
জালাল উদ্দিন আহমেদ
হাডুডু চরিতম
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১ জানুয়ারী, বুধবার,২০২৫ | আপডেট: ১২:০৭ এএম, ১৩ মার্চ,বৃহস্পতিবার,২০২৫

আমাদের জাতীয় খেলা হাডুডু কেন হলো - জানিনা। কার মস্তিষ্ক প্রসূত হয়ে এই ঠ্যাং ধরে আঁটকানো খেলাটি জাতীয় খেলার অভিধায় জায়গায় পেল এটাই অজুত সহস্র প্রশ্ন। এই স্পোর্টং স্প্রীট থেকেই বোধ হয় আমাদের জাতীয় চেতনায় এর প্রভাব পড়েছে। আমরা মাঠে নামি ঠিকই কিন্তু খেলতে নেমে নার্ভাস হয়ে আগেই হেরে বসি। এসব চিন্তা চেতনা থেকেই হয়তো আমাদের একটা মনস্তাত্বিক নেগেটিভিটি তৈরী হয়। ফলে প্রতিযোগিতার মাঠে নামতে আমরা ভয় পাই। এহেন পরিস্থিতিতে আমি যখন ড্রাইভিং সীটে লাগাম ধরে বসি তখন ওই ধরা লাগাম আর ছাড়তে মন চায় না। শত বাধা বিপত্তি বা হৈ হট্টগোল হোক না কেন, ধরেছি যখন তখন এ লাগামের স্বত্ত্বহীন হওয়া বড়ই কষ্টকর মনে হয় আমার কাছে। তাইতো জন্মলগ্নের পর থেকেই কৈশরের দেখা বিভৎস বিভিষীকা বা নরহত্যার সেই প্রবাহ ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে আমার সামনে এসে জানান দিয়ে বলতে চেয়েছে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ পেয়েছ ঠিকই কিন্তু মানবিক মুল্যবোধের উপর দাঁড়িয়ে করা রাজনীতির উঠান তোমার শেষ হয়ে গেছে। রাজনীতির পঠন পাঠন যখন ব্যক্তি খায়েসের খোয়াড়ে পরিণত হয়, তখন সেই খোয়াড় ব্যবস্থাপনায় হৈ হট্টগোল যে হবে, সেতো অবধারিত এক বিষয়।
হয়েছেও তাই। বাঙালী তার আপন অস্মিতার উঠান তৈরী করতে গিয়ে সেই কথিত রাম রাজত্বের লাগামহীন সম্ভোগের কলোনিয়াল স্বেচ্ছাচারিতার ফাঁকা মাঠ পেয়ে যায়। পুর্ব শাসকদের তৈরী করে রাখা রাষ্ট্রীয় মেকানিজমের আঙ্গিনায় পা রেখে স্বাধীন স্বত্ত্বার সেবক চরিত্রের অনুশীলনে হেঁটে আসা বাঙালী যখন ক্ষমতার আসনে আসীন হন তখন প্রাপ্তির প্রাচুর্যে তারা ক্ষমতাবান শাসক হয়ে যায়। জনসেবার দায়িত্বপ্রাপ্তরা যখন সেবক না হয়ে শাসক বনে যান, তখনই বিপত্তিটা ঘটে। আমাদের স্বাধীন স্বত্বার পৌঁনে এক'শ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো আমরা শাসক শোষিতের সেই ঠ্যাং ধরে টান মারার গ্যাঁড়াকলেই পড়ে আছি। মন্ত্রী মেয়র দূরের কথা, সিটি করপোরেশনের একজন ট্যাক্স কালেক্টর (আর এস) যখন তার গ্লসি ভিজিটিং কার্ড পাঠিয়ে মহল্লার পাঁচতলা বাড়ির মালিককে তার বাড়ির ট্যাক্স সেটেলমেন্টের বিষয়ে দেখা করার তাগিদ দেয়, তখন বুঝতে অসুবিধা হয় না যে আমরা অর্থাৎ বাঙালী সমাজ বাসযোগ্য পৃথিবীর কোন্ সিঁড়িতে বসে আছি। সুতরাং নিম্ন শ্রেণীভুক্ত আরএস, লাইনম্যান, মিটার রিডারদের যদি এই অবস্থান হয় তবে উপরতলার ওসব বড় গোছের বড় মেজো বাবুদের সহ তাদের মাথায় বসে থাকা হাডুডু খেলার মূল কারিগরদের ক্ষমতা নামের সোনার হরিণ আঁকড়ে ধরার এবং তার ব্যবহারের মাত্রাটা কি হবে - সেটা নিশ্চয় অনুমান করা যায়। আর ক্ষমতা যখন আঁকড়ে রাখার সেই ঠ্যাং ধরে টানাটানির ব্যবস্থাপনায় চালু থাকে তখন এটাকে ‘থোড় বড়ি খাড়া আর খাড়া বড়ি থোড়’ ছাড়া আর কিই বা বলা যায়।
