জালাল উদ্দিন আহমেদ
একজন জননেতা এবং একজন আলেম
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৩০ জুন,রবিবার,২০২৪ | আপডেট: ০৬:১৫ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
জানিনা বিষয় বস্তুর সঙ্গে খবরের সাযুজ্য কতটুকু। তবে যা রটে তা কিছুটা হলেও ঘটে। সত্যতা যাঁচাই করার যথেষ্ট সুযোগ থাকলেও, সেটা করার প্রয়োনীয়তা আছে বলে মনে করিনি। কেননা আজকাল রাজনীতি সমাজনীতি এবং নিদেন পক্ষে মানুষের আত্মার শান্তির শেষ ঠিকানা ধর্ম পরিমন্ডলে যা কিছু হচ্ছে এবং যেভাবে চলছে তা কি পাতে পড়ে! এসব নিয়ে পাতার পর পাতা ভরে প্রবন্ধ নিবন্ধ গল্প উপন্যাস ইতিহাস রচনা করা যায়। কিন্তু কানে দিয়েছি তুলো আর পিঠে বেঁধেছি কুলোর মন্ত্রগাঁথা নিয়ে যাদের পথ চলা, তাদেরকে সামনে রেখে এগোনোর পথ রচনা করা আর সমুদ্র মন্থনে বালির বাঁধ নির্মান করা - একই পর্যায়ে পড়ে না কি? মূল স্রোতের মিডিয়া তার চেনা পথেই চলে। হাকিম নড়ে কিন্তু হুকুম নড়ার লক্ষ্মন সেখানে নেই। ভাগ্যিস জ্যাকার বার্গ বা এলন মাস্ক সাহেবরা এই দিকটার কথা ভেবেই হয়তো সোশ্যাল মিডিয়া বা বাংলায় প্রচলিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উদ্ভব ঘটিয়েছিলেন। আজকাল আম পাবলিকের ওটাই তো সম্বল।
গ্রীষ্মের প্রখর রোদ এবং বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনে উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে জনপদে ত্রাহি তথৈবচ অবস্থা। শোনা যায় উষ্ণতা বৃদ্ধির তাপদাহে সৌদি আরবে হজ্জ করতে গিয়ে এবছর এক হাজারের বেশী মানুষ হিট স্ট্রোকে মারা গেছেন। খবরে প্রকাশ, দেশের কোন এক প্রধান শহরে ঈদ উল আজহার জামাতে নামাজ পড়া এবং তৎপরবর্তী লম্বা টানের মোনাজাতের ঘটনা। ঘটনাটি ঘটেছে নগরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হওয়া ঈদগাহ ময়দানে। বেশ চমকপ্রদ এবং যুগপোযোগী খবরই বটে। জানিনা ইমাম বা খতিব সাহেবরা এরকম কেন করেন। কোন ত্রুটি বিছ্যুতি ধরার ইচ্ছে না নিয়েই বলছি, আচ্ছা বলুন তো নামাজে কোরান উল করিমের সুরা সমূহ পড়া ছাড়া আর যেসব আরবী ভাষার দোয়া সমূহ পড়ি তার কোনটির অর্থ কি? আমরা তো মুখস্ত পড়ি। প্রতিটি শব্দ এবং তা দিয়ে সৃষ্ট বাক্যের অর্থ কি জেনেছি। তাছাড়া বাক্যের শুরু এবং শেষের হিসাব কি আমরা জানি। জানি না। না জেনেই গড় গড় করে মুখস্ত পড়ে রুকু সেজদা সালাম ফিরানী ইত্যাদি আদবগুলি অতি ভক্তি সহকারে পালন করার চেষ্টা করি। কিন্তু কি পড়ছি, কেন পড়ছি তার অর্থইবা কি - তা আমরা ঘুনাক্ষরে জানার তাগিদ অনুভব করি না। আবার প্রতি জু'মায় ইমাম সাহেব গড়গড় করে খুতবা পড়ে যান, অথচ একজন মুসলমান তার ষাট সত্তর বছর বয়সেও তার অর্থ বুঝেন না। এ দায় কার? একজন মৌলভী টাকার বিনিময়ে বাড়িতে গিয়ে বা মক্তবে কোচিং স্টাইলে বাচ্চাদের কায়দা আমপারা শেষে কোরান পড়া শিখালেন, এমনকি কোরান শরীফ খতম করিয়ে গৃহস্থের বাড়িতে ভুরিভোজ আয়োজনে এবং দোয়া মহফিলের এন্তেজামে গৃহস্থের মনে খাঁটি মুসলমান হওয়ার দখিনা হাওয়া বইয়ে দিলেন। কিন্তু নামাজ রোজা এবং মহান আল্লাহ প্রদত্ত কোরানের ভাষার প্রতি তাদের তালবিলিমদের মন ও হৃদয়ে কিছু ঢোকাতে পারলেন কি?
