জালাল উদ্দিন আহমেদ
বাঙালীর বাংলাদেশ ইতিহাসের ক্যানভাসে
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১০ এপ্রিল,সোমবার,২০২৩ | আপডেট: ০১:০৯ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মাঝে মাঝে এমন সব ঘটনা বা দুর্ঘটনা ঘটে যায় যা রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পর্যায়ে ভিন্নল মাত্রার ক্ষত সৃষ্টি করে। রাষ্ট্র বা সমাজ তার নিজ ক্ষমতা বা কর্মদক্ষতায় সেসব দুর্ঘটনা বা ঘটনাগুলো সামলে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলে। হতে পারে তা কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মনুষ্য সৃষ্ট কোন অসাবধানতার ফল কিংবা ক্ষমতার পালা বদলের নৃশংশতম হত্যাযজ্ঞ অথবা রাজনীতির পাশাখেলায় জনপদের অবর্ননীয় দু:খ দুর্দশার কাহিনী। এসব ঘটনা ও দুর্ঘটনার হাজারো স্ক্রীপ্ট আমাদের জনপদে ছেয়ে আছে অযুত সহস্র কাহিনী ও কথামালার মিশেল অনুভূতিতে। মনে হচ্ছে, এইতো সেদিন আমরা মুক্ত ভূখন্ডের মালিক হয়ে যাত্রা শুরু করলাম। কিন্তু এই যাত্রাপথ যে এত লম্বা হয়েছে তা কি আমরা ভেবেছি! হাঁটতে হাঁটতে অর্ধ শতাব্দী পেরিয়ে এলাম - তার হিসেব কে রাখে! প্রথম প্রজন্ম শেষের পথে। দ্বিতীয় প্রজন্মেও ভাটির টান পড়েছে। সুতরাং প্রজন্মের তৃতীয় ঢেউয়ে এসে আমরা যখন একটা তৃপ্তির ঢেকুর তুলে তাদের হাতে আমাদের অর্জনের সবকিছু সঁপে দেয়ার সন্ধিক্ষনে দাঁড়িয়ে তখন কোন্ অশনির কাল ধোঁয়া আমাদের চলার পথকে তমশাচ্ছন্ন করছে তা কি আমরা খেয়াল করেছি! নাকি সামষ্টিক স্বার্থকে জ্বলাঞ্জলি দিয়ে আমরা ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থ চরিতার্থে সেই মধ্যযুগীয় কায়দা কানুনকে আঁকড়ে ধরতে চাইছি।
আমাদের রাজনীতি, সমাজনীতি এবং রাষ্ট্রনীতিতে এমন কোন অবশ্যম্ভাবী পরিবর্তন এমনকি সংযোজন বা বিয়োজন লক্ষ্যনীয়ভাবে দেখা যায়নি যেটা নিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর আমরা তুলতে পারি। ষাটের দশকের সেই গদবাঁধা নিয়মেই এমনকি কলোনীয়াল জীবনের সেই বেঁধে দেয়া আইন কাননেই আমাদের চলতে ফিরতে হচ্ছে। আর এসব শিরোধার্যে রেখেই রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক কোন ভজকট হলেই নিয়তিকে টেনে এনে আমরা একটা লম্বা নি:শ্বাস ফেলি। আমরা ক্ষমতার দন্ডে থাকতে স্বাচ্ছন্দবোধ করি। ক্ষমতাহীন জীবনকে আমরা ধর্তব্যে আনতে চাই না। শান্তি, অহিংসা, ভ্রাতৃত্ববোধ, দেশপ্রেম, নৈতিকতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের কথা বলে আমরা মুখে ফেনা তুলে ফেলি। কিন্তু কর্তব্য কর্মে আমরা আপন ভুবনেই চলাফেরা করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করি। আমরা যেটুকু জানি সেটা নিয়েই উচ্চকিত