avertisements 2

পথবিড়ালদের জন্য একজন মনু!

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৭ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০২:৫৩ পিএম, ৩ মে,শুক্রবার,২০২৪

Text

খাবার খেয়ে প্যাকেট রাস্তায় ফেলে গিয়েছিল কেউ। খিদে মেটাতে সেই কাগজের প্যাকেটটিই চিবিয়ে খাচ্ছিল একটি পথবিড়াল। টমটমে করে যাওয়ার সময় সেই ক্ষুধাতুর বিড়ালটি চোখে পড়ে রফিকুল ইসলাম ওরফে মনুর। তবে অন্যদের মতো মুখ ফিরিয়ে নেননি তিনি।

বিড়ালটির মুখে খাবার তুলে দিতে তখনই টমটম থেকে নেমে পড়েন মনু। সেটা প্রায় ১৪ বছর আগের কথা। তার পর থেকে প্রতিদিন নিয়ম করে তার পলাশপুরের ভাড়া বাসার ছাদে সকাল-দুপুর-রাতে পথবিড়ালদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন মনু। একটি-দুটি নয়, প্রতিদিন অন্তত ৭০টি পথবিড়ালের জন্য হোটেল থেকে খাবার কিনে তাদের খাওয়ান মনু। এ কাজে সঙ্গ দেন তার স্ত্রী।

তবে মনুর এই পথচলা সহজ ছিল না। একবার স্থানীয় প্রভাবশালীদের তোপের মুখেও পড়তে হয়েছিল। মনু বলেন, ‘একবার একজন অভিযোগ তোলেন, আমার জন্য বিড়াল তাকে জ্বালাচ্ছে, এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। একদিন এ নিয়ে তিনি রাস্তায় লোকও জড়ো করে ফেলেন। ’ অনেকটা আক্ষেপের স্বরেই মনু বলেন, ‘মানবতা থেকেও যে মানুষ কিছু করতে পারে, এটা এখনো অনেকে ভাবতে পারেন না। ’

মনুর ছাদে একদিন

আয়েশি ভঙ্গিতে তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে বিড়ালগুলো। তাদের মুখে খাবার তুলে দিতে পেরে আনন্দিত মনুও। বরিশাল নগরীর র্কীতনখোলা নদীতীরের পলাশপুর এলাকায় মনুর ভাড়া বাসার ছাদে এই দৃশ্য রোজকার। দৃশ্য দেখে অভ্যস্ত আশপাশের মানুষও। বিড়ালের জন্য প্রতিদিনই সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে নানা পদের খাবার নিয়ে হাজির হন মনু। তার জন্য ছাদে অপেক্ষায় থাকে আশপাশের বিড়ালগুলো।  

প্রতিদিন দুপুরে রফিক হোটেল থেকে বিড়ালদের জন্য খাবার কিনে আনেন মনু। ভাতের পাশাপাশি খাবারের মেন্যুতে থাকে মাছ, মাংস বা অন্য খাবার। প্রতি বেলায় গড়ে ২০ থেকে ২৫টি বিড়ালকে খাওয়ান মনু। বিড়ালগুলোকে কালুয়া, অজানা, পুসি, সাদা, মিনু, টুনু–এ রকম নানা নামে ডাকেন।

ষাটোর্ধ্ব মনুর বিড়ালের প্রতি ভালোবাসার শুরু ছোটবেলা থেকেই। তিনি বলেন, ‘আমার একটি মেয়ে আছে। তার বিয়ে হয়েছে। স্বামীসহ যুক্তরাজ্যে থাকে। স্ত্রী সমাজসেবক। বিড়ালদের তিন বেলার খাবার খাইয়েই আমার সময় চলে যায়। সন্তানের মতো করেই বিড়ালগুলোকে ভালোবাসি। স্ত্রী সময় পেলেই সহায়তা করে। আমরা যে বিড়ালগুলোকে খাওয়াই, সেগুলো পথের। পর্যাপ্ত খাবার পায় না। তাই তিন বেলা পালা করে আমাদের ছাদে খেতে আসে। ওদের নিজেদের মধ্যেও বেশ মিল আছে। ’

শুধু খাবার নয়, যত্নও নেন

অনেক সময় পথের বিড়ালদের বিভিন্ন ব্যক্তি তাড়া করেন, আঘাত করেন। আবার নিজেদের মধ্যে মারামারি করে আঘাত পেয়ে কখনো মারাত্মক ক্ষত তৈরি হয়। তখন বাড়ি থেকে তেল-হলুদসহ ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিংবা বাজার থেকে আনা মলম ব্যবহারে তাদের সুস্থ করে তোলেন মনু।

রফিকুল ইসলাম ওরফে মনু জানান, সব বিড়ালেরই খাবার দরকার, যত্ন আর ভালোবাসা দরকার। তাকে কেন্দ্র করে এই বিড়ালগুলো খেতে পাচ্ছে, এটা দেখে তার খুব ভালো লাগে। ‘ওদের জন্য মায়া জন্মে গেছে। ওরাও আমাদের চিনতে পারে, বুঝতে পারে। ভালোবাসলে, ভালোবাসা তো ফেরত পাওয়াই যায়’, বললেন মনু।

মনুর ইচ্ছে

নিজের কোনো জায়গা-জমি নেই, অন্যের বাসায় ভাড়া থাকেন। সরকার অনেক গরিব মানুষকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর করে দিচ্ছে। তাকেও যদি একটি ঘর দেওয়া হয়, তাহলে তিনি বিড়ালগুলো ওই বাড়িতে রাখবেন। তবে শহর থেকে গ্রামে যেতে চান না। কারণ শহরে বেশি পথপ্রাণি থাকে। এ অবস্থায় যদি কোনো হৃদয়বান প্রাণিপ্রেমী কিংবা প্রতিষ্ঠান তার সহায়তায় এগিয়ে  আসেন, তিনি তা সানন্দে গ্রহণ করবেন।

স্থানীয় সাংবাদিক শামীম আহমেদ বলেন, প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি দেখছেন, রফিকুল ইসলাম বিড়ালগুলোকে খাওয়ান। প্রাণীর প্রতি তাদের যে এই ভালোবাসার অনুভব, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। পশুপ্রেমী রফিকুল ইসলামের উদ্যোগ মনে করিয়ে দেয় স্বামী বিবেকানন্দের ‘সখার প্রতি’ কবিতার বহুল পঠিত দুটি লাইন—‘বহুরূপে সম্মুখে তোমার, ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর? জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর। ’

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2