সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি গ্রামে হওয়ায় নগরে বাড়ছে দারিদ্র্য
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৩০ মার্চ,বৃহস্পতিবার,২০২৩ | আপডেট: ১০:১৮ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
গতকাল রাজধানীতে ‘সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির নীতিগত সংস্কার সম্পর্কিত পলিসি কনফারেন্স’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি গ্রামভিত্তিক হওয়ায় নগরে বাড়ছে দারিদ্র্য। যা প্রমাণ করে আমাদের কাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। বক্তারা বলেন, সরকারে কর্মসূচিগুলোতে বরাদ্দ বেড়েছে ঠিকই তবে বণ্টনে তথ্যের অভিগম্যতা, সঠিক সুবিধাভোগী নির্বাচন এবং মনিটরিং ব্যবস্থায় চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
সিরডাপ মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন ওয়েভ ফাউন্ডেশন। খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। সম্মানিত আলোচক ছিলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক শারমিন্দ নিলোর্মী এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক কানিজ ফাতেমা।
রাশেদ খান মেনন এমপি বলেন, ‘সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির যে সমস্যাগুলো তার মূলে রয়েছে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিগত সমস্যা। এছাড়া কর্মসূচির যথাযথ বাস্তবায়নে সঠিক যে তথ্য-উপাত্ত দরকার তার জন্য বিবিএসের ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা কমাতে হবে।’ ড. মাহফুজ কবীর বলেন, ‘সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি গ্রামভিত্তিক হওয়ায় নগরে দারিদ্র্য বাড়ছে। যা প্রমাণ করে আমাদের কাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। সরকারের কর্মসূচিগুলোতে বরাদ্দ বেড়েছে ঠিকই, তবে বণ্টনে তথ্যের অভিগম্যতা, সঠিক সুবিধাভোগী নির্বাচন এবং মনিটরিং ব্যবস্থায় আমাদের চ্যালেঞ্জ রয়েছে।’ ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী বলেন, সঠিকভাবে সুবিধাভোগী নির্বাচনে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কর্মসূচির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে ডাটাবেস তৈরি, বণ্টন ব্যবস্থার পর্যবেক্ষণ এবং এনএসএসএস-এর সামগ্রিক কার্যক্রমের সমন্বয়ক হিসেবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব প্রদানের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ড. আসিফ শাহান বলেন, বর্তমান জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থা নানাবিধ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। জাতীয় বাজেটের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এ খাতে ব্যয় করা হলেও কর্মসূচিসমূহের প্রকৃত প্রভাব প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির উত্তরণে এনএসএসএস নিঃসন্দেহে ভালো কৌশল। তবে কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগীদের বাছাই প্রক্রিয়া সুষ্ঠু নয়। এছাড়া সুবিধাসমূহ বণ্টনে অনিয়ম ও অপব্যবহার রয়েছে। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির অধীনে বাস্তবায়নাধীন এসব কার্যক্রমের যথাযথ মনিটরিং হয় না; পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়ের পরে উপকারভোগীদের অবস্থার মূল্যায়ন এবং মূল্যায়নের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী পরিকল্পনা প্রণয়নেরও তেমন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো বা ব্যবস্থা নেই। ফলে কত মানুষের দারিদ্র্য অবস্থার উন্নয়ন হলো বা হলো না, তারও কোনো যথাযথ বা সঠিক পরিসংখ্যান নেই।
সভাপতির বক্তব্যে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর টেকসই উন্নয়ন এবং মানব-মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। একই সঙ্গে এ বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মমুখী দক্ষতা উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে। যার মাধ্যমে সমাজে বৈষম্য কমে আসবে এবং ভারসাম্য তৈরি হবে।