প্রকৃত বিশ্বনেতা কোথায়
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ১১:০৬ এএম, ২৭ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
প্রিয় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ, আপনারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ দেশের দিকে তাকান। ১০ বছর করে চলে যান একশ বছর পেছনে। তাকিয়ে দেখেন, গত একশ বছরে আপনার দেশে প্রকৃতির কী কী পরিবর্তন হয়েছে। কতটুকু বনভূমি উজাড় হয়েছে, এর সঙ্গে কী কী প্রাণের বিলুপ্তি ঘটেছে, নতুন করে কী পরিমাণ শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। ভালো করে তাকিয়ে দেখুন, আপনার দেশের বাতাস, মাটি ও পানিতে কী পরিমাণ দূষণ হয়েছে। আরও ভালো করে তাকিয়ে দেখুন, মানবতাসহ মানুষের সামগ্রিক মূল্যবোধে কী পরিমাণ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আপনারা দেখুন, আজ মিথ্যা কতটা সহজলভ্য হয়ে উঠেছে! দিন দিন অস্থিরতার সঙ্গে অসহনশীলতার দাপট বেড়ে যাচ্ছে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে!
প্রিয় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ, করোনার প্রায় দুই বছর হতে চলল। এ সময়ে বিশ্বে ব্যাপক প্রাণহানি থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিক- সব পর্যায়েই বিশ্বজুড়ে বিপর্যয় নেমে এসেছে। ইন্টারনেটের তথ্য হিসাবেই পৃথিবীতে করোনা মহামারিতে ৪৫ লাখের মতো মানুষ মারা গেছে এবং দায়িত্বশীল সূত্রের দাবিমতে, মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা উল্লিখিত সংখ্যার দ্বিগুণও হতে পারে। কিন্তু করোনা নিয়ন্ত্রণে বিশ্বব্যাপী সামগ্রিক কোনো দিকনির্দেশনা পাওয়া যাচ্ছে না, সাধারণ মানুষ হয়ে গেছে অসহায় ও দিক্ভ্রান্ত! হাতে গোনা কয়েকটি দেশে করোনা মোকাবিলায় সমন্বিত দক্ষতা দেখা গেলেও অধিকাংশ দেশেই করোনা মোকাবিলায় কার্যকর কোনো পদক্ষেপের কথা শোনা যাচ্ছে না। একই সঙ্গে ঘটেছে মানবতায় ভয়াবহ বিপর্যয়। বিশ্বব্যাপী শুরু হয়েছে এক ভিন্নধর্মী অরাজক পরিস্থিতি! চরম সমন্বয়হীনতা বিরাজ করছে রাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থায়! একই সঙ্গে চলছে জীবন রক্ষাকারী ভ্যাকসিন নিয়ে রাজনীতি ও ব্যবসা! বিশ্বের এই ক্রান্তিকালে মানুষের জীবন যখন ঝরে পড়ছে শীতের পাতার মতো, তখন আপনাদের সমন্বয়হীনতা সত্যিই চরম উদ্বেগের!
