জালাল উদ্দিন আহমেদ
জাগো বাহে কুন্ঠে সবাই
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৩১ অক্টোবর,বৃহস্পতিবার,২০২৪ | আপডেট: ০৩:৫১ এএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
ভাবছিলাম সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে আর কিছু লিখব না। কিন্তু পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের চাপে পড়ে আমাদের সাম্প্রতিক বিষয়াবলী যেভাবে উলট-পটাং হচ্ছে তাতে করে আমার মত একজন সস্তা মস্তিষ্কের আদমের আশা আকাঙ্খা ও আশংকার পারদগুলি বহুবিধ শাখা প্রশাখা তৈরী করে ফেলে। আর এই শাখা প্রশাখা বিস্তারের কলকাকলিতে কচি কচি পত্র পল্লব চারিদিকে দোল খেতে খেতে আমাদের প্রত্যাশার পারদকে কয়েক ধাপ উপরে নিয়ে সুখস্বপ্নের নীড় বানাতে উৎসাহিত করে। পাশাপাশি ‘ঘর পোড়া গরুর রক্ত সন্ধ্যার ভয়’ লাগানো আশঙ্কা নিয়ে বিতাড়িত স্বৈরতন্ত্রের জুজুর ভয়ে কালাতিপাত করতে যে হয়না - সেটাইবা বলি কেমন করে। কি হচ্ছে কেনইবা হচ্ছে এসবের বয়ান করতে করতে সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। মেইন স্ট্রীমের গণ মাধ্যম গুলিতেও এসবের ছিটেফোঁটা ঝলকানি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে।
অদৃষ্টবাদী না হয়েই বা উপায় কি! সর্বোচ্চ দন্ডের শীর্ষ বিন্দুই যখন আমাদেরকে দোদ্যুল্যমানতার দোলাচালে ফেলে অকপট হন তখন তৃণমূলের ফজু কদম বা শ্যামল গোপালরা কি নিয়ে আশায় বুক বাঁধবে তা কি কেউ বলতে পারবেন! সেক্ষেত্রে অবশ্য ঐ রিক্সাওয়ালা কিংবা ভ্যান গাড়ির সবজি বিক্রেতার দীপ্র কন্ঠের উচ্চারণকে (“মেইন মাথাকেই ভাগাইসি আর এসব চুপ্পু টুপ্পু কোন্ ছার!”) সরলরেখায় রেখে এগোলেই সব হালকা হয়ে যায়। সত্যিই তো তাই। রাষ্ট্র পরিচালনার ন্যুনতম চাহিদাগুলোকে ধর্তব্যে নিয়ে এগোলেই তো হয়। কিসের এত অমুক সংস্কার তমুক সংস্কার নিয়ে চুল ছিঁড়াছেঁড়ি। এতশত এজেন্ডা নিয়ে মাথা ভারী করলে মানুষের ন্যুনতম ভাত কাপড়ের যোগাড় যন্ত্রনার কথা নিয়ে তারা ভাববেন কখন! আঠার কোটির এই ছোট্ট ভূখন্ডে সেটাই তো প্রাধিকারের এক নম্বরে থাকার কথা। যেসব পক্ষের প্রতিবন্ধকতাকে নিয়ে আজকের দিনে তাদের বেশী করে নজর দেয়ার কথা ছিল সেই আইন শৃংখলার পরিমার্জিত রূপ কতটুকু আমাদেরকে আশ্বস্ত করতে পেরেছে, সেটাও কি বলার পর্যায়ে আছে!
আমরা জানি এবং সেটাই হয়তো সত্য। এই সত্যের উপর ভর করেই আমরা অর্থাৎ বাংলার আপামর জনগন এদেশের নাগরিক হওয়ার সুবাদে আজ নাগরিক কমিটিতে ব্র্যাকেট বন্দি হয়েছি। কথিত নাগরিক কমিটিতে আমাদের অজগ্রামের কুদ্দুস্যা লোকমান্যা কিংবা জগা হারাদের পার্টিসিপেশন আছে তো? সেক্ষেত্রে এই কমিটি নামক শব্দটির যৌক্তিকতা পুরনে দেশব্যাপী এর অংশীজনদের সচেতনতা কিভাবে সম্পৃক্ত বা সংযুক্ত করা হয়েছে তার আমলনামা প্রকাশ্য হওয়া দরকার। আজকের প্রেক্ষাপটকে এক নি:শ্বাসে বলা হয় “বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন”। এই জনতা থেকেই এসেছে নাগরিক কমিটি। সুতরাং ফ্রন্টে থাকা মানবকুলের সেইসব নাগরিকগন কতটুকু সম্পৃক্ত হয়ে গোটা দেশ বাসীর কেন্দ্র বিন্দুতে অবস্থান করছেন তার পোস্ট মর্টেম তাদেরকেই করতে হবে। জন গন