avertisements 2

চোখ হারানো সেই শিক্ষিকার খোঁজ নিল না কেউ

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৬ আগস্ট,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ১০:৫০ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪

Text

স্কুলে ক্লাস চলাকালে বাঁশে বাঁধা ফ্যানের জিআই তার ছিঁড়ে ফ্যানের আঘাতে চোখ নষ্ট হওয়া শিক্ষক শিরিনা আকতারকে চার দিনেও হাসপাতালে দেখতে আসেননি শিক্ষা প্রশাসন বা উপজেলা প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা।

শিরিনার চোখের ব্যান্ডেজ খুলে দেয়া হয়েছে বুধবার দুপুরে। ডান চোখ নষ্ট হয়ে গেলেও এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত তাকে জানানো হয়নি। তিনি রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের গোড়াই দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে দুর্ঘটনাটি ঘটে।

স্কুল পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা জানান, দুর্বলভাবে ফ্যান বাঁশের সঙ্গে বেঁধে দেয়ায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। এতে স্কুলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা রক্ষা পেলেও শিক্ষিকা শিরিনা আকতার তার চোখ হারিয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় হাসপাতালের বিছানায় ছটফট করছেন।

স্থানীয় অধিবাসী স্কুলের সামনের বাড়ির তোফায়েল হোসেন বলেন, ‘বাচ্চাদের মধ্যে কারো চোখ ফেঁটে গেলে এখানে তুলকালাম কাণ্ড হয়ে যেত। তখন সরকারের সকল দপ্তরের লোকজন এখানে ছুটে আসত, হতো থানা পুলিশ। অথচ শিক্ষকের ক্ষতি হওয়ায় বিষয়টি সেভাবে কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না।

স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রাক্তন শিক্ষক রাজেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, ‘দুর্বল পাতলা বাঁশ দিয়ে ফ্যান আটকানো হয়েছে। বাঁধনও ছিল আলগা। ফ্যান ঘোরানোর সময় প্রচণ্ড গতিতে বাঁধন খুলে ফ্যানটি পরে গেছে। এটি নিছক দুর্ঘটনা।

গোড়াই দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামিমা ইয়াসমিন বলেন, ‘স্কুলটির একেবারে ভাঙার দশা ছিল। ২০০০-২১ অর্থবছরের ক্ষুদ্র মেরামতের দেড় লাখ টাকা ও ২০২১-২২ অর্থবছরের স্লিপের ৫০ হাজার টাকা দিয়ে স্কুলের মাটি কেটে স্কুল ঘর পুনরায় নির্মাণ করা হয়। বন্যায় স্কুলের মেঝে ভেঙে গেছে। দুর্বল বাঁশ দিয়ে ফ্যান আটকানোর বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি। দুর্ঘটনার সময় তিনি স্কুলে ছিলেন না বলে দাবি করেন।

তিনি বলেন, ‘একজন শিক্ষক দায়িত্ব পালন অবস্থায় মৃত্যুর ঝুঁকিতে পরলেও এখন পর্যন্ত প্রশাসন থেকে রোগীকে দেখতে জাননি কেউ। বাড়িয়ে দেননি সহায়তার হাত। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। হতদরিদ্র এই স্কুলটি সংস্কার ও উন্নয়নে নজর দেয়া দরকার।

শিরিনা আকতারকে উৎকণ্ঠা নিয়ে বলেন, ‘আমার চোখ দিয়ে আগুনের ফুলকির মতো কিছু একটা অনুভব করছি। চোখটি ভালো হবে তো? আমি সকলের কাছে দোয়া চাই। শিরিনার স্বামী শেখ আলমগীর কবীর বলেন, ‘আমার স্ত্রী সরকারি দায়িত্ব পালন করছিল। এটি নিছক দুর্ঘটনা না, অবহেলা। এর দায় কে নেবে?

তিনি বলেন, ‘চারদিন ধরে সে বিছানায় অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তার ডান চোখটি পুরোপুরি ড্যামেজ হয়ে গেছে। রোগীর মানসিক অবস্থা খুবই নাজুক। তাই এই চরম সত্যটি তাকে জানাতে পারছি না। তার চিকিৎসায় কাড়িকাড়ি টাকা খরচ হচ্ছে। সারাজীবনের জন্য চোখ হারিয়ে পঙ্গু হলো আমার স্ত্রী। যাদের কারণে এই আর্থিক ও এবং অঙ্গহানির ঘটনা ঘটল, তদন্তের পর আমি এর বিচার দাবি করছি।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সরেজমিনে পরিদর্শন পূর্বক একটি প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রতিবেদন পাইনি। প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল কুমার বলেন, ‘উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে খোঁজ খবর নিতে বলা হয়েছে। তারা নিয়েছে কি না জানা নেই। আমি জেনে পরে জানাব।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2