জালাল উদ্দিন আহমেদ
প্রত্যাশার পারদ
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২১ অক্টোবর,সোমবার,২০২৪ | আপডেট: ০৮:৫৭ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বতীকালীন সরকারের উপর চাপ বেড়েই চলেছে। আইন শৃঙ্খলা স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চাপ। দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি নিয়ন্ত্রনের চাপ। শিক্ষাক্ষেত্রে শৃঙ্খলা স্থাপন করার তাগিদ। প্রশাসনে নিরপেক্ষ স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনার চাপ। এহেন বহুমুখী চাপের ডামাডোলে পড়ে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার বেশ বিপাকে পড়েছে বলে মনে হয়। জনসংখ্যার আধিক্যে জর্জরিত এই জনপদে এমনিতেই চাপাচাপি অবস্থা। সেক্ষেত্রে কোথাও চাপ নেই তা বলা মুস্কিল। বিশেষ করে স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার রেখে যাওয়া সুবিধাভোগী সরকারী মেকানিজমের প্রশাসন যন্ত্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে উইপোকার ঢিপিগুলো তৈরী হয়ে রয়েছে তার মেরামতে বা পুন:স্থাপনে শক্ত পদক্ষেপে এগিয়ে না গেলে অভ্যুত্থান পরবর্তী জন আকাঙ্খার সরকার ব্যর্থতার পারদে ঘুরপাক খেতে থাকবে - এটা কি বলার অপেক্ষা রাখে!
টাকা তুলে নেয়ার চাপ বাড়ছে। কারা তুলছে, কেন তুলছে, কোথায় যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে। এই কেন কির উত্তর তো আমাদেরকেই খুঁজে বের করতে হবে। কি কেন কোথায় কারা- এসব ভাবনা মাথায় রেখে এনফোর্সমেন্ট বাড়ালেই তো হয়। একটা কাঠামো তো আছে। কাঠামোয় ফেললেই সব জলবত তরলং হয়ে যাবে। তবে ঘুনপোকা তো সবখানেই। সর্ষেতেই তো ভুত। যখন কোষাগার ফাঁকা হয়েছে তখন তো সব ওরা ওরাই ছিল। বলার বা ধরার কেউ ছিল না। আর এখন বলারটা পেয়েছি কিন্তু ধরার আধারগুলো এখনও যে ফুটো! শুনলাম শেয়ার মার্কেটও ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। কি হচ্ছে এসব? কারা নিচ্ছে। টাকাগুলো যাচ্ছে কোথায়? এই যে বস্তায় বস্তায় টাকা পাওয়া গেল। সেতো র্যান্ডম রেইডে। এখন উচিত নয় কি শতভাগ ছাঁকুনি দিয়ে এসব হাজারো লাখো বস্তাগুলো আলোতে আনার কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া। অন্ধকারের বস্তাগুলোই যে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে শাখা প্রশাখার জন্ম দিয়ে দেশে অরাজকতা, গুজব, অশান্তি ও বিশৃঙ্খলার জন্ম দিচ্ছে না সেটা কে বলবে! এক কালা মানিকই ষাট না সত্তর লাখ টাকা নিয়ে পগার পার হতে চেয়েছিলেন। সুতরাং বড় মাপের আরো সব কালা ধলারা যে খালি হাতে পগার পার হননি বা হচ্ছেনা তার নিশ্চয়তা কে দেবে!
