avertisements 2

জীবন দিয়েছেন, তবু মাদক ব্যবসায়ীকে ছাড়েননি এএসআই পেয়ারুল

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৬ সেপ্টেম্বর,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:১২ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪

Text

জীবন বাজি রেখে সঙ্গীদের নিয়ে মাদক ব্যবসায়ীকে ধরতে গিয়েছিলেন রংপুরের হারাগাছ থানার চৌকশ এএসআই পেয়ারুল ইসলাম। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জাপটে ধরেছেনও মাদক ব্যবসায়ীকে। আর মাদক ব্যবসায়ির ছুরিকাঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়েও তার হাত ছাড়েননি । তার এই দায়িত্বে পালনে কতটা অনড় ছিলেন তা জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

এদিকে পেয়ারুল ইসলামের বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চন্দ্রপাড়া গ্রামে চলছে শোকের মাতম।

২০১১ সালের ১৫ জানুয়ারি পুলিশে যোগ দেওয়া কনস্টেবল পেয়ারুল ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে এএসআই হন। হারাগাছ থানায় যোগ দিয়ে একাধিক অভিযানে মাদক উদ্ধার ও ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করেছেন তিনি।

শুক্রবার রাতে হারাগাছ থানার বাহার কাছনার তেলিপাড়া এলাকায় মাদক মামলার আসামি ধরতে গিয়ে ছুরিকাঘাতে আহত হন। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বেলা ‌সাড়ে ১১টার দিকে মারা যান।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে হারাগাছ থানার ওসি শওকত হোসেন বলেন, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে শুক্রবার রাতে তিন পুলিশ সদস্যকে নিয়ে নগরীর বাহার কাছনা এলাকায় যান পেয়ারুল। সেখান থেকে মাদক ব্যবসায়ী পলাশকে ১৫১ পিস ইয়াবাসহ আটক করেন। এ সময় দৌড়ে পালাতে যায় পলাশ। তার পেছনে দৌড় দেন পেয়ারুল। অনেক দূর গিয়ে জাপটে ধরেন। তখন পেয়ারুলের সঙ্গীরা পেছনে পড়ে যান।

এ সুযোগে পেয়ারুলকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে পলাশ। ছুরিকাঘাতে পাঁজরে রক্তক্ষরণ হলেও পলাশকে ছাড়েননি। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। একপর্যায়ে সঙ্গী ও স্থানীয়রা এসে পেয়ারুলকে উদ্ধার করে দ্রুত রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেই সঙ্গে পলাশকে আটক করে পুলিশ। অবস্থার অবনতি হলে পেয়ারুলকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়।

পেয়ারুলের মরদেহ গ্রামের বারিতে পৌচ্ছালে স্বজনদের আহাজারিতে আশপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। তাদের বুকফাটা আর্তনাদে গ্রামে শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। স্বজনদের সঙ্গে কান্নায় ভেঙে পড়েন সহকর্মীরাও।

চাচাতো ভাই আব্দুস সালাম বলেন, আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় অনেকেই জড়িত। সবাইকে আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশের কাছে আমাদের অনুরোধ।

এর আগে পেয়ারুলের মৃত্যুর খবরে হাসপাতালে আসেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আবদুল আলীম মাহমুদ, উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) কাজী মুত্তাকী ইবনু মিনান, উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) মারুফুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা শোকে মুহ্যমান।

কাজী মুত্তাকী ইবনু মিনান বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছেন পেয়ারুল। তার শরীর, বুক, পেটসহ বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করেছিল পলাশ। জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালনে কতটা অবিচল।

তিনি বলেন, বিষয়টিকে আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি। ওই এলাকায় কারা কারা মাদক ব্যবসায় জড়িত, কারা কারা পলাশের সহযোগী তাদের গ্রেফতার করা হবে।

ওসি শওকত আলী বলেন, বিকাল ৫টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে পেয়ারুলের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।

এর আগে এএসাই পেয়ারুলের জানাজ অনুষ্টিত হয় রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন্স মাঠে। রাতে পারিবারিক কবরস্থানে পেয়ারুল ইসলামকে দাফন করা হয়েছে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2