প্রখর রোদ ও গনগনে সুর্যের তাপকে মাথায় নিয়ে মুসল্লিগন যখন খোলা ময়য়ানে জামাতে দাঁড়িয়ে পড়েন তখন তাদের মনে মহান আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাঁর উদ্দেশ্যে কুরবানীর জন্য ঘরে রেখে আসা সখের পশুটির কথাই বেশী করে মনে করেন। এজন্যই হয়তো বকরীদের নামাজটা একটু সকাল সকাল পড়ানো হয় যাতে করে মুসুল্লিগন তাদের কুরবানী পর্ব তাড়াতাড়ি সেরে ফেলতে পারেন। আবার খরতাপের প্রচন্ডতা হতে রক্ষা পাওয়ার তাগিদে বকরঈদের জামাতে অত ওয়াজ নসিহত বা লম্বা টানের মোনাজাত থেকে বিরত থাকার একটা প্রচ্ছন্ন তাগিদ লক্ষ্য করা যায়। এক্ষেত্রে রাজশাহী ঈদের জামাতে এবার যে ঘটনার সুত্রপাত হয়েছে তা কিন্তু কাকতালীয় কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। নামাজ ও খুতবা পড়তে সময় লাগে ছ'মিনিট আর মোনাজাত (যা নামাজের অংগ নয়) হোল বিশ পঁচিশ মিনিট ধরে। তাও আবার এই গ্রীষ্মের খরতাপের খোলা ময়দানে! ঈদের হিসাব বাদ দিয়েই নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি- ঢাকা শহরের অলি গলিতে মসজিদ। একজন ধর্মপ্রান মুসুলমানের জন্য এটা সুখের খবর বটে। ‘'ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’’এখন আমরা জামাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে পারছি। তবে বিপত্তিটা ঘটে সাপ্তাহিক জু'মার নামাজের দিন। দুই রাকাত জু'মার ফরজ পড়ার জন্য ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত খতিব সাহেবের খুতবা(ওয়াজ) এবং নামাজ পরবর্তী দুই হাত তুলে ২০ থেকে পঁচিশ মিনিট মোনাজাত - এটা অবধারিত। সেই মোনাজাতে অমুকের অসুখ, তমুখের ছেলে এসএসসি দেবে, অমুক সাহেব হজ্জে যাচ্ছেন, অমুকের ছেলে বৃত্তি পেয়েছে, প্রসুতির সিজার হবে, মসজিদের সভাপতির বৌমা বিসিএস পাশ করেছেন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাহেবের পিতৃ বিয়োগের বার্ষিকী পালন ইত্যাদির জন্য দোয়ার দরখাস্ত৷ এবং তৎপরবর্তী নাম ধরে ধরে বিষয় বস্তুর বয়ান সম্বলিত আইটেম ওয়াইজ আল্লার কাছে ফরিয়াদ। এছাড়া রাজনীতির ক্ষমতাবান মহানদের জন্য কুর্নিশি ফরিয়াদ তো আছেই।
রাজশাহীর ঈদের প্রধান জামাতে নামাজ শেষের মুনাজাতে এধরনের দৃশ্যপটের অবতারনা হয়েছিল বলেই হয়তো জামাতের প্রথম সারির মুসল্লিদের মধ্যে নগরের জনপ্রিয় একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মুখ ফসকে কিছু অপ্রিয় সত্য কথা বেরিয়ে গেছে। যা তিনি সম্ভবত: অকুস্থলেই ‘সরি’ বলে ইতি টেনে দিয়েছেন বলে খবরে প্রকাশ। কিন্তু সময় ও স্রোতের এতই রমরমা অবস্থা যে একজন সম্মানিত ধর্ম্মগুরু তার নিজের অবস্থান ও পদমর্যাদার তোয়াক্কা না করে ‘'যার না পুষাবে তিনি মুনাজাত ছেড়ে চলে গেলেই তো পারেন”, ধরনের অবজ্ঞা সূচক উচ্চারনে সমাজে ধর্মগুরুদের সমন্ধে কি বার্তা পৌঁছে দিলেন সেটাই ভাবনার বিষয় বলে মনে হচ্ছে। দেশ সমাজ রাষ্ট্র কিভাবে চলছে, সে ব্যাখ্যায় না গিয়ে এব্যাপারে চোখ বন্ধ করে বলা যায় যে আজকাল মাওলানা মৌলভীরা ওয়াজ ইসালে সওয়াব বা বিভিন্ন ধর্ম সভার নাম করে দেশব্যাপী যে ধরনের যাত্রা নাটকের আদলে ইসলামকে উপস্থাপন করছেন তা কি ইসলাম ধর্মকে সমৃদ্ধ করছে? নাকি আগত প্রজন্মের জন্য ইসলাম একটি হাস্য কৌতুকের আধারে পরিনত হচ্ছে তা ভাববার সময় এসেছে বৈকি! ইমাম খতিব সাহেবদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি - আপনারা সমাজের ইমাম বা নেতা। ধর্মীয় আবহে থেকে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্যে নিজেরা বিকশিত হোন। পাশাপাশি আমরা মুসলমানরা যাতে হক্কুল্লার পথে নিষ্ঠাবান হতে পারি, সেই মন্ত্রেই আমাদেরকে আলোকিত করুন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তার নির্দেশিত পথে চলার ক্ষমতায় বলিয়ান করুন! আ'মীন।