জালাল উদ্দিন আহমেদ
স্মৃতিদীপ-২
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৯ জানুয়ারী,শুক্রবার,২০২৪ | আপডেট: ০৭:১৭ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
এখন সময়টা তথ্য উপাত্ত এবং জীবন্ত রিল সেলুলয়েডে চলে। স্টীল ছবিকেও এখন মানুষজন জোড়াতালি ভেবে সন্দেহ করে। আর সন্দেহের কারনগুলো আছে বলেই হয়তো এসব কথা উঠে। আমার স্মৃতির কথ্যগুলি অনেকের কাছেই সেরকম প্রশ্নের জন্ম দিতে পারে তাই আগেভাগেই বিনম্র শ্রদ্ধা রেখে বলছি - আমি কোন গ্রেডিং নেয়ার জন্য এই পরীক্ষায় বসি নি। কারন এই সত্তোর্ধ বয়সে এসে নিজের জীবনে লেগে থাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্মৃতিগুলোকে কথামালায় সাজিয়ে উত্তর পুরুষদের চাঙ্গা করা ছাড়া কোন উচ্চাকাংখা আমার নেই। তাছাড়া আমি এমন কোন মহান ব্যক্তি নই যে আমার এই লেখা পড়ে সমাজে দ্যুতি ছড়িয়ে তা মানুষজনকে অনুপ্রানিত করবে। সুতরাং যা কিছু লিখছি বা বলছি সবই আমার জীবন যুদ্ধের চলার পথে লেপ্টে থাকা ঘটনাপুঞ্জ। এখানে রঙ তুলি লাগিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে বয়ান করার মত কোন বাক্য উচ্চারন করার অভিলাষ আমার নেই। খুব বেশী লেখাপড়া শিখে বা বলা যায় লেখাপড়ার পূর্ণতা নিয়ে কর্মজীবন শুরু করতে পারি নি। তবে বলা বাহুল্য কর্মজীবনের ফাঁকে ফাঁকেই আমি আমার বিদ্যা শিক্ষার বাকী সনদগুলো ভালভাবেই অর্জন করেছিলাম। কর্মজীবনের সাবলীলতা আনয়নের জন্য আমাকে এসব উচ্চশিক্ষার পরীক্ষা যুদ্ধে অবতীর্ন হতে হয়েছিল।
তখন বয়স আর কতই বা হবে। সবে চাকরীতে ঢুকেছি। ১৯৭৭ সালের প্রথম জুলাই বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের সরবরাহ ও পরিদর্শন অধিদপ্তরে দ্বিতীয় শ্রেনীর পদমর্যাদায় পন্য পরীক্ষক হিসাবে আমার কর্মজীবনের শুরু। এই ডিপার্টমেন্টটি ছিল পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরবরাহ ও পরিদর্শন অধিদপ্তরের পুর্ব পাকিস্তানীয় শাখা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের অধীনে এটা সরবরাহ ও পরিদর্শন অধিদপ্তর বা Department of Supply and Inspection নাম নিয়ে একটি স্বয়ং সম্পুর্ন অধিদপ্তর হিসাবে কাজ শুরু করে। মূলতঃ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগগুলির সার্বিক সমন্বয়ে বাংলাদেশ সরকারের একটি স্বয়ং সম্পুর্ন ইউনিট হিসাবে এটা বিবেচিত হোত। সরকারী সচিবালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের অফিস পরিচালনার সমস্ত কেনাটার দায়িত্ব অর্পিত ছিল এই অধিদপ্তরের কাঁধে। এমন কি আইন শৃংখলা বাহিনীর পুলিশ ও বিডি আরের চাহিদাপত্রের কাজও এই অধিদপ্তরের উপর অর্পিত ছিল। বলা যায় সরকারী সমস্ত অফিস সমূহের অফিস পরিচালনার মালামাল সংক্রান্ত বার্ষিক