মুমিন কখনো হতাশ হয় না
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৬ নভেম্বর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:০০ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
অবশ্যই বিশ্বাসীরা সফল হয়েছে। (সুরা মুমিনুন : আয়াত ০১)। আপনি একজন মুমিন, একজন ঈমানদার , একজন আল্লাহপ্রেমী মানুষ, কখনোই হতাশ হতে পারে না। হতাশা মুমিনের সাথে যায় না।সবসময় আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে, তাঁর করুণা, দয়া এবং স্নেহের যে আলোকধারা মুমিনের ওপর বর্ষিত হচ্ছে, তা থেকে আপনি (মুমিন) কীভাবে নিরাশ হবেন? ইহকালিন ব্যর্থতা, পরাজয়ে আপনার কী আসে যায়, বলুন? আল্লাহর ওপর নির্ভর করে, তারা হতাশ হয় না। দুনিয়ার অপূর্ণতা তাদের আঘাত দেয় না। বরং তারা প্রতিক্ষার প্রহর গােনে মহা সফলতার। সেই সফলতা, যার ওয়াদা দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআ’লা। আপনার আত্মা যখন আল্লাহর ভরসায় পরিপূর্ণ তখন সিজদায় গিয়ে বলুন- হে আল্লাহ আমি আমার নিজের উপর জুলুম করেছি আমাকে তোমার রহমত থেকে নিরাশ করোনা-(হে নবী,) বলে দাও, হে আমার বান্দারা যারা নিজের আত্মার ওপর জুলুম করেছো আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (আয-যুমার : আয়াত ৫৩)।
আল্লাহ তাআ’লা তাঁর সৃষ্টি এ মহাবিশ্বকে বানিয়েছেন একটা বিশাল পরিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে, আল্লাহ তাআ’লা কুরআনে বলেন- আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব ভয়, ক্ষুধা এবং তােমাদের) জানমাল ও ফসলাদির ক্ষয়ক্ষতির মাধ্যমে। আর ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন। (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৫)। মুমিনদের জন্য পরিক্ষা আসবেই যে পরিক্ষা থেকে বাদ পরেননি কোনো নবী ও রাসূলগন ।আমরা যদি শিশু নবী মূসা (আ.) জীবনী দেখি জন্মের পর তার মাকে নির্দেশ করা হল তাকে যেন একটি বাক্সে ভরে ভাসিয়ে দেয়া হয়, পবিত্র কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী - আর আমি মুসার মায়ের নিকট এই মর্মে নির্দেশ পাঠালাম যে, তুমি তাকে দুধ পান করাও। অত:পর যখন তুমি তার ব্যাপারে আশঙ্কা করবে তখন তাকে নদীতে নিক্ষেপ করবে। (সুরা কাসাস : আয়াত ০৭)।
একদিকে ফিরাউন বাহিনী অন্য দিকে সন্তানকে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া এ যেন স্থলের সিংহের ভয়ে জলের কুমিরের মুখে সন্তানকে ঠেলে দেওয়ার মত কিছু। আমার/আপনার মনে যে ভয় তা কি মুসা আ. এর মায়ের মনে উদয় হয়নি? হয়েছে তবে তাকে হতাশা কিংবা ভয় গ্রাস করতে পারেনি তিনি আল্লাহ তাআলা’র উপর পরিপূর্ণ ভরসা করেছেন,তখন আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করলেন- আর একদম ভয় করবে না এবং চিন্তাও করবে না। নিশ্চয়ই আমি তােমার। সন্তানকে তােমার নিকট ফিরিয়ে দেবো এবং তাকে রাসুলদের অন্তর্ভুক্ত করব। (সুরা কাসাস : আয়াত ০৭)।
আবার আমরা যদি মানবতার মুক্তির দূত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) এর দিকে তাকাই তার তিন তিনটি পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করেছিল কিন্তু কেউ এ ধরনীর বুকে ছিলনা সবাইকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিয়ে গিয়েছিলেন, তিনি তো হতাশ হন নি, যে মক্কা বাসী তাকে আল-আমিন উপাধি দিয়েছিল তারাই তো তাকে সিহাবে আবু তালিবে বন্দি রেখেছিল তিন তিনটি বছর, তাদের জুলুম নির্যাতন এতটাই তীব্র ছিল যে শেষ পর্যন্ত সহ্য করতে না পেরে আল্লাহর হুকুমে জন্ম ভূমি থেকে হিজরত করতে হয়েছিল, তারপরে ও তো তিনি হতাশ হননি, আমরা যদি মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম আ.এর দিকে তাকাই আমরা দেখতে পাই তিনি আল্লাহ তাআলা’র দরবারে দোয়া করলেন-’হে আমার প্রভু! আমাকে এক সৎ ছেলে সন্তান দান করুন।’ (সুরা সাফফাত : আয়াত ১০০)। তখন আল্লাহ তায়ালা তাকে সুসংবাদ দিলেন-’সুতরাং আমি তাকে এক সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দান করলাম।’ (সুরা সাফফাত : আয়াত ১০১)।