সম্পৃক্ততার ন্যুনতম প্যারামিটার তৈরী করে তাদেরকে গ্রামে গঞ্জে ছুটে বেড়িয়ে এর পার্টিসিপেটরী যথার্থতা উচ্চকিত করতে হবে। বাংলার জনগন গত পনের বছরে মাফিয়া স্বৈরাচারীর জ্বালা যন্ত্রনায় যে দুর্বিসহ মানবেতরে কালাতিপাত করেছেন তার হালনাগাদে তাদেরকে সম্পৃক্ত হতে হবে। শুধু রাজধানীতে বসে সভা সেমিনারে নিজেদের চেহারা সুরত দেখিয়ে চললে হবে কি? আজকের দিনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন যেভাবে সমন্বয়ক এর সমতা নিয়ে দেশব্যাপী সাধারন ছাত্র সমাজকে একমুখী করে দাঁড় করিয়েছেন ঠিক একই পদ্ধতিতে জনতার “নাগরিক কমিটি” দেশের আটষট্টি হাজার গ্রামে তাদের শাখা প্রশাখায় বিস্তারিত হবেন। প্রয়োজনে বিগত স্বৈরাচারী শাসনের অপকর্মের ভিডিও ফুটেজসহ প্রজেক্টরের মাধ্যমে জন সচেতনেতার উদ্যোগ নিয়ে গণ অভ্যুত্থানের যথার্থতা প্রমানে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সহায়তায় এসব কাজ করা খুব কষ্টসাধ্য নয়। জন সচেতনেতা ছাড়াও তৃণমূলের সরকারী মেকানিজমকে অংশীজন করে গড়ে তোলার একটা পজেটিভ দিক হিসাবে এটা বেশ কার্যকরী হবে।
ছাত্রদের বিষয়টি নিয়ে বেশী উচ্চারণ করতে চাই না। তথাপিও বলতে মন চাই যে - এই মূহূর্তে তোমরা শাসন কেন্দ্রিকতার চারপাশে না থেকে দেশব্যাপী তোমাদের কমিউনিটিটির লক্ষ কোটি ছাত্রছাত্রীদের মন:সংযোগের নিউক্লিয়াস হওয়ার ব্রত নিয়ে এগিয়ে যাও। বিভাগ ওয়ারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধরে ধরে তোমাদের সততা ও যোগ্যতার যোক্তিকতায় ছাত্র ছাত্রীদের সহযোদ্ধার মন্ত্রে উজ্জীবিত করো। পরবর্তীতে জেলা ও উপজেলা ভিত্তিক এই প্রোগ্রাম গুলির মাধ্যমে দেশে ছাত্র জাগরন চাঙ্গা করো। মটো একটাই। সততা নৈতিকতা সহমর্মিতা এবং জীবন যুদ্ধের প্রতিটি ধাপে স্বছতাই হোক তোমাদের বেড়ে উঠার মূলমন্ত্র। অরাজনৈতিক কাঠামোয় থেকে তোমরা যে সার্বজনীনতায় ছাত্র সমাজকে যুথবদ্ধ করেছ তা অনন্য। এর মূল্যবোধকে পরিমার্জিত ও পরিবর্ধনের স্বচ্ছতায় এগিয়ে নাও। মনে রেখ জনতা জনার্দন। ওদেরই সন্তান হয়ে তোমরা যেভাবে আবু সাঈদ বা মুগ্ধদের ফুলেল সুবাসে বাংলায় আলো জ্বেলেছ তার আলোকরশ্মি ঘরে ঘরে জ্বালিয়ে দাও। মনে রেখ তোমাদের জ্বালিয়ে রাখা একতা ও যুথবদ্ধতার আলোক রশ্মিতে অর্ধ শতাব্দীর প্রচলিত রাজনীতি তার স্বচ্ছতা খুঁজে নিয়ে বাংলার জনগনের সামনে এগার'শ ঊন নব্বইয়ের সেই নুরুলদিন হয়ে চিৎকার করে বলে উঠবে, জাগো বাহে কুন্ঠে সবাই।
বিংশের একাত্তরে বাঙালী জেগেছিল রাজনৈতিক অনুশীলনের ব্যক্তি কেন্দ্রিকতার মোহ মাদকতায়। আজ একবিংশের চব্বিশে ছাত্র জনতার শিরদাঁড়া উঁচু করা স্বত:স্ফুর্ততায় বাঙালী তার আপন অস্মিতার আলোকরশ্মি খুঁজে পেয়েছে। দেশের সুধী সমাজ ও রাজনীতির উঠানগুলো তাদের পথচলার পরিশুদ্ধ আচরনে আজ মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনায় একতাবদ্ধ হবে - এটাই আজকের দিনের শপথ। লেজুড়বৃত্তির ছাত্র ও যুব রাজনীতির উঠানকে মাসলম্যান ক্যাডার সৃষ্টির আখড়া না বানিয়ে আসুন আমরা তাদেরকে প্রকৃত রাজনীতির স্বচ্ছতা ও শুভ্রতায় আলোকিত করে পরবর্তী নেতৃত্বের যোগ্যতায় বলীয়ান করে গড়ে তুলি।
সফল আমরা হবোই ইন শা আল্লাহ!