ঘুরে দাড়াচ্ছে দেশের প্রথম কুমিরের খামার,অন্তরালে ব্যবস্হাপনা পরিচালক এনাম হক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৫ অক্টোবর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ১০:৪৩ এএম, ২৫ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
ব্যবস্হাপনা পরিচালক এনাম হকের কঠোর পরিশ্রম, সততা, আন্তরিকতা, নিষ্টা ও সঠিক কর্মপরিকল্পনার পাশাপাশি দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করার মাধ্যমে ময়মনসিংহের ভালুকায় দেশের প্রথম কুমির খামার ‘রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড’ ঘুরে দাড়াতে শুরু করেছে। নানা প্রতিকুলতার মধ্যদিয়েও ব্যবস্হাপনা পরিষদ বিশেষ করে ব্যবস্হাপনা পরিচালক এনাম হকের সরজমিনে উপস্হিতিতি, কঠোর শ্রম ও নজরদারিতে ক্রমান্বয়ে আশার আলো দেখাচ্ছে এই খামারটি।
এনাম হক আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন কুমির বিশেষজ্ঞ। ৪ দশকের ও বেশী সময় ধরে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী । সেখানে রয়েছে মাল্টি মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা। কিন্তু দেশের টানে কুমির নিয়ে কাজ করার নেশায় হাল ধরছেন ময়মনসিংহের ভালুকায় রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেডের। এইতো সেই দিনের খাবারে অভাবে মারা পড়ছিলো একের পর এক কুমির। খাদ্য অভাবে মারা যাওয়া কুমিরকে প্রতিনিয়ত মাটিচাপা দেওয়া হচ্ছিল । অথচ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও চীনে কুমিরের মাংসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। খামারে কর্মকর্তা কর্মচারিদের বেতন ভাতা ও বকেয়া পড়ে ছিলো বেশ কিছু সময়ের। বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছিলেন তারা । চাকুরী ছেড়ে দিয়েছিলো অনেকে । ব্যবস্হাপনা পরিচালক দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমে কুমিরের খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। তারপর করেছেন কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতার ব্যবস্থা। এরপরে হাত দিয়েছেন খামারটিকে কিভাবে স্বাবলম্বী করা যায়। সেই পরিকল্পনায় খামারটিকে বিভিন্ন জাতের ৭০০০ হাজার গাছ লাগিয়েছেন। যার মধ্যে ৬০০০ হাজার ফলজ এবং ১০০০ ঔষধী গাছ। অব্যহৃত জায়গায় মৎস চাষ ও সৌন্দর্য বন্ধন জন্য ৫টি পুকুর খনন করেছেন। সম্প্রতি ১৭১০ কুমিরের ডিম থেকে প্রায় ১০০০টি কুমিরিরের বাচ্চা উৎপাদন করা হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন নতুন বাচ্চা কুমিরগুলো বড় হলে সেগুলো রপ্তানী করা সম্ভব হবে।
খামারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনাম হক বলেন, কুমির চাষ লাভজনক। তবে এর জন্য প্রয়োজন বড় বিনিয়োগ ও সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন। চাষের জন্য খনন করা পুকুরগুলোর তলদেশ পাকা করতে হয়েছে। চারপাশে তিন ফুট ইটের ওপর তিন ফুট কাঁটাতারের বেষ্টনী। প্রাকৃতিক পরিবেশে কুমির পালন ও বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করার জন্য ৪০ প্রজাতির ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছ লাগানো হয়েছে। লাগানো হয়েছে বিভিন্ন জাতের ফুল ও ঘাস। খাবার হিসেবে দেওয়া হয় মাছ ও মাংস। প্রাপ্তবয়স্ক কুমিরের বেলায় সপ্তাহে একদিন খাবার দেওয়া হয়। তিনি বলেন, কুমিরের গড় আয়ু ১০০ বছরের ও অধিক।
এ ছাড়া খামারটিকে দেশী বিদেশী পর্যটকদের কাছে আকর্ষনীয় করতে ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। শিগগির ট্যুরিজম ব্যবস্থা চালু হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীতে এমন কোনো কুমিরের খামার নেই যে তারা এককভাবে কুমির চাষ করে লাভবান হয়।“আমি বিশ্বের অনেক দেশ ঘুরেছি, দেখেছি কুমির চাষকে ঘিরে তাদের ট্যুরিজম বাণিজ্য কিভাবে আকর্ষনীয় হয়েছে। ফার্মের সঙ্গে ট্যুরিজম থাকবে এটাই স্বাভাবিক।কিন্তু একমাত্র ব্যতিক্রম হচ্ছে ভালুকা। আমরা যেহেতু ব্যাংকের কালো তালিকাভুক্ত কোম্পানি, তাই আমরা ব্যাংক কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। আমাদের টার্গেট হলো যত দ্রুত সম্ভব ট্যুরিজম চালু করা।
স্থানীয় অনেকেই প্রায়ই খামারে ঘুরতে আসেন কৌতুহলবশত। তাদের মতে এই কুমিরের খামার পর্যটনের একটি আকর্ষনীয় কেন্দ্র হতে পারে। আর পর্যটন খাতের থেকে আয়কৃত অর্থ দিয়ে হতে পারে কুমিরগুলোর লালন পালনের খরচের ব্যবস্থা। এভাবে আন্তর্জাতিক মানের একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ খামার খোদ বাংলাদেশেই পরিচালিত হতে পারে এমনটাই মনে করছেন এনাম হক।
অস্ট্রেলয়ার মতো উন্নত দেশের আয়েশী জীবন যাপন বাদ দিয়ে কুমিরের খামারে দিন রাত কঠোর পরিশ্রমের কারন জানতে চাইলে তিনি জানান “ আমি গ্রামের ছেলে, প্রবাসে থাকলে বাংলাদেশেই হচ্ছে আমার আসল ঠিকানা। দেশের জন্য, মানুষের জন্য কিছু করার তাগিদে কাজ করে যাচ্ছি। আমার এই পরিশ্রমের ফলে যদি কিছু মানুষের জীবিকা নিশ্চিত হয়, বিনিয়োগকারীরা তাদের কষ্টর্জিত অর্থ যদি মুনাফাসহ ফেরত পায়, দেশের যদি কিছু বৈদেশিক মুদ্রা আসে , সর্বোপরি প্রতিষ্ঠান টিকে গেলে আমার পরিশ্রম সার্থক হবে।