যার নাম হযরত ইসমাইল (আ.) প্রাণাধিক প্রিয় পুত্র সন্তান যখন তার সাথে চলা ফেরার বয়সে উপনীত হল, তখন তাকে কুরবানী করার নির্দেশ করা হল, তিনি হতাশ হননি, বরং তিনি রবের উপর ভরসা করে পুত্র ইসমাইল কে স্বপ্নের কথা বললেন, তখন ইসমাইল আ.বললেন আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে তা পালন করুন আল্লাহর ইচ্ছায় আমাকে সহনশীল পাবেন- অতপর যখন সে পিতার সঙ্গে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হল, তখন ইবরাহিম তাকে বলল, হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে জবেহ করছি। এখন তোমার অভিমত কি? সে (ইসমাইল) বলল, হে পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি আমাকে সবরকারী (সহনশীল) পাবেন।’ (সুরা সাফফাত : আয়াত ১০২)।
পিতা পুত্রের কেউত হতাশ হয়নি বরং তারা রবের উপর ভরসা করে আল্লাহ তাআ’লাকে রাজি খুশি করার জন্য পুত্র ইসমাইল কে জবেহ করার জন্য শয়িত করেন, তখন আল্লাহ বলেন-’তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে! আমি এভাবেই সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।’ ’নিশ্চয় এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা।’ (সুরা সাফফাত : আয়াত ১০৫-১০৬)। হযরত জাকারিয়া আ. এর ঘটনা আমাদের সবারই জানা আছে। তিনি মারইয়াম আ. এর দায়িত্বে ছিলেন। তিনি যখনই মারইয়ামের কক্ষে প্রবেশ করতেন তখনই তাঁর নিকট বে-মৌসুমের বিরল খাদ্য দ্রব্য দেখতে পেতেন। তিনি জিজ্ঞেস করতেনঃ হে মারইয়াম, এসব তুমি কোথায় পেলে? তিনি বলতেন, এসব আল্লাহর নিকট থেকে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবনোপকরণ দান করেন। (সূরা আলে ইমরান আয়াত -৩৭)।
তখন পর্যন্ত জাকারিয়া আ. কোন সন্তান ছিল না তিনি মনে মনে ভাবলেন আর বললেন যে আল্লাহ বে-মৌসুমে ফল দিতে পারে সে আল্লাহ বৃদ্ধ বয়সে আমাকে সন্তান ও দিতে পারবেন তখন তিনি হতাশ না হয়ে দোয়া করলেন, হে আমার পালনকর্তা! তোমার কাছ থেকে আমাকে পুত-পবিত্র সন্তান দান কর। নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী।’ (সুরা ইমরান : আয়াত ৩৮)। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার উপর ভরসা করে তাঁর (আল্লাহ) কাছে চাইলে তিনি কাউকে কখনো হতাশ করেননা।
এমনকি ইবলিশ শয়তানকে যখন আল্লাহ তায়ালা চিরস্থায়ী জাহান্নামী হিসেবে ঘোষণা করলেন তখব ইবলিশ ও হতাশ হয়নি সে আল্লাহ তায়া’লার উপর পূর্ণ ভরসা রেখে আল্লাহ তায়া’লার কাছে চেয়েছিলেন তাকে যেন কিয়ামত পর্যন্ত হায়াত দেয়া হয়- আমাকে সেই দিন পর্যন্ত অবকাশ দাও যখন এদের সবাইকে পুনর্বার ওঠানো হবে-তিনি বললেন : তোকে অবকাশ দেয়া হলো। (আল-আরাফ:আয়াত: ১৪-১৫)। মানুষের শিরায় শিরায় যাওয়ার ক্ষমতা চাইলেন আল্লাহ তাকে তাও দিলেন মহানবী (সা.) বলেন, অবশ্যই শয়তান আদম সন্তানের শিরা-উপশিরায় বিচরণ করে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১২৮৮; সহিহ)।
সর্বশেষ বলতে বলা যায় দুনিয়া হলো মুমিনের জন্য কারাগার (সহীহ মুসলিম : ২৯৫৬)। সুতরাং কারাগার তো শান্তি কিংবা আরাম আয়েশের জায়গা না। এটা দুঃখ কষ্ট বেদনা যন্ত্রণার জায়গা।থাকা খাওয়ার কষ্ট, ভাল না লাগা প্রিয় মানুষ হারানোর যন্ত্রণা, নিজের স্বপ্ন গুলোকে বাস্তবায়ন করতে না পারার অসীম বেদনা, মনের গহিনে লুকাইত সুপ্ত যন্ত্রণা যা হয়তবা এ পৃথিবীর কেউ জানেনা।
অতএব যারা মুমিন আল্লাহর প্রকৃত মুমিন বান্দা তাদের জন্য তো দুনিয়া কারাগার। আর কারাগার মানেই তো দুঃখ আর কষ্টের জায়গা। মুমিনের জন্য দুনিয়াতে দুঃখ কষ্ট থাকবে এটাই স্বাভাবিক তবুও মুমিনে কখনো হতাশ হবে না। মুমিন এই সমস্যা গুলোকে সাথে নিয়েই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা’র উপর ভরসা করে হতাশ না হয়ে আমৃত্যু জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাবে, আর এটাই হল একজন প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য।