বিরুদ্ধে। রাজশাহী সিআইডির নারী পুলিশ পরিদর্শক কর্মকর্তা বর্তমানে সারদা পুলিশ ট্রেনিং একাডেমিতে সংযুক্ত আছেন।
বোয়ালিয়া মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি) নিবরাণ চন্দ্র বর্মনের বিরুদ্ধে কুপ্রস্তাব দেয়ার অভিযোগ তুলে মহানগর পুলিশ কমিশনার বরাবর তিনি একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তা। অভিযোগে বলা হয়েছে, ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে অপর পুলিশ কর্মকর্তা মাহবুব আলমের সঙ্গে বিয়ে হয়। বর্তমানে পুলিশ কর্মকর্তা দামকুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পূর্বে তিনি বোয়ালিয়া থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত হিসেবেও কর্মরত ছিলেন।
অভিযোগে নারী পুলিশ কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, বিয়ের পর শারিরিক ও মানুষিক অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৮ সালে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তা পারিবারিকভাবে মাহবুব হোসাইন নামের এক সাংবাদিককে বিয়ে করেন। মাহবুব হোসাইন ২০১৮ ও ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত দৈনিক নতুন সময় পত্রিকার রাজশাহী প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন। বর্তমানে তিনি রাজশাহী সংবাদ নামের একটি স্থানীয় পত্রিকায় কাজ করেন।
অভিযোগে আরও জানা যায়, বোয়ালিয়া থানায় কর্মরত থাকাকালীন সময়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিবরাণ চন্দ্র বর্মন বিষয়টি জানতেন। এ কারণে তিনি মাঝে মধ্যেই ওই নারী কর্মকর্তাকে ফোন দিতেন। ফোন দিয়ে নানা ধরনের কথা বলতেন। ওসির এ ধরনের প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় আবার হুমকিও দিতেন। তিনি বলেন, তুমি মাহবুবের সঙ্গে কেমনে সংসার করো তা দেখে নেব। তুমি আমার প্রস্তাব মেনে নাও তোমার সংসার সুন্দর ও সুখের হবে।
ওই নারী কর্মকর্তা বলেন, সারদায় থাকার পরও তিনি আমাকে একসঙ্গে কুপ্রস্তুাব ও হুমকি দিতেন। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন তার প্রস্তাবে রাজি হলে কোন সমস্যা নাই আর যদি প্রস্তাবে রাজি হই তাহলে কিছু করবেনা। এভাবেই চলতেছিল। কিন্তু গত ১৬ মার্চ রাত দেড়টার দিকে তার স্বামী মাহবুব হোসাইন তাকে ফোন করেন বলেন বাসায় পুলিশ আসছে। এরপর তিনি ওসি নিবরাণ চন্দ্র ও ওসি তদন্ত আব্দুল লতিফকে ফোন করেন। কিন্তু রাতে কেউ ফোন রিসিভ করেননি। পরদিন সকালে তিনি থানায় আসেন। ডিউটি অফিসারের নিকট জানতে পারেন তার স্বামীকে থানার এসআই আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ নিয়ে এসেছে।
এরপর তিনি ওসি নিবরাণ চন্দ্রের কাছে গেলে ওসি নিবারণ চন্দ্র ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এই তো তুমি আসলা, জলঘোলা করেই আসলা, তুমি বসো আমি একটু কমিশনার স্যারের সাথে কথা বলে তোমার স্বামীকে ছেড়ে দেব।’
কিছুক্ষণ পরে তিনি এসে ওই নারী কর্মকর্তার নাম ধরে বলেন, ‘দেখতো আমাকে সুন্দর লাগছে না, তোমাকেও সুন্দর লাগছে’। ওসির এমন মাতলামো আচরণে নারী পুলিশ কর্মকর্তা প্রতিবাদ করলে ওসি নিবরাণ চন্দ্র বলেন, ‘আরে তোমার স্বামী তো শিবির করে, তোমার স্বামীকে কে বাঁচাবে, আর কমিশনার ! আমি যা বলবো কমিশনার কি তার বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে’। এখন কি করবা স্বামী বাচাবা না আমার কথা রাখবা ’ ওসির এমন আচরণে তিনি দ্রুত ওসির কক্ষ ত্যাগ করেন।
ভুক্তভোগী নারী কর্মকর্তা আরো বলেন, পরে ওসি আমার স্বামীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দিয়ে আদালতে চালান দেয়। বর্তমানে তার স্বামী জেলহাজতে রয়েছেন।
তিনি বলেন, তার স্বামী কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত না। তার নামে থানায় কোন জিডিও নাই। সে সুনামের সঙ্গে সাংবাদিকতা করে। আমি সবকিছু জেনেই তাকে বিয়ে করেছি। বিয়ের পর থেকে সুখে শান্তিতে বসবাস করছি। কিন্তু ওসির প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার কারণে আজ তাকে (স্বামী) মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। আমি একজন পুলিশের নারী কর্মকর্তা। আমি ওসির নিকট থেকে এমন আচরণ পেলে সাধারণ মানুষ কি আচরণ পাবে। আমি ওসি নিবারণ চন্দ্রের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন করেছি। আমি তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থাও নেব।
এদিকে, এ বিষয়ে ওসি নিবারণ চন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উনার স্বামী শিবিরের রাজনীতির করে। সে খড়খড়ি এলাকার শিবিরকে সংঘঠিত করার কাজ করছিল। এ কারণে তাকে আমরা গ্রেফতার করেছি।
নারী পুলিশ কর্মকর্তার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার স্বামী কে না ছাড়ার কারণে সে এই অভিযোগ করেছে। আমি কেন তাকে কুপ্রস্তাব দেব?
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, এখনো অভিযোগ হাতে এসে পৌঁছেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।