সুতরাং সব নোট বাতিল করুন। নতুন নোট প্রচলন করুন। টাকা বদলাতে আসলেই তো ক্লু গুলোর সন্ধান পাওয়া যাবে। কেমন যেন গা ছম ছম ভাব চারিদিকে। কি হচ্ছে! বড়সড় ঝাঁকুনির প্রয়োজন। কারন অভ্যুত্থানের পথে হেঁটে আপনারা বিপ্লবের পথটাকে সরু করে দিয়েছেন। বিপ্লবের চরিত্র নিয়ে আপনারা পথ চলা শুরু করেন নি। স্বৈরাচারীর কাটাছেঁড়া সংবিধান মেনেই মন্ত্র পড়ে আপনারা তখতে তাউজে বসেছেন। তিনটি দিন অন্ধকারে থেকে আমরা আপনাদের পেয়েছি। সময় অল্প। Way of Walking এ কোন ছাড় নয়। রিসেট বাটনে চাপ যখন দিয়েছেন, সেই কর্মটি ভালভাবেই করুন। বাংলার আপামর জনগন এবং তারুন্যের শক্তি আপনাদের পাশেই আছে। তাওয়া গরম থাকতেই রুটিটা সেঁকে নিন।
যে কথা মানুষের মুখে মুখে, সেটার প্রতি নজর দেয়া উচিত নয় কি? বিদেশী মিডিয়া বা স্বদেশী ফাজিলদের মিথ্যা প্ররোচনা ও প্রপাগান্ডায় দেশের গতি প্রকৃতি বদলাতে চায় ওরা। ওরা দাঁতাল। এই দাঁতকে ভোঁতা করার জন্য আমাদেরকেও রেডি হতে হবে। পারলে বিটিভির একটা নতুন শাখা খুলুন। কিংবা প্রাইভেট চ্যানেলকে উৎসাহিত করুন। ওদের জি নিউজ, নিউজ১৮ বা আরো সব সরকারী বেসরকারী মিডিয়াগুলো দেখেছেন কি? কি নির্লজ্জভাবে তারা আমাদের শান্তি সৌহার্দের সোনার বাংলাকে অশান্তির কারখানা বানিয়ে দিচ্ছে। লাভের গুড় তো পিপড়ায় খেয়ে ফেলছে। অথচ দেখুন তারা বা তাদের সরকার ব্যবস্থায় গনতন্ত্রের ট্যাগ লাগিয়ে কিভাবে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার চরমতম পারাকাষ্ঠায় অন্যধর্মী জনপদের উপর অমানবিক আচরনে তাদেরকে পদে পদে মানবেতর জীবনে ঠেলে দিচ্ছে। পাশাপাশি তাদের ধর্মীয় উপসনালয়কে ধ্বংস করে চলেছে। তারপরেও তারা ধর্ম নিরপেক্ষতার ঢোল বাজিয়ে বিশ্বজোড়া গণতন্ত্রের ধ্বজা উড়াচ্ছে নির্লজ্জভাবে। অশান্তির বীজ রোপন করে তাবড় দুনিয়াতে রক্তচোষা ডাঁশ হয়ে এরকম গুটিকয় জাতিরাষ্ট্র আজ দুনিয়াব্যপী ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে - তা কি আমরা বুঝতে পারছি না!
দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের গণতন্ত্র চর্চায় সবইতো ডান ঘরানার পথিক। বাম ঘরানার ওরা তো জন্ম থেকেই প্যারাসাইটিক চরিত্র নিয়ে বেড়ে উঠেছে। ওরা বোধ হয় এর বেশী এগোতে পারবে না। যদিও দেশ ব্যাপী ধর্মীয় রাজনীতির প্রতি একটি নেতিবাচক সাধারন ধারনা রয়েছে, তারপরেও বড় মুরুব্বীটা তো দেখছি ওদেরকেই বেশী উৎসাহ দিচ্ছে। ওদের সেফগার্ড হয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। মজেজাটা বুঝা যায় কি! ওরা জানে মুসলমান মাথা গরম জাতি। ওদেরকে দিয়েই তাদের নতুন নতুন ফ্রন্ট খোলার মিশনগুলো বেশ কার্যকরী হয়েছে এবং ভবিষ্যতে সেটাই অবধারিত ধরেই তারা ঘোড়ার চালটা দিয়ে রাখছে। মধ্যপ্রাচ্য এভাবেই শেষ করলো তারা। এশীয় মাইনরের তুরস্ককে নিয়ে বেশী ঘাঁটাঘাঁটি না করে মুখে একটা লজেন্স ধরিয়ে তাদেরকে তুর্কি মেজাজের দাদা বানিয়ে রেখে দিয়েছে। আর প্রতিবেশী ইরান! ঠিক আছে! ওভাবেই চলুক ওর তর্জন গর্জন। ওকে নিয়ে এত ঘাঁটাঘাঁটির খুব বেশী প্রয়োজন নেই। তবে ঠোঁকাঠুকি চলবে। ওসব করার জন্য তো চাঁদিতে টুপি পরাদের এক চিমটি মাটি দিয়ে সেন্টার পয়েন্টেই বসিয়ে রাখা হয়েছে।