চাহিদাপত্রের কেনাবেচার কাজ এই ডিপার্টমেন্টের মাধ্যমে সম্পন্ন হোত। স্বাধীনতার পর থেকে সরকারী অফিস সমূহ নিজেরাই পারচেজ এন্ড সেলস অফিস চালু করা আরম্ভ করলে গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের প্রথমদিকে এই ডিপার্টমেন্টের বিলুপ্তি সাধন করা হয়। সরকারী কেনাকাটার কেন্দ্রীয় নজরদারীর জন্য এখন অবশ্য পরিকল্পনা বিভাগের আইএমইডি ও সিপিটিইউ কাজ করে যাচ্ছে।
আমি শিক্ষক পরিবারের ছেলে। সদা সত্য কথা বলিবে সৎপথে চলিবে -এই মন্ত্রগাঁথায় বড় হয়ে আমার ভাগ্যে না শেষে এই সরকারী পারচেজ ও ইনস্পেকশনের চাকুরী জুটলো! আমি মূলতঃ একজন লেদার টেকনোলজিষ্ট। আমার কাজ ছিল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাহিত লেদার ও রাবার সংশ্লিষ্ট পন্যের পারচেজ স্পেসিফিকেশন এবং তার ক্রাইটেরিয়া তৈরী করা এবং সেই মোতাবেক টেন্ডার সিডিউল বানিয়ে তা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক ক্রয়ের ব্যবস্থা করা। শুধু তাই নয়, টেন্ডার আদেশ দেয়ার পর সেই সব পন্যের চাহিত স্পেসিফিকেশন মোতাবেক গ্রহনযোগ্য হয়েছে কিনা তার ইনস্পেকশন করে পাশ ফেলের দায়িত্বও আমাকে সামলাতে হোত। তবে চাকরী জীবনের প্রথম সিঁড়িতেই আমি একটা বড় হোঁচট খেলাম। চাকুরীতে যোগদান করে সহযোগী হিসাবে যাদের পেলাম তাদের একজন লেদার ফুটওয়্যারের উপর ট্রেড কোর্স করা একজন বি এস সি পাশ ব্যক্তি আর অন্যজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা। তারা সহযোগী হিসাবে আমাকে পেয়ে খুশী হয়েছিলেন কিনা জানি না, তবে আমি প্রীত হতে পারি নি। কারন সহকর্মীদের লাভ লসের হিসাব কষা এবং ইনস্পেক্টরীয় আচার আচরন আমার কাছে ভাল ঠেকেনি। চাকরী করতে এসে কেমন যেন একটা লাভ লস খতিয়ানের সুদকষার আড়ত বলে মনে হোল এই কর্মস্থলকে।
কিসের কি Examiner of Stores বা পন্য পরীক্ষক! কন্টাক্টর বা ব্যবসায়ীদের কাছে তো ইনস্পেক্টর হিসাবেই বিবেচিত হতাম। দুটি বিভাগ নিয়ে গঠিত এই অধিদপ্তরে দুজন অতিরিক্ত পরিচালককে প্রধান করে এই অফিসের কার্যক্রম পরিচালিত হোত। আমার পোষ্টিং হয়েছিল ইনস্পেকশন উইংএ। তবে ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল বলেই হয়তো প্রধান হিসাবে একজন ভাল অভিভাবক পেয়েছিলাম আমি। তাঁর গাইডলাইন মেনে আমি বেশ স্বচ্ছন্দ ছিলাম আমার প্রথম কর্মস্থলের প্রথম সিঁড়িতে। একজন সৎ ও দক্ষ প্রশাসক হিসাবে তিনি বেশ সুনাম অর্জন করেছিলেন। তিনি ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ শাহজাহান খাদেম। তৎসময়ের ডি আই টির চেয়ারম্যান হুমায়ুন খাদেমের ছোট ভাই ছিলেন তিনি। ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার আখাউড়াস্থ খড়মপুরের বিখ্যাত কল্লাহ শহীদ(রহঃ) পীরের খাদেম পরিবারের সন্তান তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি লায়ন্স ডিস্ট্রিক্ট-৩১৫ এর গভর্নরও হয়েছিলেন বলে শুনেছি। তবে আমার কর্মকাল সময়ে তিনি সে সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল লায়ন্স ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তাছাড়া পুরো অধিদপ্তরের পরিচালক হিসাবে যিনি ছিলেন তিনি আরো সরেস বলে মনে হয়েছে আমার কাছে। চট্টগ্রামের কোন এক পীর বংশের উত্তর পুরুষ ছিলেন তিনি। জনাব শফিউল্লাহ খান একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং পাকিস্তান প্রত্যাগত সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিসের (সিএসএস) অফিসার।
যে স্মৃতি উদগীরনের আকাঙ্ক্ষায় কলম ধরা সেটা নিয়েই না হয় এগোনো যাক। ১৯৮২ পরবর্তী সময়। আশেকী জেনারেল এরশাদের শাসনকাল চলছে তখন। জেনারেল সাহেব সরকারী অফিস সমূহে শৃংখলা ও সুষ্ঠতা এবং স্বচ্ছতা আনয়নের লক্ষ্যে মিলিটারী বেইজড একটি সরকারী ইউনিট বা সেল গঠন করলেন। নাম দেয়া হয়েছিল সম্ভবতঃ কোয়ার্ডিনেশন সেল। আব্দুল গনি রোডের পুরাতন রেল ভবনে এর অফিস বসানো হয়েছিল। তাদের কাজ ছিল ঠিক অডিট ডিপার্টমেন্টের মত। তবে তা হোত উলটো কায়দায় এবং অবশ্যই মিলিটারী আদলে। সরকারী অফিস আদালতে ঘুষ দুর্নীতি ও অনিয়ম ইত্যাদি কমানোর লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। সে সময় সেনা প্রধান ছিলেন সম্ভবতঃ জেনারেল আতিকুর রহমান। আগেই বলেছি, আমি যে দপ্তরে চাকুরী করি তা ছিল আপাদ মস্তক দুর্নীতিতে মুড়ানো। প্রডাক্ট স্পেশিফিকেশন, এইচ এস কোড বসিয়ে প্রডাক্ট ক্রাইটেরিয়া তৈরী, টেন্ডার ডকুমেন্ট থেকে শুরু করে তার গ্রহন- অগ্রহনযোগ্যতা নিরূপনের দায়িত্ব সেরে সেইসব পন্যের পাশ ফেলের কর্তা হওয়ার অশেষ ক্ষমতাশালী এক সরকারী দপ্তরের উষ্ণতা কত উচ্চে থাকে তা বোধ করি ব্যাখ্যা করার অবকাশ পড়ে না। সেক্ষেত্রে সদ্য জন্ম নেয়া একটি দেশের কর্মী বাহিনীর দেশপ্রেম ও স্বচ্ছতা বিনির্মানে সুষ্ঠ ও স্বচ্ছ সরকারী ব্যবস্থাপনা অতীব জরুরী হয়ে পড়ায় এধরনের উদ্যোগকে সময়োপযোগী বলেই ধরে নেয়া হয়েছিল।
আমি যে সময়টায় সরকারী পারচেজ ও ইনস্পেকশনে আমার কর্মজীবন শুরু করলাম তখন ঐ ডিপার্টমেন্টের ক্ষয়িষ্ণু কাল। ততদিনে বিভিন্ন মন্ত্রনালয় ও ডিপার্টমেন্টগুলি তাদের নিজ নিজ পারচেজ ও সেলস উইংএর পত্তন ঘটানো শুরু করে দিয়েছে। তারপরেও আমার সেক্টরে তখনো পোস্ট অফিস, ফায়ার সার্ভিস, বিডিআর ও পুলিশের কিছু কিছু স্পেশালাইজড প্রডাক্ট, এমনকি সরকারী স্টেশনারী ও মুদ্রন বিভাগে চামড়া ও রাবারজাত পন্যের কেনাকাটার বিষয়গুলি ছিল। যে সময়টা নিয়ে আমার এই অকপট স্মৃতিচারন করছি সে সময় পোস্ট অফিসের পিয়নদের জন্য অক্সফোর্ড স্যু এর ইনস্পেকশনের কাজ কয়েকদিন হোল শেষ হয়েছে। সে বছর এই কাজটি পেয়েছিল রায়ের বাজারস্থ মেসার্স নাজ বুট এন্ড স্যু কোম্পানী। পোস্টাল ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক প্রায় তেইশ হাজার জোড়া অক্সফোর্ড স্যু এর চাহিদা সম্পন্ন সেই ক্রয়াদশের মূল্যমান ছিল প্রায় ৬০-৬৫ লাখ টাকার মত। আমি যে সময়টা নিয়ে কথগুলো বলার চেষ্টা করবো, সম্ভবতঃ সেইসব অবজেক্ট অর্থাৎ সিনিয়র কলিগরা সবাই গত হয়েছেন বলেই ধরে নেয়া যায়। আমি হচ্ছি সে সময়ে ডিপার্টমেন্টের সর্বকনিষ্ঠ একজামিনার। সময়টা ১৯৮৩ সালের আগষ্ট সেপ্টেম্বর। সেসময় অফিসের সময়সূচী ছিল সকাল ৭.৩০ থেকে বিকাল ২.০০ টা। দিন তারিখের কথা মনে নেই। এক সকালে অফিস প্রধান খাদেম স্যারের ডাক। সচরাচর ইমার্জেন্সি ছাড়া বড় সাহেবের ডাক পড়েনা। পড়ি মরি করে স্যারের চেম্বারে ঢুকলাম। লক্ষ্য করলাম স্যারের রূমে একজন অতিথি বসে আছেন। স্যার খুব শান্ত গলায় আমাকে বসতে বললেন। তারপর তিনি যা বললেন তাতে আমি একটু বিব্রতই হলাম। তবে প্রকাশ করলাম না। তিনি শুধু বললেন আমি যেন ওই রেল ভবনের কোয়ার্ডিনেশন সেলে যাই এবং আমাদের অফিস সম্পর্কে যা জিগ্যেস করে তার ঠিকঠাক উত্তর দিয়ে আসি। আমি স্যারকে শুধু বলেছিলাম কেন ডেকেছে, তাছাড়া আমি এই অফিসে সর্বকণিষ্ঠ কর্মকর্তা। আমি তো অনেক কিছুই জানিনা ইত্যাদি। স্যার শুধু বললেন তোমার প্রতি আমার কনফিডেন্স আছে। you can do better than others. আমি আর প্রশ্ন না করে অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা মিলিটারী কোয়ার্ডিনেশন সেল অর্থাৎ পুরাতন রেল ভবনের দিকে রওয়ানা দিলাম। সরকারী লাল প্লেট ওয়ালা সুজুকি-১০০ মোটর সাইকেল চালিয়ে সোজা রেলভবনের গেটে থামলাম। নাম বলতেই গেট খুলে দেয়া হোল এবং একজন সিপাহী আমাকে নির্দিষ্টকৃত একটি কক্ষের বারান্দায় বসিয়ে চলে গেল।
বলে রাখা ভাল অফিস থেকে বেরিয়ে রওয়ানা দেয়ার আগে এক প্যাকেট চুইংগাম কিনে সেখান থেকে একটি মুখে পুরেই আমি ওই অফিসে গিয়েছিলাম। পাঁচ মিনিটের মধ্যে ভিতর থেকে একজন সিপাহী এসে আমাকে কক্ষে নিয়ে গেল। ভিতরে ঢুকে তো চক্ষু ছানাবড়া। ঠিক যেন কোর্টের আদলে সাজানো কক্ষটি। তবে কোর্টের জজ সাহেবদের মত উচ্চাসন সেখানে নেই। যাহোক সামনে বসা তিনজন। তাদের মধ্যমনি একজন সেনাবাহিনীর কর্নেল। কাঁচাপাকা চুল। দুইপাশের একজন বিমান বাহিনীর অফিসার অন্যজন নৌবাহিনীর অফিসার। কর্নেল সাহেবের নামটি মনে না এলেও শরীফ বা শমসের এধনের হবে। কর্নেল সাহেব তার সামনে রাখা চেয়ারে বসতে বললেন। তিরিশ সেকেন্ডের দম নিয়ে আমার পরিচয় জানলেন এবং আমাকে ডাকার কারন ব্যাখ্যা করলেন। তিনি যা বললেন তার সারমর্ম হলো সম্প্রতি তাদের টিম মেসার্স নাজ বুট এন্ড স্যু কোম্পানীতে তল্লাসী চালিয়ে তাদের অফিসিয়াল নথিপত্র জব্দ করেছেন। সেইসব