প্রিয় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ, আপনারা পুরো পৃথিবীর দিকে তাকান। ভালো করে তাকিয়ে দেখুন, নদীর পানিতে কতটা দূষণ এসেছে, বিশ্বব্যাপী কতগুলো নদী বিলীন হয়ে গেছে, কতটুকু বন উজাড় হয়েছে, বাতাসের তাপমাত্রা কতটা বেড়েছে, সামগ্রিকভাবে প্রকৃতিতে কতটা কেমিক্যাল দূষণ হয়েছে। আপনারা বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলে দেখুন, এসবের পরিবর্তনে পুরো বিশ্বে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। পরিবেশবাদীদের সঙ্গে বসুন, মন দিয়ে শুনুন ওরা কী বলে। প্রিয় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ, আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখুন, নির্মল আকাশে এই পৃথিবীটা সুন্দর এক নিলাভ মুক্ত, যা প্রাণের আবাসস্থল। অন্যভাবে বলতে গেলে খুব সুন্দর একটি মহাযান এই পৃথিবী, একটি মহাকাশযানের যেমন যত্নের প্রয়োজন আছে, ঠিক তেমনি এই পৃথিবীরও যত্নের প্রয়োজন আছে। এই পৃথিবীতে অফুরন্ত বলে কিছুই নেই। সুতরাং সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে গেলে একদিকে যেমন পৃথিবীর সবকিছুরই যত্ন নিতে হবে, অন্যদিকে পৃথিবীর সম্পদের ব্যবহারেও যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে।
প্রিয় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ, আপনারা ভেবে দেখুন, অস্ত্র ব্যবসার নামে ভাড়াটে যুদ্ধে আপনারা কাদের স্বার্থ রক্ষা করছেন! একদিকে একটি দেশের মানুষের জীবন যেমন বিপন্ন হয়ে উঠছে, তেমনি অন্য দেশের মানুষের প্রতি জেগে উঠছে অন্যদের চরম ঘৃণা। দুটোই মানবতার জন্য ভয়ানক এক হুমকি, ফলে বিশ্বব্যাপী বেড়ে যাচ্ছে অস্থিরতা। একুশ শতকের পৃথিবীতে মানুষকে উৎখাত করা হচ্ছে নিজের দেশ থেকে। নিজের দেশে জীবন-জীবিকার অভাবে, এমনকি প্রাণ রক্ষার্থেও মানুষ সাগর পাড়ি দিয়ে চলে যাচ্ছে অন্য দেশ। যে পৃথিবী প্রাণের আবাসস্থল, আজ সেই পৃথিবীতেই মানুষ প্রাণ বাঁচানোর তাড়নায় সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে সাগরে! মুক্ত চিন্তার নামে বিশেষ ধরনের চিন্তাকেই শুধু প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এতে করে অন্য মতবাদের লোকগুলো কোণঠাসা হয়ে পড়ছে, একই সঙ্গে তারা হয়ে যাচ্ছে অস্তিত্বহীন। অথচ আপনারা ভালো করেই জানেন, অস্তিত্বহীন মানুষ হচ্ছে সবচেয়ে ভয়ানক মারণাস্ত্র, আত্মঘাতী হামলাসহ যে কোনো ধরনের আঘাত করতে ওরা মরিয়া হয়ে ওঠে। ওদের লক্ষবস্তু আর কিছু নয়, সাধারণ মানুষের জীবন!
প্রিয় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ, আপনাদের সমন্বয়হীনতায় পৃথিবী দিন দিনই হয়ে উঠছে ব্যবসা কেন্দ্র, অথচ পৃথিবী ছিল সুন্দর একটি প্রাণকেন্দ্র! দিনে দিনেই সাধারণ মানুষের জীবন জিম্মি হয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের কাছে! একই সঙ্গে পৃথিবীতে দেখা যাচ্ছে শোষণ এবং অন্যদিকে বিত্তশালীদের ভোগবিলাসের চলছে মহোৎসব! সবচেয়ে দুর্ভাবনার এবং আতঙ্কের হলো বিশ্ববাজারে নারীকে এখনও পণ্য হিসেবে কিনতে পাওয়া যায়। যে নারীর গর্ভে মানুষের জন্ম, সেই নারী কখনও ব্যবসায়িক পণ্য হতে পারে না। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, বিশ্বব্যাপী কিছু কিছু নারীকে ব্যবহার করা হচ্ছে মানুষের বিকৃত মনোবাসনা পূরণের উপজীব্য হিসেবে। ইন্টারনেট ও মিডিয়া জগতের কারণে নারীকে ঘিরে বিকৃত বাসনা ছড়িয়ে যাচ্ছে বিশ্বব্যাপী! শিশু থেকে বৃদ্ধের অনেকেই এই বিকৃতির শিকার! বিশ্বব্যাপী সমাজগুলোতে দেখা যাচ্ছে নারীকে ঘিরে নানা অনাচার ও দুর্ঘটনা!