হতে পছন্দ করি এবং সেটাকেই শিরোধার্য করে জনপদে চাপিয়ে দিই। আমাদের জানার, বুঝার এবং করার যে সাগরসম বিস্তৃত ক্ষেত্র এই বিশ্ব ব্রম্ভান্ডে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সেসব নিয়ে ভাবার বা আলোচনা করার সময় আমাদের খুব কম। ধর্মকে সামনে এনে আমরা এতটাই আবেগী হই যে ভিন্নধর্মী মত ও পথ আমার কাছে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ও লাঞ্ছনার বস্তুতে পরিনত হয়।
১। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশের ক্ষমতা গ্রহনে একটি রাজনৈতিক দলের একছত্র আধিপত্যে দেশ শাসনের যাত্রা শুরু। সদ্য স্বাধীন দেশে একজন মহা নায়কের নেতৃত্ব গ্রহন অবশ্যম্ভাবী এবং শিরোধার্য হলেও ক্ষমতা প্রাপ্তির হিসেব নিকেশে একটি দলকে একছত্র প্রাধান্য দেয়াটা ছিল একপেশে এবং স্বেচ্ছাচারী হওয়ার প্রথম চারা রোপন। রাষ্ট্র পরিচালনায় নেতৃত্ব গ্রহনে মহান নেতার ব্যাপারে অভিন্ন মত থাকলেও একটি দলের কাছে ক্ষমতা তুলে দেয়া, বাঙালীর সামগ্রিকতায় কোথাও যেন অঙ্গহানির আওয়াজ অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে আসে। কারন পরাধীন দেশের সামরিক শাসকের অধীনে নির্বাচন করা পাকিস্তানের গণপরিষদ সদস্যরা কখনোই একটি স্বাধীন দেশের নির্বাচিত সাংসদ হতে পারেন না। এমনকি সেই পাকিস্তান গন পরিষদ সদস্যদের প্রণীত সংবিধান কেমন করে একটি স্বাধীন দেশের সংবিধান হিসাবে গৃহীত হয় সেটাও অযুত সহস্র প্রশ্নের জন্ম দেয়। তাদের বৈধতা নিয়ে স্বাধীন দেশে প্রশ্ন করার কেউ না থাকলেও কালের সাক্ষী হয়ে বহমান ইতিহাস এবিষয়ে ফুটনোট দিতেই পারে। বাংলাদেশ সৃষ্টির আঁতুড় ঘর থেকেই যখন শুরু হয় বিভাজন বিভেদের উন্মুক্ত আয়োজন তখন গনতন্ত্রের মুক্তবাকগুলি ছাই চাপা তুষের আঁচে ছটপট করতে থাকে। সেই আঁচের গর্ভজাত সন্তানরূপে বেরিয়ে আসে অদম্য শক্তির সম্মিলিত ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের টগবগে তরুনের একটি অংশ। ফলশ্রুতিতে দেশে শুরু হয় বিরুদ্ধ মত দমনের এক জঙ্গী আয়োজন। এ নিয়ে কথা হয়। ভিন্ন ভিন্ন কায়দায় বাঙালীর বিজ্ঞজনেরা তাদের মত প্রকাশ করেন। সেগুলোই টুকরো টুকরো কথা হয়ে জনপদে ঘুরাঘুরি করে। কাউরি কাছে সেই বিরুদ্ধবাদ দমনের নৃশংস আয়োজন ছিল তাদের অর্জন। এটা নিয়ে তারা উচ্চবাচ্যও করে। আবার কাউরি কাছে তা ধরা দেয় দু:খ কথার সাগরভাসা হিসাবে। সেদিনের ভীতিকর দিনগুলির ক্ষত এখনো আবছা আভায় বাঙালীর অনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়ে গেছে। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় সেসব থাকে সরল রেখায় টানা এক রেল লাইনের গতিপথ হিসাবে।
২। চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ এবং রাজধানীর পথে ঘাটে জীর্ণকায় শিশুদের আহাজারির চিত্র সেদিন স্বাধীন বাংলাদেশ দেখেছিল। দেখেছিল ডাস্টবিনে পড়ে থাকা উচ্ছিষ্ট খাবার দিয়ে জ্বঠর জ্বালা নিবারনের জন্য কুকুর বিড়ালের সাথে মনুষ্য সন্তানের কাড়াকাড়ির দৃশ্য। পৃথিবীও দেখেছিল সেই অজ গ্রামের বাসন্তির গায়ে জাল জড়িয়ে নিজের আব্রু ঢাকার চিত্র। পাশাপাশি সেই সময়ে ক্ষমতার আশীর্বাদ পুষ্ট ব্যবসায়ীর পার্শবর্তী দেশে পাচার করা সারি সারি খাদ্য বোঝায় ট্রাক আটকের চিত্রও বাঙালী দেখেছিল। এসব নিয়ে কথা হয়। লেখালেখিও হয় অল্প বিস্তর। আবার এসব নিয়ে গবেষনা করে অনেকে পিএইচডি ডিগ্রিও নিয়েছেন বলে শুনেছি। এসব নিয়ে সিনেমাও হয়েছে। সুতরাং এসব টুকরো টুকরো কথামালা নিয়েই তো আমাদের বেঁচে থাকার সুবর্ণ জয়ন্তীকে সাজাতে হবে। সময়েই কালির বিন্দুতে সব ঠাঁই নিবে - এটাই সত্য।
৩। তবুও একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছিল আমাদের স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মানের চালচিত্র। তুষের আগুনের আঁচ মাঝে মাঝে গা গরম করলেও বাঙালী তার মহান নেতার প্রতি অবিচল বিশ্বাসে অটল ছিল। তবে পঁচাত্তরের প্রথমভাগে উদীয়মান শক্তিকে অবহেলা ও ক্ষয়িষ্ণু শক্তির প্রতি মিথ্যা মোহ সৃষ্টি করে যখন বাংলার শাসন ও রাজনীতিতে একদল - একনেতা - একদেশ ফর্মুলার আমদানী করে তাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হোল তখন কোথাও যেন একটি অশনির কালো মেঘ উঁকি মেরেছিল। মুক্তমনা বাঙালী কিছুটা হলেও হোঁচট খেয়েছিল সেদিন। সেক্ষেত্রে তৈরী থাকা শক্ত প্লাটফরমেও সেদিন ফাটল ধরেছিল যা অ-মেরামত যোগ্য ছিল বলেই আমার সেদিনের ছাত্রজীবনে লক্ষ্য করেছিলাম। আন্দোলনের সূতিকাগার হিসাবে বিবেচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য ছাত্র সংসদ নির্বাচনে উদীয়মান বিরূদ্ধমত দলভুক্ত ছাত্র সংগঠনের জিতে আসাটাই ছিল সেই ফাটলের খন্ডচিত্র।
৪। ১৯৭৫ এর পনেরোই আগষ্টের মশীলিপ্ত কালোরাত। বাঙালীর জীবনে এক কলঙ্কময় রাত ছিল সেটি। যার তর্জনী উঁচানো আহ্বানে সাড়া দিয়ে একটি জাতির অভ্যুদয় হোল, তাঁকেই সেই জাতির একটি বিপথগামী জনপদের নৃশংশতায় পরিবার পরিজনসহ নির্মমভাবে খুন করা হলো। বাঙালী তার অভ্যুদয়ের সাড়ে তিন বছরের মাথায় আপন অস্তিত্বের স্রষ্টাকে হারিয়ে দিকভ্রান্ত হোল। সময়ের পথ পরিক্রমায় তা ঠিক হোল বটে তবে ততদিনে বাঙালী তার অর্জনের খাতায় ক্ষত চিহ্ন নিয়েই পথ হাঁটা শুরু করলো। পঁচাত্তরের সেই ভয়াবহ নৃশংশতা ও তৎপরবর্তী ঘটনাপুঞ্জ নিয়ে অনেক কাহিনী ও কথকতা শুনা যায়। সমাজ রাষ্ট্রে সেসব নিয়ে হৈচৈ হয়, যুদ্ধংদেহী কথাবার্তাও শোনা যায়। কিন্তু বাঙালী যা হারিয়েছে তার ক্ষত কি পুরন হবে কখনো?
৫। ১৯৮১এর তিরিশে মে। যে সামরিক নৃশংশতায় মুক্তিযুদ্ধকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দেয়া রনাঙ্গনের সেই বিখ্যাত মেজরকে ঝাঁঝরা করা হোল তা বড়ই বেদনাদায়ক ছিল। আমরা জাতির স্থপতিকে হারালাম এক নৃশংশ হত্যাযজ্ঞের কালিমালিপ্ত আয়োজনে। তেমনি করে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর ঘোষনা পাঠের রনাঙ্গনের বীর সিপাহশালারকে আমরা হারালাম একই অমানবিক নৃশংশতায়। এ নিয়েও অনেক কথা, অনেক গল্প বাজারে চালু রয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন মত ও পথের আলোকে তার ব্যাখ্যা বিশ্লেষন চলছে। বাংলার মহান নেতা এবং সোনার বাংলা বিনির্মানের স্বপ্নদ্রষ্টাকে হারিয়ে আমরা যেমন এতিম হলাম তেমনি মুক্তিযুদ্ধের অকুতোভয় বীর সেনানী ও সফল রাষ্ট্র নায়ককে হারিয়ে আমরা দিকভ্রান্ত হলাম।
৬। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ একজন নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে একজন ধুর্ত সেনাপতি যে কায়দায় গদিচ্যুত করেছিলেন তা ছিল গত শতাব্দীর সবচেয়ে মিরাক্যাল ঘটনা। লক্ষ্যনীয়, প্রেসিডেন্ট জিয়া হত্যার একবছরের মধ্যেই সেই 'অজুহাতের ক্ষমতা বদল' মানুষ নীরবে দেখেছিল। এ নিয়ে টুকরো টুকরো কথা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুরাফেরা করে বাংলার শহর বন্দর গ্রামে। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে পাকিস্তান ফেরত একজন জেনারেলের সদ্য স্বাধীন দেশে ক্ষমতার সর্বোচ্চ দন্ডে আহরনের কেচ্ছা-কাহিনী জনপদে ভিন্ন ভিন্ন মত ও পথে লিপিবদ্ধ হয়েছে। বাঙালীয়ানার চেতনা সমৃদ্ধ হয়ে টিকে থাকার সেসব দিনগুলি বড় করুন ও কাতরতায় ভরা ছিল।
৭। শুধুমাত্র ক্ষমতা প্রাপ্তির লক্ষ্যেই আমাদের রাজনীতির এতসব গালভরা বুলি। এসবের সফল মঞ্চায়ন হয় ১৯৯৬ এর প্রথম ভাগে। যাদের চেহারা চোখ চামড়ায় শুধু এবং শুধুই স্বাধীনতা বিরোধী, যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা অপরাধীর সীল লাগানো সেই তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে স্বাধীনতার নেতৃত্ব দেয়া দলটির দেশে গনতন্ত্র বাস্তবায়নের সেই মহা আয়োজনের কেয়ার টেকার বাস্তবায়নের চমক বাঙালী দেখেছে। তারই পরম্পরায় বহমান ঘটনার আজকের অসহিষ্ণু রাজনীতির রঙ বাঙালী দেখছে। এ এক আজিব ঘুর্ণিচক্র। ইতিহাস পুনরাবৃত্তির পরাগায়ন বললেও ভুল হবে না।
৮। ২০০৬-৭ এর গোলযোগপুর্ন সময়গুলি, তার পটভূমি, মাসের পর মাস সরকারী সচিবালয় সংলগ্ন এবং প্রেস ক্লাব ও জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার সামনে রাস্তার উপর স্টেজ বানিয়ে জনতার মঞ্চের সেই গনতন্ত্র গনতন্ত্র খেলার ফসলে সৃষ্ট এক এগারোর সামরিক মিশ্রিত কেয়ার টেকার কাহিনী। এক অদ্ভুতুড়ে সরকার ব্যবস্থায় দেশের গনতন্ত্র ও রাজনৈতিক চেহারার ভজকট অবস্থা। গল্প কাহিনী কথামালার শেষ নেই ওইসকল দিনগুলিকে নিয়ে। প্রশাসন যন্ত্রকে ধ্বংস করার সেই নিকষ কাল ঘটনাগুলির ফল এখন চুড়ান্তভাবেই ভোগ করছি আমরা।
৯। ২০১৪ এর সাধারন নির্বাচনকে ঘিরে দেশব্যাপী রাজনৈতিক অরাজকতা ও জ্বালাও পোড়াও এর সেইসব বিভিষিকার দিনগুলি। সরকারী ক্ষমতার শক্ত ভিত তৈরী এবং প্রশাসন ও মিডিয়ার কাঁধে ভর করে একটি পক্ষকে সন্ত্রাসী বোমাবাজ তকমা লাগিয়ে বিনা ভোটের নির্বাচনে সরকার গঠনের কাহিনী। তৎপরবর্তী ২০১৯ এর সাধারন নির্বাচনে দিনের ভোট রাতেই সম্পন্ন করে নিজেদের পক্ষে ফল ঘোষনার নির্লজ্জ নাটক মঞ্চায়ন। গনতন্ত্র ও রাজনীতির এ নাটকের পুন:মঞ্চায়ন কিংবা সেই মঞ্চ ভাঙ্গার আয়োজন, এখনকার সময়ের তাজা খবর। দেশ পরিচালনা, গনতন্ত্রের গতিবিধি এবং রাজনীতির হাল হকিকতের উপরিল্লিখিত ঘটনাপুঞ্জে লুকিয়ে আছে অযুত সহস্র প্রশ্ন। সেসব জিগ্যাসার ঘুর্নাবর্তেই আমরা এখনো ঘুরপাক খাচ্ছি। এ যাত্রার শেষ কোথায় তা আমাদের জানা নেই।
১০। কিছু অসাধারন ঘটনা/দুর্ঘটনা এই বাংলার পঞ্চাশ বছরের আয়ুষ্কালে ঘটেছে যা সামাজিক দুর্দশা, ব্যবসায়িক ক্ষয়ক্ষতি এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোগত পয়স্তির বড় কারন বটে। যেমন ধরুন সদ্য স্বাধীন দেশে রপ্তানী ক্ষেত্রের সবচেয়ে বড় স্টেক হোল্ডার ছিল পাট। লক্ষ্য করা গেছে সে সময় নিয়মিত ভাবেই বড় বড় পাটের গুদামগুলিতে আগুন লেগে পুড়ে ছাই হয়ে যেত। ফলে এই ব্যবসায় একটা মন্দা গতির সূত্রপাত ঘটে। দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ উৎপন্নকারী ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আগুনে পুড়ে ধ্বংস হওয়ার ঘটনা। রপ্তানীকারী বড় বড় গার্মেন্টস শিল্পে আগুনে ছাই হওয়ার কাহিনী। এমনকি মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে আগুন লাগার কাহিনীও জনপদে ভিন্নমাত্রার গল্পগুজব সৃষ্টি করে। এছাড়া মাঝেমধ্যে ঠুনকো অজুহাতে এই জনপদের সংখ্যা লঘিষ্টদের উপর অযাচিত দমন উৎপীড়নের ঘটনাগুলিও অযুত সহস্র প্রশ্নের জন্ম দিয়ে সমাজে অসন্তোষের বীজ বপন করে রেখেছে। তবে ইদানীংকার ঘটে যাওয়া আইন শৃংখলা বাহিনীর বিডিআর হত্যার দুর্ঘটনা নিয়ে ছোটবড় গল্পকথা রূপকথার মত মানুষের মুখে মুখে ফিরে। এতগুলো সেনা অফিসার হত্যায় আন্ত:রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের গন্ধও খুঁজেন অনেকে। সাম্প্রতিক সময়ের বাংলা বাজারের অগ্নি বিভৎসতাও নাকি ঘটানো ঘটনা বলে মানুষের মনে জিগাসা চিহ্ন এঁকে দিয়েছে।
তবে যা কিছুই ঘটুক না কেন, সবকিছুর মূলে রয়েছে ক্ষমতা প্রাপ্তি, সংরক্ষন ও দীর্ঘায়িত করার এক অতি সাবধানী নীলনক্সা। যেটার লালন করতে গিয়ে সহস্রবর্ষ ধরে ক্ষুদ্র রাজন্যবর্গ যেমন নিজেদের হাত কাল করেছেন তেমনি এই উপমহাদেশের পাল, সেন, মোঘল, সুলতান, বৃটিশ এমনকি লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীও তাতে হাত পাকিয়েছেন। আর সহস্র বর্ষ ধরে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা ও দুর্ঘটনার মাসুল দিয়েছেন ভূখন্ড বেষ্টিত জনপদের সাধারন জনগন।
স্বাধীন সার্বভৌম বাঙালীর বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ঘটনা বা দুর্ঘটনার ফালনামায় এখনও ইতিহাস তৈরীর হালখাতায় অমোচনীয় কালির আঁচড় পড়েনি বিধায় সেসব নিয়ে কেচ্ছা কাহিনী ও গাল গল্পের শেষ নেই। যে যার মত করে গল্প কেচ্ছা কাহিনী রচনা করে বিখ্যাত হচ্ছেন। অনেকে এসব লেখালেখি করে পার্টিজ্যান রাজনীতির শসনের এই দেশে পুরস্কার সম্মমনাও পাচ্ছেন। তবে ইতিহাস ট্রেন লাইনের সরল গতিকেই অনুসরন ক'রে বিধায় সময়ের ক্ষন গননায় তা সঠিক মূল্যায়নে ক্যানভাসে উঠে আসবে - এটাই নির্মম সত্য।