নথি বা নির্দিষ্টকৃত খাতায় আমাদের ডিপার্টমেন্টের অফিসারদের নামে টাকা নেয়ার হিসাব পাওয়া গেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। তিনি খাতা খুলে সেইসব টাকা নেয়ার তারিখ পরিমান পড়ে পড়ে আমাকে শুনালেন। আমি জিগ্যেস করলাম এখানে আমার নাম আছে কিনা। তিনি না সূচক জবাব দিলেন। বয়স তখন কতই বা হবে খুব জোর ২৮-৩০। আগেই বলেছি আমার পকেটে চুইংগাম ছিল। কোন কিছু না ভেবেই আমি কর্নেল সাহেবকে একটা চুইংগাম অফার করে বললাম দেখুন স্যার আপনি যেমন সরকারী কর্মচারী আমিও ঠিক তাই। আপনি যে চেয়ারে বসে আছেন বিষয়টা একটু ঘুরিয়ে দেখুন তো। অর্থাৎ আপনি জালাল আর আমি কর্নেল শরীফ। এখন আমি যদি আপনাকে এসব টাকা লেনদেনের অবৈধ কথাগুলি প্রশ্ন করি তাহলে সেটা কি প্রীতিকর হবে! তাছাড়া এই যে নাম দিয়ে দিয়ে টাকার অঙ্কগুলো লেখা রয়েছে সেই নামের পাশে কি পদ ও পদবীর কোন উল্লেখ আছে? বা তারা সিগনেচার করে টাকাগুলো নিয়েছেন কি? তারা তো তারকাঁটা সাপ্লায়ার চামড়া সাপ্লায়ার কিংবা বোর্ড বা প্যাকেজিং সাপ্লায়ারও হতে পারেন। কর্নেল সাহেব আর একটি কথাও উচ্চারন করলেন না। শুধু thank you বলে আমাকে বিদায় দিলেন। বলে রাখা ভাল কর্নেল সাহেব আমার দেয়া চুইংগামটি বিনয়ের সাথে ফেরত দিয়েছিলেন।
সেখান থেকে অফিসে ফেরার পথে ঢাকা স্টেডিয়ামের প্রভিন্সিয়াল রেস্টুরেন্টে হালকা নাস্তা করে নিলাম। ঠিক ১.০০ টার সময়ে অফিসে ফিরলাম। সোজা খাদেম স্যারের কক্ষে প্রবেশ করে দেখি তখনো সেই ভদ্রলোক স্যারের চেম্বারে বসে আছেন। তিনি আর কেউ নন। তিনি নাজ বুট এন্ড স্যু কোম্পানীর মালিক জনাব সামসুদ্দিন আহমেদ। রায়ের বাজার এলাকার গন্যমান্য সজ্জন ব্যক্তিও বটে। তার বড় ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ছোটটা আমেরিকা না ইংল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা নিতে গেছে। রূমে ঢুকতেই সেই অতিথি মশাই আমাকে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করে প্রশান্তির স্বরে বললেন “জালাল সাহেব আপনি আমাকে বাঁচালেন”। আমি কিছু বলার আগেই অতিরিক্ত পরিচালক খাদেম স্যার, thank you Jalal. thats why I choose you to confess.. আমিও মনে মনে বললাম thank you sir, এজন্যই বুঝি ডিপার্টমেন্টের কাজের গতি অনয়নের লক্ষ্যে বিশ জন এক্সামিনার থাকা সত্ত্বেও দশটি মোটর সাইকেল কিনে আমার মত ১৯ নম্বরের জুনিয়র এক্সামিনারকে কেন তা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। আর আমার পার্শবর্তী সহকর্মী দুজন এক্সামিনার এবং উর্ধতন সহকারী পরিচালক জানলোই না যে আমার ডিপার্টমেন্টকে নিয়ে কি ঝড়টা না বয়ে গেছে গত কয়েক ঘন্টায়। কর্মজীবনে এহেন বহু ঘটনাপুঞ্জ জমে আছে আমার স্মৃতির মণিকোঠায়। জানানোর অপেক্ষায় থাকলাম।