পাকিস্থানী ঘরনায় থেকে বাঙালী অহংবোধের বিস্ফোরন ঘটিয়েছি আমরা। দেশের গনতন্ত্রের সূচনাকালে আমরাই যে পাকিস্তান শাসনের মূল দাবিদার তাও প্রমান করেছি। কিন্তু উপমহাদেশীয় কাবাডি চরিতমে পড়ে আমরা ক্ষমতাসীনদের ঠ্যাং ধরে আঁটকাতে পারিনি। ফলে নিজেদের ভাগ্য রচনায় নিজেরাই পাকিস্তানী তকমা ছেড়ে আমরা বাংলাদেশী হয়েছি। কিন্তু কাবাডি চরিতম কিংবা হাডুডু চরিতমের সেই ঠ্যাং ধরে টানাটানির কপালের লিখন কি আমরা খন্ডাতে পেরেছি! আগের কোন এক নিবন্ধে ক্ষমতাবান আর দায়িত্ববান এই দুটি শব্দ নিয়ে দু'চার কলম লিখেছি বলে মনে পড়ে। কিন্তু কর্তব্য ও দায়িত্বের কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে ক্ষমতার চেয়ারে বসে চিরায়ত সেই পরাক্রমশালী ক্ষমতাবান হওয়ার চরিত্রই তো আমাদেরকে বার বার দেখতে হচ্ছে। এই হাডুডু চরিত্রের ঠ্যাং ধরে টানাটানির দৃশ্য দেখতে দেখতে আমরা হাঁপিয়ে উঠেছি। কিন্তু ‘'রশি ধরে মারো টান রাজা হবে খান খান’’ দৃশ্যের অবতারনা করেও তো আমাদের রেহায় নেই। আমরা এগোতে পারছিনা, কারন আমাদের রক্ত প্রবাহের মধ্যে রয়েছে দেউ রাজা গুজ্জভোজ, ধর্ম বিদ্বেষী রাজা গোবিন্দ ছাড়াও অত্যাচারী জমিদার কেদার রায়দের মত আরো অনেক খন্ড খন্ড পরগনা শাসকদের ক্ষমতাভোগী পরম্পরার রেশ। কিংবা হাল আমলের পাকিস্তান রাষ্ট্রের পশ্চিম ভাগের সেইসব খান পাঠানদের শিখিয়ে দেয়া ক্ষমতা ভোগের ঝলকানি।
মুক্তির সূচনালগ্নে মহান নেতাকে সামনে রেখে আমরা যখন স্বপ্নের বীজ বুনতে শুরু করেছি তখন কোন্ কাল বৈশাখীর থাবা আমাদের শান্তি ও সমতার উঠানকে তছনচ করে দেশে একনায়কের শাসন ব্যবস্থা চালু করলো - সেটাই ছিল বাঙালীর সহস্র বর্ষীয় প্রশ্ন। যে আশা আকাঙ্খার পথ ধরে বাঙালী তার স্বপ্নের ভূখন্ড তৈরীর শপথ নেয়, সেই স্বপ্নের চাদরকে ছিন্নভিন্ন করে বাঙালী উঠানে একনায়ক তন্ত্রের এলান ঘোষিত হোল। অর্থাৎ ঠ্যাঙ থাকলেও সেই ঠ্যাং ধরে টেনে আঁটকানোর ন্যুনতম অধিকার থেকে বাঙালীকে ব্রাত্য করা হলো। মোটকথা ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার একমুখী বন্দোবস্ত করে দেশের সংবিধানকেও কাটাছেঁড়া করা হোল। দেশ আবার রক্তাক্ত হোল। কিন্তু সাধারন জনপদে রক্ত না ঝরে রক্ত ঝরলো ক্ষমতা লিপ্সু একটি পরিবারের মধ্যে। সেটাও অকস্ম্যাৎ। সিপাহী জনতার অভ্যুত্থানে দেশে শান্তি ও স্বস্তি ফিরে এলো বটে তবে তা গণতান্ত্রিক পন্থায় নয়। সামরিক শাসন ও ক্ষমতা একসূত্রে গেঁথে দেশের চাকা ঘুরলো পাক্কা ষোলটি বছর। তবে গণতান্ত্রিক চর্চার সেই ঠ্যাং ধরে টেনে রাখার আয়োজন ছাড়াই। মানুষ কিছুটা স্বস্তি ও শান্তির আলোক ছটা দেখলেও তাদের নিরঙ্কুশ মতামতে তারা অনেক ক্ষেত্রেই বঞ্চিত ছিলেন। সেটারও সমাধান হয়। সামরিক স্বৈরাচারকে হটিয়ে দেশে গণতান্ত্রিক চর্চার দ্বার উন্মুক্ত হোল। বাঙালী তার চিরাচরিত কায়দায় রাজনীতির হাডুডু খেলার মাঠে ফের অবতীর্ন হয়।