ক্ষমতার তারাজুতে উঠা বড় বাবুদের বলছি, কাউকে দেখানোর জন্য আপনারা সামনের কাতারে এমনি এমনিই আসেন নি। তারুন্যের জিদ যেমন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকে স্বত:স্ফুর্ত করেছে, পাশাপাশি আপামর সাধারন মানুষের সুপ্ত আকাঙ্খার ফসল হিসেবে স্বৈরাচারী শাসনের পতন ঘটেছে। দেশের রাজনীতি তার গতানুগতিক কর্মধারায় স্বৈর শাসনের ভিতকে নড়াতে পারেনি। বিপ্লবী ধারনায় নিজেরাও যেমন উজ্জীবিত হতে পারেননি, জনগনকেও তারা স্বত:স্ফুর্ত সম্পৃক্ততায় আনতে পারেন নি। দেশের আমজনতা জগদ্দল পাথরের মত জেঁকে বসা মাফিয়া স্বৈর শাসনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হলেও রাজনীতির চালিকা শক্তি তাদের সুসংগঠিত করতে পারেনি বলেই তারা ব্যর্থ হয়েছেন। সেক্ষেত্রে চাকুরী ক্ষেত্রে কোটা সংক্রান্ত এক অরাজনৈতিক বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সূত্র ধরেই জনতার পুষে রাখা ক্ষোভ ও অসন্তোষের জেরেই ছাত্র জনতার সম্মিলিত গণ অভ্যুত্থানে স্বৈর শাসনের পতন ঘটেছে। ফলশ্রুতিতে প্রচন্ড শক্তি নিয়ে ছাত্র জনতা তথা দেশের সর্বস্তরের মানুষের আশা আকাঙ্খার প্রতীক হয়ে আপনারা বাংলা তথা বাঙালীর দন্ডমুন্ডের কর্তা হয়েছেন।
মনে রাখবেন কাউরি দয়া দাক্ষিন্যে আপনারা এই চেয়ারে বসেন নি। সুতরাং কাউকে তোয়াজ করা নয় বরং বাংলাদেশ ও বাংলার জনগনের আশা আকাংঙ্খার ভবিষ্যত বিনির্মানে যতটুকু করা প্রয়োজন, ঠিক ততটা মাপজোক করে আপনারা দেশের বুনিয়াদ বিনির্মানের সূত্রগুলির প্রতি মনোযোগী হোন। ধর্মকে ধর্মের আলোকে চলতে দিন। কর্মকে হাতিয়ার করে এগিয়ে যাওয়ার শ্লোগানে রাষ্ট্রীয় মেকানিজমকে পুনর্গঠন করুন। আপনারা কি করছেন কেন করছেন কার জন্য করছেন - এসব দেখানোর ব্যাপার নয়। কেন বেগুন আশি এক'শ টাকায় উঠলো, ডিম পনের টাকায় কিনতে হবে। কেন সিন্ডিকেট নামটা রাজনীতিবিদদের মত আপনাদের মুখে শুনবো! আপনাদের কাজ করে দেখাতে হবে। কথা বহু শুনেছি। আর কথা নয়। কাজের মাধ্যমে সবকিছুর বাস্তবায়ন দেখতে চাই। আপনারাও যদি সেই ঘুনে ধরা রাজনীতির আদলে মিডিয়ামুখী হয়ে সেদিকেই ফোকাশ হতে চান তবে আসল লক্ষ্যটা তো অন্ধকারে চলে যাবে। মনে রাখবেন, সতের কোটি মানুষের দোয়া আপনাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে রয়েছে। বড় আশা নিয়ে আমজনতা আপনাদের মুখপানে চেয়ে রয়েছে। রিসেট বাটনের কথা যখন বলেই ফেলেছেন তখন সেই কাজটি ভালভাবেই করুন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের জয় গাঁথায় উজ্জীবিত হয়ে নিজেদের কাজগুলি গুছানোর সূত্রগুলিকে শক্ত মানদন্ডে প্রতিষ্ঠিত করুন। সর্বোপরি জনগনের ক্ষমতা বোধের ইনস্টিংক্টস গুলোকে প্রকৃত রাজনৈতিক অনুশীলনে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুন।
খাবি খাওয়া মিডিয়াগুলোর প্রতি অনুরোধ, দয়া করে পতিত মাফিয়া স্বৈরশাসকদের ফটো বা চেহারা দেখিয়ে হেডলাইন করা বন্ধ করুন। তাদেরকে সহানুভূতি দেখিয়ে কি লাভ। ওরা তো আপনাদেরকেও ছন্নছাড়া করেছে। সুতরাং বিপ্লবী চেতনায় নিগূঢ় থেকে পলাতক মাফিয়াদের দুর্বৃত্যায়নের খবরগুলো একাত্তরের দাঁতাল চেহারায় তাদের কুকীর্তির বয়ান করুন। ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া দুইপক্ষের কাছেই এই নিবেদন করছি। দেশকে সুন্দর ও স্থিতশীল করার মহান ব্রতে আপনারাই এর যোগ্য কারিগর। মনে রাখবেন দেশ বিনির্মানের চারপেয়ে খাটিয়ার একটি পা কিন্তু আপনারাই। এজন্যই আপনাদেরকে সংবিধিবদ্ধ রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। ছাত্র-জনতার জোশ ও হোশকে মিলিয়ে দেশ গড়ার একতায় সমৃদ্ধ হোন।