প্রিয় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ, আজ বিশ্বের অনেক দেশেই স্বাভাবিক মৃত্যুর অধিকার ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষ হয়ে যাচ্ছে অন্য মানুষের ব্যবসায়িক পণ্য, এতে ক্ষতিটা বরাবরই সামগ্রিক মানবতার! দায়িত্বজ্ঞানহীন স্বাধীনতার নামে নারী ও পুরুষ দুটো দলই হয়ে যাচ্ছে বিভ্রান্ত। ইন্টারনেট ও মিডিয়া জগতের যথেচ্ছ ব্যবহারে মানসিক ও শারীরিক বিকৃতি ছড়িয়ে যাচ্ছে দিন দিন। ফলে বিশ্বব্যাপী দেখা যাচ্ছে নারী-পুরুষের সম্মিলিত শারীরিক ও মানসিক অপরাধ প্রবণতা, নারী বা পুরুষ কেউই যেন কারোর কাছে নিরাপদ নয়! অন্যদিকে যথার্থ স্বাস্থ্য জ্ঞানের অভাবে মানুষ জড়িয়ে যাচ্ছে অনিরাপদ খাদ্যাভ্যাসে। বিশ্বের মধ্যে স্থূলতা নামে নতুন একটি মহামারি খুবই আসন্ন হয়ে পড়েছে। এখানেও ব্যবসায়ী মহলসহ মিডিয়া এবং ইন্টারনেট ভীষণভাবে দায়ী।
প্রিয় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ, একটি মহলের স্বার্থ রক্ষায় মাদক ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সব ধরনের অপরাধ। একই সঙ্গে পৃথিবীটা হয়ে যাচ্ছে অস্ত্র ও অবৈধ অস্ত্রের পাইকারি বাজার! শিক্ষার অভাব ও অর্থলিপ্সার সঙ্গে যখন মানসিক ভারসাম্যহীনতা যোগ হয়, তখন একটি অস্ত্রই হয়ে ওঠে মানবতার জন্য চরম হুমকি ও বিশ্বের অনেক দেশকেই প্রতিনিয়ত এর খেসারত দিতে হচ্ছে। দিন দিন বিশ্বব্যাপী চোরাচালান যেন বৈধতা পেয়ে যাচ্ছে, এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সীমান্ত হত্যা। কিন্তু কোনো মৃত্যুই যেন আমাদের মনে দাগ কাটছে না। অথচ অস্বাভাবিক একটি মৃত্যুই মানবতার ভিত নাড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট হওয়ার কথা ছিল।
প্রিয় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ, আপনারা শুধু আপনাদের দেশের নেতা নন। আপনারা সবাই পৃথিবী নামক মহাকাশযানের এক-একজন দিকনির্দেশক। আপনাদের অভিজ্ঞতা, আপনাদের স্বতন্ত্রতায়, আপনাদের চিন্তায় পুরো বিশ্ববাসীকে আবার জাগিয়ে তুলুন। পানি, মাটি, বাতাস সর্বোপরি প্রকৃতির দূষণের দিকে সমন্বিত নজর দিতে হবে সবার আগে। পৃথিবীর মাটি, পানি, বাতাস, বন, পাহাড় সবকিছুর দূষণমুক্ত করতে সবাইকে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে। প্রকৃতির ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার আগ পর্যন্ত মানুষসহ সব ধরনের প্রাণ হুমকির সম্মুখীন। উদ্ভিদ ও প্রাণের আবাসস্থল এই পৃথিবীকে আরও সুন্দর অবস্থায় নিয়ে যেতে বিশ্বব্যাপী সমন্বিত উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই।
প্রিয় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ, এই পৃথিবী ক্রমেই মানুষসহ অনেক প্রাণের বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ মানুষের ভেতর প্রকৃত শিক্ষার অভাব। শিক্ষা হলো তাই, যা দিয়ে মানুষ নিজেকে প্রকৃতির অংশ ভাবতে পারে এবং প্রকৃতির যত্ন নিয়েই ওর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাঁচতে পারে।