কিন্তু কিসের কি! জিনের লাগাম যখন ধরেছি তখন আমার চেয়ে যোগ্য সহিস আর কেউ কি আছে! সুতরাং যতই তুমি শক্তিশালী হও না কেন ঠ্যাং ধরে আঁটকানোর সাধ্য তোমার নেই। এভাবেই হাডুডুর কানামাছি খেলতে গিয়ে বাঙালী তিনটি নির্বাচনী টার্ম পার করলো। তবে রাজনীতির নেতৃত্বে ততদিনে দুটি পরিবারের শক্ত মেরুকরন হলো। অর্থাৎ হাডুডু খেলার নেতৃত্ব দুই নেতার পরিবার কেন্দ্রিকতায় কেন্দ্রীভূত হোল। ক্ষমতা বদলের এই খেলায় সাধারন মানুষের রক্ত ঝরলো এবং প্রানহানিও ঘটলো। দেশে এক চরম অরাজকতা তৈরী করা ফাঁদে আবারও সেই লেফট রাইটের গন্ধযুক্ত শাসনের খড়্গ অন্য নামে সামনে এলো। তবে হাডুডু চরিতমের বাঙালীকে বেশীদিন আঁটকে রাখা গেল না। মানুষ ফের তার গনতাত্রিক অধিকারের নামে হাডুডু নামের জাতীয় খেলার সেই মহা আয়োজনে কোমর কষে মাঠে নামলো। কিন্তু তারা ঘুণাক্ষরেও অনুধাবন করতে পারেনি বা সেটা নিয়ে অত গভীরে ভাবেনি যে এই হাডুডু চরিতমের নির্বাচনী খেলায়টাই গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার শেষ কথা নয়। নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের উপর দাঁড়িয়ে রাজনীতির গণতন্ত্র অধ্যায়নের ছাত্রটি শাসকের ক্ষমতায় বসে যখন তার দায়িত্ববোধের ন্যুনতম দন্ডে অবস্থান করে সমাজ রাষ্ট্র ও জনগনের কল্যানে নিবেদিত থাকবেন তখনই তা সার্থক হবে। দায়িত্ববান এবং প্রজা বাৎসল শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমেই গড়ে উঠে দেশের রাজনীতি ও গণতন্ত্র চর্চার সুষ্ঠু বিকাশ।
আমরা পহেলা বৈশাখ করি। পুরাতনকে ঝেড়ে ফেলে নতুনের অবগাহনে আমরা শ্বেত শুভ্র হওয়ার শপথে বলীয়ান হই। কিন্তু বল বা শক্তিটাকে সংরক্ষনে কতটুকু যত্নবান হই সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন। দেশে বহুল আকাঙ্খার গণতান্ত্রিক চর্চার বাতাবরন তৈরী হয়েছে। ২০২৪ বাংলার ঈশান কোনে নতুন আলোর বিচ্ছুরন ঘটিয়েছে। ঘুনে ধরা এবং তঞ্চকতায় ভরা ধারাবাহিক রাজনীতির চর্চায় দেশের আমজনতা আজ বীতশ্রদ্ধ বলেই হয়তো খড়কুটো ধরে বেঁচে থাকার আকাঙ্খায় তারা ছাত্রদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে সামিল হয়ে স্বৈরাচারী শাসককে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে। বাংলার মানুষ চাইছে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধে দেশের রাজনীতি গণতন্ত্র ও শাসন ব্যবস্থা বিকশিত হোক। হাডুডু চরিতমের তঞ্চকতায় লোক দেখানো নির্বাচনের ঝুড়ির পচা ফল বাঙালী আর খেতে চায় না। বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থায় বাঙালীর বাংলাদেশ বিকশিত হোক - কায়মনোবাক্যে এটাই প্রার্থনা করি।
লেখকের আরও লেখা

