বাংলাদেশে অর্ধহারে অনাহারে দিন কাটছে অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক ম্যালকম আরনল্ডের
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২ জুলাই,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ১২:৫০ এএম, ২৫ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
সাউথ অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা ম্যালকম আর্নল্ড, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীর আমন্ত্রণে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাস নিয়ে বই লিখতে ২০০১ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন । এসময় তারা সুন্দরবন ভ্রমণে গেলে মোংলায় ওয়ার্ল্ড ভিশন এনজিওতে কর্মরত হালিমা বেগমের সঙ্গে আর্নল্ডের পরিচয় হয়। সাত-আটদিন পর তারা বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়াতে ফিরে যান। কিন্তু তিনি নিয়মিত অস্ট্রেলিয়া থেকে হালিমার কাছে চিঠি লিখতেন।কিন্তু হালিমা ইংরেজি না জানায় সবসময় তার চিঠির উত্তর দেয়া সম্ভব হতো না। তবে হালিমা বুঝতে পারতো সে তাকে ভালোবাসে। এর মধ্যে ২০০৩ সালে হালিমার জরায়ু ক্যান্সার ধরা পড়ে। হালিমা তখন বাধ্য হয়ে চিঠির মাধ্যমে তাকে তার অসুস্থতার কথা জানায়। হালিমার অসুস্থতার খবর জানার পর সে ২০০৩ সালের শেষের দিকে ম্যালকম বাংলাদেশে আসেন এবং নিজ খরচে হালিমাকে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে তোলেন । হালিমা সুস্থ হয়ে উঠলে তিনি তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। হালিমাও বিয়ের প্রস্তাবে রাজী হয়। বিয়ের পর খুলনায় বসবাস শুরু করেন এই দম্পতি এবং দীর্ঘ ১৮ বছর খুলনার সোনাডাঙ্গায় ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছেন তারা।
স্বামী পরিত্যক্তা হালিমা সে যাত্রায় নতুন জীবন পেলেও বাংলাদেশে থাকার মূল্য দিয়ে প্রায় নিঃস্ব হয়েছেন ম্যালকম আরনল্ড। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া ফিরেছিলেন থিতু হতে। কিন্তু হালিমার জন্যই আবার ফিরতে হয়েছে বাংলাদেশে।এ দেশের নোনা মাটি কাদায় অভ্যস্ত হালিমার মেয়েটি তো রূপসার পাড়ে থাকে। এরপর সে বাংলাদেশে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। সেজন্য জন্মভূমি অস্ট্রেলিয়ায় থাকা সহায়-সম্পদ বিক্রি করে চলে আসেন খুলনায়। কিন্তু খুলনায় বন্ধু বেশী এক প্রতারকের খপ্পরে পড়ে সরল মনের ম্যালকম বাড়ী বিক্রির অধিকাংশ অর্থ হারান।তারপর ও ছবি বিক্রির আয় দিয়ে স্বচ্ছল ভাবে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন।কিন্তু করোনার কারণে তার ছবি বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। আস্তে আস্তে জমানো অর্থ শেষ। ফলে এখন সংসার চালানোর পাশাপাশি চিকিৎসা করানোরমতো অর্থ নেই।ফলে বৃদ্ধ বয়সে এসে জীবনের দাম চড়া সুদে দিতে হচ্ছে দুজনকে। ইতিম্যধ্যে তা ম্যালকমের'র হার্টে ব্লক ধরা পড়েছে, ঠিক মতো দাঁড়াতে ও হাঁটতেও পারেন না। ডায়াবেটিস,হাড় ক্ষয়, হৃদ্রোগ প্রায় অচল করে দিয়েছে ম্যালকম আরনল্ডকে। হাতটা অচল বলে আর তুলিতে রং লাগে না। উঠে আসে না বাংলাদেশের মানুষের মুখ, খুলনা শহরে রূপসা ঘাটের পাশে দেখা শীতের চাদরে ঢাকা মানুষের দৃশ্য। আগের ছবিগুলোও অবিক্রীত অবস্থায় রয়েছে ঘরে।
অন্যদিকে অর্থাভাবে তার চিকিৎসা হচ্ছে না, দিতে পারছেন না বাড়ি ভাড়া। এমনকি ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়াও হচ্ছে না। বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর ব্যাক্তি উদ্যোগে কিছু সহয়তা পাওয়া গেলে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য।ইচ্ছা করলেই ফিরতে পারেন অস্ট্রেলিয়াতে। পেতে পারেন অবসরকালীন ভাতা ও চিকিৎসা সেবা। কিন্তু তিনি জানান, বাংলাদেশকে আমার দ্বিতীয় জন্মভূমি বা মাতৃভূমি মনে হয়। দেশের মানুষ, প্রকৃতিও সবুজের সমারোহ আর মানুষের আন্তরিকতায় তিনি মুগ্ধ। তিনি বলেন,যতই দিন যাচ্ছে ততই এদেশের প্রতি আমার ভালোবাসা ও ভালোলাগা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীর অনেক দেশ সম্পর্কে আমার ধারণা আছে। কিন্তু এদেশের মানুষের মত আপন করে নেয়ার ক্ষমতা ও আতিথেয়তা কোথাও পাওয়া যায় না। যতদিন বাঁচবেন, বাংলাদেশেই থাকতে চান তিনি।তবে তার ভিসার মেয়াদ আছে ২০২৫ সাল পর্যন্ত। বাংলাদেশের ক্রিকেটের ওপর নিয়ে ম্যালকমের লেখা বইয়ের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তার স্ত্রী হালিমা বলেন, বিয়ের পর ম্যালকম তার কাঙ্ক্ষিত বইয়েরকাজ শেষ করেন। প্রকাশের জন্য ঢাকার একটি পাবলিকেশনে বইয়ের পাণ্ডুলিপি জমা দেওয়া হয়।তবে বইটি এখনও প্রকাশিত হয়নি। ম্যালকম জানান তা জীবনের একটা ইচ্ছা হলো,বাংলাদেশের ক্রিকেটের ওপর তার অপ্রকাশিত গ্রন্থটি প্রকাশ করা।
অস্ট্রেলিয়াতে প্রায় এক লক্ষ বাংলাদেশীর বসবাস। জরুরী প্রয়োজনে এদেশে চাইলে প্রায় সব ধরনের সহযোগীতা আমারা পেয়ে থাকি। উন্নত ও নিরাপদ জীবনের আশায় আমরা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে ছেড়ে এসে প্রায় সকলে অস্ট্রেলিয়াকে স্হায়ী আবাস গড়ে তুলেছি। সেই দেশেরই একজন নাগরিক জীবনের শেষ বেলায় এসে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবেসে বিনা চিকিৎসায়, অর্ধহারে, অনহারে দিনযাপন করে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে পারে না দেশপ্রেম আর মানুষের প্রতি ভালোবাসার অসংখ্য দৃষ্টান্তকে সামনে রেখে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সকলের কাছে আমাদের বিনম্র চিত্তে সবিনয় অনুরোধ , আসুন আমরা এই অসহায় মানুষটির পাশে দাঁড়াই। যার পক্ষে যতটুকু সম্ভব। দলমত নির্বিশেষে যার যার সাধ্য মতো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই। আসুন আমরা আরেক বার প্রমান করি বাংলাদেশ বাংলাদেশের এবং মানুষকে ভালোবেসে ম্যালকম আর্নল্ড কোন ভুল করেনি।