প্রিয় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ, বর্তমান প্রেক্ষাপটে দুটো বিষয়ে যুগপৎ সচেষ্ট হতে হবে। এক. মানুষকে যথার্থ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। দুই. প্রকৃতির ভারসাম্যের দিকে নজর দিতে হবে। গত শতাব্দীতে পৃথিবীর তাপমাত্রা কতটা বেড়েছে, এর সঙ্গে মানুষের তৈরি কী কী কারণ জড়িত, তা খুঁজে বের করতে বিজ্ঞানী এবং পরিবেশবাদীদের সঙ্গে বসুন। পৃথিবীর তাপমাত্রার সঙ্গে জলবায়ুসহ ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, হারিকেন সম্পর্কটা ভালোভাবে পর্যালোচনা করা দরকার, কারণ প্রতিটির সঙ্গেই জড়িত আছে মানুষসহ অন্য প্রাণের ক্ষতি, একই সঙ্গে সম্পদের ক্ষতি। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু, নদী, বন, মরুভূমি সবকিছুর দিকে একসঙ্গে তাকাতে হবে। প্লাস্টিকসহ অন্যান্য ক্ষতিকর বর্জ্যের দিকেও নজর দিতে হবে। একদিকে এগুলোর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, অন্যদিকে এর ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি রক্ষার্থে সব ধরনের চেষ্টায় বৈশ্বিক সমন্বয় দরকার। সেইসঙ্গে সব প্রাণিকুলেরও যত্ন নিতে হবে। তবে অন্য প্রাণীদের ক্ষেত্রে যত্ন বলতে ওদের জন্য নির্ধারিত আবাসের ব্যবস্থা রাখলেই চলে। ভারসাম্যপূর্ণ মানুষের বেঁচে থাকার জন্য ওদের যত্ন বা আবাস নিশ্চিত করা খুবই জরুরি!
প্রিয় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ, সাধারণের মধ্যে শিক্ষার বোধ জাগিয়ে তুলুন। তাদের বুঝতে দিন, আপনারাই শুধু বিশ্বের নেতা নন, এই বিশ্বের প্রতিটি মানুষই এক-একজন বিশ্বনেতা। বিশ্বনেতা মানেই ক্ষমতার প্রয়োগ আর ক্ষমতার অপ্রয়োগ নয়। সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিন, আপনাদের নিজের জীবন এবং নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে, বিশ্বনেতা মানেই পৃথিবীর যত্ন নেওয়া, বিশ্বনেতা মানেই মানুষের সঙ্গে সব প্রাণ এবং উদ্ভিদ, অর্থাৎ পুরো প্রকৃতির যত্ন নেওয়া। আপনারা আলোকিত হয়ে উঠুন, বিশ্ববাসীকে আলোকিত করে জাগিয়ে তুলুন।
প্রিয় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ, এই পৃথিবীর সব বন, নদী, পাহাড়- এগুলোকে সম্মিলিতভাবে বিশ্বের সম্পদ বলে বিবেচিত করতে হবে। এসবের রক্ষণাবেক্ষণসহ নিয়মিত পর্যবেক্ষণের আওতায় আনতে হবে। নারী ও পুরুষ সবার সম্মানের দিকে নজর দিতে হবে। সুন্দর এবং সুস্থ জীবনের জন্য স্বাস্থ্য সচেতনতার সঙ্গে পৃথিবীব্যাপী স্বাস্থ্যকর খাবারের জোগান নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষাসহ সব ধরনের মৌলিক অধিকার মানুষের নিজের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। যে অস্থিরতার কারণে মানুষ নিজের দেশেই যেমন অসহায়, তেমনি অন্যদের জন্য যেন আতঙ্ক না হয়ে উঠতে পারে, তার দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই পৃথিবীটা সবার, অন্যের স্বস্তি নিশ্চিত করে সুন্দরভাবে বাঁচার অধিকার প্রতিটি মানুষেরই আছে।