নারীর সঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কর্মকর্তার মাদক সেবনের ছবি ভাইরাল

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন মাহমুদউল্লাহ

১ লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করবেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব

অস্ট্রেলিয়ার একটি স্কুলে মিলল ডাইনোসরের পায়ের ছাপ

সাগর-রুনি হত্যা মামলায় ফারজানা রুপাকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি

‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ বেশে নারীবিদ্বেষী কাণ্ড, যুবক আটক

পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে বিমানবন্দর থেকেই ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

শামির মায়ের পা ছুঁয়ে শ্রদ্ধা, প্রশংসায় ভাসছেন বিরাট কোহলি

সাবেক এমপির বাড়ি দখল করা সেই নারী সমন্বয়ক গ্রেপ্তার

হুমকি দিয়ে ইরানকে আলোচনার টেবিলে আনা যাবে না

নিজ বাড়িতেই পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার, ঘুষের মাধ্যমে নিয়োগ

রিজার্ভ বেড়ে এখন ২১.৪০ বিলিয়ন ডলার

ধর্ষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো

আমি গণতন্ত্র দিয়েছি

ধর্ষণের বিচার বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠনের আহ্বান আজহারীর

দুনিয়ার সবচেয়ে আজব সেতু বাংলাদেশে!

গাছের সঙ্গে বাঁধা সাত শিশু কাওছারের জীবন!

কারাগারে পরিকল্পনা, তিন মাসেই কোটিপতি ২ যুবক

সিডনিতে দুই বাংলাদেশীর আকস্মিক মৃত্যু

সিডনিতে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত তরুনী খুন

অক্সফোর্ডের করোনার ভ্যাকসিন বিরোধীতায় অস্ট্রেলিয়ার ইমাম ও আর্চবিশপ

অস্ট্রেলিয়ার কারাগারেই আরেক বন্দিকে কোপালেন সেই বাংলাদেশি ছাত্রী সোমা

কিশোরীর সাথে যৌন সম্পর্কের চেষ্টাঃ সিডনিতে বাংলাদেশী ছাত্র গ্রেপ্তার

মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার সেরা ৪-এ বাংলাদেশি-অস্ট্রেলিয়ান কিশোয়ার

হুইপপুত্রের গোপন ব্যবসার বলি তরুণ ব্যাংকার

খোলা চুলে সিগারেট হাতে এবার নতুন বার্তা দিলেন পরীমণি

কুইন্সল্যান্ডে বারবিকিউ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককের আকস্মিক মৃত্যু

মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে পড়ে সিডনির দুই বাংলাদেশীর মৃত্যু

হাটে কচুর লতি বিক্রি নিয়ে মুখ খুললেন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক
