রেপটাইলস ফার্মঃ রপ্তানি ও পর্যটনের বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনার হাতছানি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৫ মে,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৩২ এএম, ২৫ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
কুমিরের নাম শুনলেই ভয়ে আমাদের অনেকেরই গাঁ শিউরে ওঠে। ভয়ঙ্কর উভচর প্রাণীটিকে ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক এই । কিন্তু এই ভয়ঙ্কর প্রাণীটিকেই চাষ করে মানুষ আয় করছে বিপুল পরিমান অর্থ। প্রাণীটিকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলছে ব্যবসা কেন্দ্র। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে কুমিরের মাংস ও চামড়া অত্যন্ত মূল্যবান বলে এবং কুমিরের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাণিজ্যিকভাবে কুমির চাষ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশেও রয়েছে কুমিরের বেশ কয়েকটি খামার। এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো রেপটাইলস ফার্ম লিঃ যা ভালুকা কুমির খামার নামে বেশি পরিচিত।ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে ভালুকার ভরাডোবা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির পাশ দিয়ে বামে বাঁক নিলে উথরা বাজার। ২০০৪ সালের মাঝামঝিতে ব্যক্তি উদ্যোগে ১৫ একর জায়গায় বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয় রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেডের নামে এই কুমিরের প্রকল্প। ঐ বছরের ২২ ডিসেম্বর মালয়েশিয়া থেকে প্রায় সোয়া কোটি টাকা ব্যয়ে আনা হয় ৭৫টি কুমির। যার মধ্যে ছিল ১৫টি পুরুষ কুমির।
কুমিরগুলোকে বিশেষভাবে তৈরি পুকুরে ছেড়ে দেশীয় আবহাওয়ায় লালনপালনে মানানসই করে তোলা হয়। প্রথমদিকে আবহাওয়া ও পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে গিয়ে ৫ থেকে ৭টি ব্রিডার কুমির মারা যায়। এসব কুমিরদের বাঁচিয়ে রাখা, ডিম পাড়া, ডিম সংরক্ষণ এবং তা থেকে বাচ্চা ফোটানোসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংশয় দেখা দিলেও অল্পদিনের মধ্যে আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে ওঠে। ২০১০ সালে জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বপ্রথম ৬৯টি হিমায়িত কুমির রফতানি করা হয়। ২০১৪, ২০১৫, ২০১৬, ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে জাপানে মোট ১ হাজার ৫০৭টি কুমিরের চামড়া রফতানি করা হয়েছে। বর্তমানে এই ফার্মে কুমিরের সংখ্যা ছোট বড় মিলিয়ে আড়াই হাজারের মতো।
খামারের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বিশিষ্ট কুমির বিশেষজ্ঞ এনাম হক বলেন, কুমির নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এটি একটি শান্ত প্রানী, তাকে বিরক্ত না করলে সে কারোর কোন ক্ষতি করে না।এছাড়া কুমির চাষ খুবই লাভজনক। তবে এর জন্য প্রয়োজন বড় বিনিয়োগ ও সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন। চাষের জন্য খনন করা পুকুরগুলোর তলদেশ পাকা করতে হয়েছে। চারপাশে তিন ফুট ইটের ওপর তিন ফুট কাঁটাতারের বেষ্টনী। প্রাকৃতিক পরিবেশে কুমির পালন ও বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করার জন্য ৪০ প্রজাতির ছয় হাজার ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছ লাগানো হয়েছে। লাগানো হয়েছে কৃত্রিম ঘাসও। খাবার হিসেবে দেওয়া হয় মাছ ও মাংস। প্রাপ্তবয়স্ক কুমিরের বেলায় সপ্তাহে একদিন খাবার দেওয়া হয়। তিনি বলে, কুমিরের গড় আয়ু ১০০ বছর। ডিম নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম।
তিনি আরো বলেন, কুমির ব্যবসা ঝুঁকিমুক্ত। দেশে ইতোমধ্যে দুটি কুমির খামার গড়ে উঠেছে। তবে ব্যবসায়ীরা যদি বিনিয়োগ করে রাতারাতি মুনাফা চান তাহলে এ ব্যবসায় সুবিধা করতে পারবেন না। বেশি পুঁজি খাটিয়ে ব্যবসায় লেগে থাকতে হবে।
তিনি কুমিরের এই খামারটিকে একটি ব্যতিক্রমী পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যাশা কথা জানান, উখিয়া সদর থেকে কুমিরের খামারটি খুবই কাছে হওয়ায় অনেক দর্শনার্থী এখানে আসেন। মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশকে ঘিরে পর্যটনের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। এ জন্য একটি মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়ে দ্রুত কাজ করতে হবে, যাতে দেশি–বিদেশি পর্যটকেরা বেশি করে আকৃষ্ট হন। তবে পর্যটন হিসেবে খামারকে উন্মুক্ত করার আগে কুমিরের প্রজনন স্বাস্থ্য, ডিম পাড়ার সময়ে কোলাহলমুক্ত পরিবেশ রাখা, তার সাথে দর্শনার্থী ও কুমিরের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সিসিটিভিসহ নানারকম নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহনের বিষয়টি তুলে ধরেন। স্বল্প পরিসরে হলে আগামী মৌসুম থেকে খামারে পর্যটন চালুর কথা জানান তিনি।
এনাম হক আরো জানান, খামারের জন্য নিযুক্ত ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়মিত কার্যবিবরনী উপস্থাপনের মাধ্যমে সকল বিষয়ের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করছে। সঠিক ব্যবস্হাপনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় এই খামারটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম উৎস হতে পারে এবং অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে ।