ডিজিটালাইজেশনের বিরূপ প্রভাবে নেই সচেতনতা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৭:০৫ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২০ | আপডেট: ১১:০৩ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
ছুরি দিয়ে যেমন ফল কাটা যায় তেমনি খুন করা যায় মানুষও। পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে যেমন দেশকে রক্ষা করা যায় শত্রুর হাত থেকে, আবার ধ্বংসও করা যায়। ছুরি থেকে পারমাণবিক অস্ত্র, সবকিছুই বিজ্ঞানের ডিজিটালাইজেশনের ফল। সারা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে ডিজিটাল হয়েছে বাংলাদেশ। ডিজিটাইলেশনের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি, স্বাস্থ সেবা, নাগরিক সেবা সহ সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা সহজতর হয়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের নাগরিক সেবা সহজতর হলেও ক্ষতির মুখে আছে দেশের তরুণ সমাজ। ল্যাপটপ, স্মার্টফোন সহ বিভিন্ন বিনোদনমূলক ডিভাইসের সহজলভ্যতায় শিশুদের হাতেও এখন এই ক্ষতিকারক অস্ত্র। শুরুতেই বলা হয়েছে সবকিছুরই ভালো খারাপ দুই দিকে আছে। এসব ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে যেমন অনলাইন ক্লাস, পড়াশুনা, সুস্থ বিনোদন ইত্যাদি করা যায় তেমনি রয়েছে এর ভয়ংকর ক্ষতিকর রূপ।
ডিজিটালাইজেশনের যুগে শিশুরা জন্মের পরেই নাচ, গান ইত্যাদির মত অসুস্থ বিনোদন দেখে অভ্যস্থ হয়ে পড়ে। অভিভাবকরা সন্তান খাওয়ানোর কৌশল হিসেবে স্মার্টফোন, ট্যাব কিংবা স্মার্ট টেলিভিশনে নাচ, গান দেখিয়ে অভ্যস্থ করে ফেলে। সন্তানের ভালোবাসার মায়াজালে হাতে তুলে দিচ্ছে এসব ইলেকট্রনিক ডিভাইস। কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখছে এর কীরূপ প্রভাব পড়বে সন্তানের উপর?
গবেষণায় দেখা গেছে, স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারে শারীরিক ও মানসিক নানা সমস্যায় পড়ছেন ব্যবহারকারীরা। স্মার্টফোনের সব সময় ঠিক জায়গায় আছে কিনা ভয় থেকে মনের মধ্যে জন্ম নেয় এক সমস্যা। গবেষকেরা স্মার্টফোন হারানোর এই ভয়জনিত অসুখের নাম দিয়েছেন ‘নোমোফোবিয়া’; যার পুরো নাম ‘নো মোবাইল-ফোন ফোবিয়া’।
এছাড়াও চক্ষু বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারে দৃষ্টি বৈকল্য সৃষ্টি হতে পারে। এতে করে মায়োপিয়া বা ক্ষীণ দৃষ্টির সমস্যা দেখা দিতে পারে। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা সাধারণত চোখ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার দূরত্ব রেখে তা ব্যবহার করেন। তবে, অনেকের ক্ষেত্রে এ দূরত্ব মাত্র ১৮ সেন্টিমিটার। চোখের খুব কাছে রেখে অতিরিক্ত সময় ধরে স্মার্টফোন ব্যবহার করলে জিনগত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ, ডেস্কটপের অতিরিক্ত ব্যবহার ও অতিরিক্ত টেলিভিশন দেখার ফলে সবচে বেশি দেখা দেয় ঘুম জনিত সমস্যা। ঘুমাতে যাওয়ার আগে এ ধরনের ডিভাইসের অতিমাত্রায় ব্যবহারের করেন শরীরে মেলাটোনিনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এর প্রভাবে ঘুমের মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয় এবং মানসিক বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। এছাড়া হতে পারে ক্যানসারও।
বাংলাদেশে বর্তমানে বিশেষ করে শিশু থেকে তরুণ সমাজের মধ্যে এই সমস্যাগুলো পরীলক্ষিত হয়। এই ব্যাপারে উদাসীন অভিভাবকরাও। সন্তানের খুশির কথা ভেবে হাতে তুলে দেয়া ইলেকট্রনিক ডিভাইস কতটা ক্ষতিকারক তা সম্পর্কে সচেতন নয় অভিভাবকরা। ডিজিটালাইজেশনের ক্ষতিকারক প্রভাবের অসংখ্য বাস্তব উদাহরণ রয়েছে আমাদের দেশে। অপরদিকে এর সুফলও রয়েছে অসংখ্য। তাই আমাদের ডিজিটালাইজেশনের ভালো দিক গ্রহণ করে খারাপ দিক বর্জন করতে হবে।
বাংলাদেশ সরকার এই বিষয়ে নানান কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। সচেতানতা মূলক বিজ্ঞাপন প্রচারের পাশাপাশি হচ্ছে নানান কর্মশালা। তবুও ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বের হতে পারছে না তরুণ সমাজ। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যবহার করছে এসব ইলেকট্রনিক ডিভাইস। তাই প্রত্যেক নাগরিকের উচিত নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হওয়া এবং অন্যকে সচেতন করা।
উৎসঃ বাংলা ইনসাইডার