প্রিয় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ, নিজ নিজ দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সচেষ্ট হোন। সমন্বয়ের সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত সম্পদ ব্যবহারেও সচেষ্ট হতে হবে। চোরাচালান এবং মাদকের ব্যাপারে সম্মিলিতভাবে কঠোর হতে হবে। যে করেই হোক, সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই সুন্দর পৃথিবীটা কোনো যুদ্ধক্ষেত্র নয়, কোনো ব্যবসায়িক কেন্দ্র নয়, এই সুন্দর পৃথিবীটা হলো প্রাণের আবাসস্থল! আগামী একশ বছরের মধ্যে এর প্রাকৃতিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার জন্য সম্মিলিত উদ্যোগের এটাই সময়। প্রকৃতির যে দূষণ এবং ক্ষতি একশ বছর বা এরও বেশি সময় ধরে হয়েছে, এই দূষণ এবং ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার সহজ এবং দ্রুত কোনো পদক্ষেপ ফলপ্রসূ হবে না। দরকার বৈশ্বিক উদ্যোগ।
পৃথিবীর সব প্রাকৃতিক সম্পদ এবং শিল্পকারখানার অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার রোধ করতে হবে। অস্ত্রসহ প্রাণ ও প্রকৃতির প্রতি হুমকি হতে পারে এমন কেমিক্যাল উৎপাদনে কঠোর বিধিনিষেধ দরকার। একই সঙ্গে কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণেও অনুরূপ কঠোরতা সময়ের দাবী হয়ে উঠছে। হাইডোইলেকট্রিসিটির নামে বিশ্বের বড় বড় নদীতে বাঁধ বৃদ্ধি করে আঞ্চলিক ভারসাম্যে যে বিরূপ প্রভাব, তা যথাসম্ভব কমিয়ে আনার দিকে জোর দিতে হবে। এগুলোর জন্য সীমান্তের কাঁটাতার উপেক্ষা করে আপনাদের হতে হবে বিশ্বনেতা! একই সঙ্গে নিজ নিজ দেশের প্রতিটি মানুষের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে হবে দায়িত্ববোধ এবং আশার আলো, তারাও যেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশ্বনেতার দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
প্রিয় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ, এই করোনা মহামারি মোকাবিলায় আপনাদের হতে হবে সমন্বিত। প্রতিটি মানুষই এই বিশ্বের সম্পদ, পৃথিবীর ভারসাম্যে, তথা, রাষ্ট্র, সমাজ এবং পারিবারিক পরিমণ্ডলে প্রতিটি মানুষেরই সুনির্দিষ্ট ভূমিকা আছে। অন্তত এই করোনা মহামারির সময়ে আপনারা একতাবদ্ধ হয়ে উঠুন, প্রতিটি মানুষের জীবনের একই রকম গুরুত্ব দিয়ে করোনার ভ্যাকসিনসহ যে কোনো ধরনের করোনা চিকিৎসা বিশ্বব্যাপী সাধারণ মানুষের নাগালে আনতে আপনারা সচেষ্ট হোন! ব্যবসা, রাজনীতি এবং সীমান্তের কাঁটাতার উপেক্ষা করে আপনারা হয়ে উঠুন বিশ্ব মানবতার নেতা! প্রিয় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ, আপনারা আকাশের দিকে তাকান। রাতের আকাশে দেখবেন, অনেক অনেক জ্বলজ্বলে তারা। সূর্যের মতো এই নক্ষত্রগুলো জ্বলছে জীবনের তাড়নায়, কারণ আলোর মাঝেই রয়ে গেছে জীবনের বার্তা। আপনারও হয়ে উঠুন আকাশের জ্বলজ্বলে তারা, আপনাদের সমন্বিত দিকনির্দেশনার আলোতে যেন বিশ্ববাসী থেকে পুরো প্রকৃতি আশার আলো দেখতে পায়।
আশা করছি, আপনাদের সম্মিলিত উদ্যোগে অচিরেই পৃথিবীতে প্রাণ হয়ে উঠবে স্বতঃস্ম্ফূর্ত, দূষণ থেকে মুক্তি পেয়ে প্রকৃতি ফিরে পাবে তার পুরোনো জৌলুস। আর শিক্ষার আলোতে প্রতিটি মানুষই হয়ে উঠবে এক-একজন সহনশীল এবং মানবিক বিশ্বনেতা!