avertisements 2

এমপি পংকজকে ‘ঠেকাতে’ পারিবারিক কমিটি

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৩ মার্চ,শুক্রবার,২০২৩ | আপডেট: ০৮:৫১ এএম, ২৩ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২৪

Text

স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশের সঙ্গে বিরোধের জেরে গত ১১ সেপ্টেম্বর দলীয় পদ হারান বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পংকজ নাথ। ওই সময় জেলা আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে তাঁর বিরোধী পক্ষে অবস্থান নেয়।  জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যসহ সব পদ হারিয়ে পংকজ এখন নির্বাচনী এলাকায় নীরব। তবে তাঁর বিরোধীরা আছেন দাপুটে অবস্থানে। গত নভেম্বরে এমপিকে আমন্ত্রণ না জানিয়েই সংসদীয় আসনভুক্ত হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা এবং কাজীরহাট থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলন করেন তাঁরা। মাসখানেক আগে এসব কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে। তবে অভিযোগ উঠেছে, পংকজের বিরুদ্ধে অবস্থান পাকাপোক্ত করতে তিন কমিটিতেই ‘পারিবারিক আওয়ামী লীগ’ করা হয়েছে। সমকালের অনুসন্ধানেও গুরুত্বপূর্ণ পদে একই পরিবারের একাধিক সদস্য থাকার সত্যতা মিলেছে।

মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র কামাল উদ্দিন খান এবার সভাপতি হয়েছেন। তাঁর পরিবারের চার সদস্য পদ পেয়েছেন কমিটিতে। তাঁরা হলেন– ভাই নিজাম উদ্দিন খান উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ছেলে রিয়াদ খান সহ-প্রচার সম্পাদক, ভাতিজা আশরাফ উদ্দিন মেনু দপ্তর সম্পাদক ও বেয়াই মাহেব হোসেন (আগের কমিটির সভাপতি) পেয়েছেন সদস্য পদ। সাধারণ সম্পাদক শাহাব আহমেদের চাচাতো ভাই সুলতান উদ্দিন আহমেদ বাসেত ও নিকটাত্মীয় সৈয়দ মনির পেয়েছেন সদস্য পদ। উপজেলা কমিটির ১ নম্বর সদস্য হয়েছেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ। তিনি শাহাব আহমেদের বোন।

এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে একই পরিবারের একাধিক সদস্য রয়েছেন। দুই সহোদর আব্দুল জব্বার কানন সহসভাপতি এবং আব্দুর মোতালেব জাহাঙ্গীর হয়েছেন সাংগঠনিক সম্পাদক। আরেক সহসভাপতি আব্দুল মকিম তালুকদারের ছোট ভাই খবির তালুকদার পেয়েছেন সদস্য পদ। তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সাগর ও মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আফরোজা কবির স্বামী-স্ত্রী। যুগ্ম সম্পাদক জামাল মোল্লা ও সদস্য বেল্লাল মোল্লা ভাই।

এ বিষয়ে চরগোপালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সামসুল বারী মনির বলেন, ‘উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে ’৯৬-এর অসহযোগ আন্দোলনে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি। ঈদের নামাজের মাঠ থেকে গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছি। এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদও পাই না, অথচ আমার নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগের সম্পাদকীয় পদের নেতারা পেয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ পদ। আমার মতো আরও অনেকের অপরাধ– আমরা এমপি পংকজ নাথকে সমর্থন করি।’ মনিরের অভিযোগ, ইউনিয়ন কমিটিগুলোও একইভাবে গঠন করার প্রক্রিয়া চলছে।

তবে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কামাল উদ্দিন খান বলেন, ‘যোগ্যদের পদ দেওয়া হয়েছে। যোগ্য ব্যক্তি আত্মীয় হলে সেটা আমার অপরাধ হতে পারে না।’

হিজলা উপজেলার নবগঠিত কমিটিতে প্রায় একযুগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ টিপুই রয়েছেন। তাঁর ছোট দুই ভাই আলতাফ মাহমুদ দীপু যুগ্ম সম্পাদক এবং সদস্য পদ পেয়েছেন তালাত মাহমুদ নিপু। যুগ্ম সম্পাদক ফারুক সরদার ও প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাসান মাহমুদ মৃধা ওই তিন ভাইয়ের স্বজন। সদস্য সুভাষ ঘোষ সভাপতি টিপুর দ্বিতীয় স্ত্রীর ভাই। এ ছাড়া সহসভাপতি নজরুল ইসলাম মিলনের সঙ্গেও টিপুর পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে।

সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন হাওলাদারের চার স্বজনও পেয়েছেন পদ। ভাই মাসুদ হাওলাদার তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, ভাইয়ের দুই শ্বশুর শাহাদাত হোসেন ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও তসলিম মাঝি সদস্য এবং ভগ্নিপতি সিদ্দিকুর রহমান রাঢ়ী পেয়েছেন সদস্য পদ।
এ বিষয়ে সভাপতি সুলতান মাহমুদ টিপু বলেন, ২০১২ সালের কমিটি সামান্য কিছু পরিবর্তন করে অনুমোদন দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। আগের কমিটিতেও আমার পরিবারের লোকজন ছিল। সবাই নিজ যোগ্যতায় পদ পেয়েছেন। সামনে জাতীয় নির্বাচন। তাই জেলা আওয়ামী লীগ দেখেশুনে কমিটি অনুমোদন দিয়েছে।

মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার অন্তর্ভুক্ত কাজিরহাট থানা কমিটিতেও একই অবস্থা। এখানে সভাপতি আব্দুল জব্বার খানের ভগ্নিপতি আব্দুল কাদের খান সহসভাপতি হয়েছেন। এ ছাড়া জব্বারের ছেলে সমশের জাকারিয়া যুগ্ম-সম্পাদক, জামাতা তানিম মাহমুদ কোষাধ্যক্ষ, ভাই আবুল বাশার খান সহ-দপ্তর সম্পাদক, দুই ভাই মকবুল মাস্টার ও রহিম খান সদস্য, ভাতিজা সাইদুল ইসলাম খান কৃষি ও সমবায় সম্পাদক, দুই স্বজন আলী আহসান আইনবিষয়ক সম্পাদক ও মোতালেব মাস্টার শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক। এ ছাড়া সদস্য হানিফ সিকদার, ডা. এসকান্দার, ফারুক তালুকদার, গিয়াস উদ্দিন সরদার, বজলুর রহমান খান, আব্দুল খালেক খান সভাপতির নিকটাত্মীয়।

সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর মিয়ার দুই ভাই ইকবাল হোসেন নিপু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ও জুয়েল আহম্মেদ সদস্য হয়েছেন। আরেক সদস্য আহসান হাবীব তোতা তাঁর চাচা।

কাজীরহাট থানা সভাপতি জব্বার খান বলেন, ‘এখানে আমার আত্মীয়স্বজনই আওয়ামী লীগ করে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর সঙ্গে আলোচনা করেই তাঁদের কমিটিতে রাখা হয়েছে। বড় কর্মসূচি অথবা ঝামেলা হলে আত্মীয়ের বাইরে কেউ পাশে থাকে না। তাই তাঁদের রাখাটাই শ্রেয় মনে করেছি।’

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2