avertisements 2

কৃষক কাকার হজ ও বিস্ময়করভাবে কাবা শরিফে প্রবেশ

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৩ জুলাই, বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:০০ এএম, ২৩ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২৪

Text

আব্বার চাচাত ভাই সিদ্দিক মিয়া (ওরফে ছিদ্দু মিয়া)। আমরা ডাকি ছিদ্দু কাকা! হাসিটা সবসময় তার ঠোঁটেই থাকে। কথা বলার আগেই হাসেন। গ্রামের আর দশটা মানুষের চেয়ে তার সরলতা আরো বেশি। সাত-পাঁচে তিনি নেই। অন্যের জমি-জমায় কাজ করে কোনোভাবে সংসার চালান। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহর ও গ্রামের আশপাশের দু-চারটা বাজার ছাড়া কোথাও যাননি তিনি। এমনকি জীবনে দেখেননি ঢাকা শহরও!

কাকা একদিন স্বপ্ন দেখেন, তাবলীগ জামাতের আমির ও কারাইলের মুরব্বি মাওলানা আলী আকবর রহ:-এর সাথে চট্টগ্রামের পথে রওনা হয়েছেন। উদ্দেশ্য পানির জাহাজে করে হজে যাবেন! স্বপ্নেরঘোরে রঙ্গিন স্বপ্ন, মক্কা শরিফ যাচ্ছেন হাজির বেশে! যাবেন সোনার মদিনায়ও। কোনোরকম বাধা-বিপত্তি ছাড়াই পৌঁছে গেলেন চট্টগ্রাম বন্দরে। কিন্তু বিধিবাম; তাদের রেখে অনেক আগেই বন্দর ছেড়ে জাহাজ চলে গেছে সমুদ্র বুকে। অগত্যা ফিরে আসা ছাড়া কোনো উপায় না থাকায় বাড়ি চলে এলেন!

ঘুম ভেঙ্গে গেলো কাকার। আফসোস, হায়! জীবনে কোনো দিন মক্কা-মদিনায় যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হবে না, আহ! আল্লায় যদি স্বপ্নেই আমাকে কালো গেলাফের ‘কাবা’ আর সোনার মদিনার সবুজ গম্বুজের ‘রওজা’ দেখিয়ে দিতেন!

এককান দু’কান করে করে সবার মুখেই ছিদ্দু কাকার হজ ফেরতের কাহিনী। কে যেনো নাম দিলো তার ‘ফিরতি হাজি!’ এ নামেই তিনি প্রসিদ্ধি লাভ করলেন। হৃদয়পটে তার স্বপ্নের আভা। মদিনার সবুজ গম্বুজ আর মক্কার কালো গেলাফের কাবা!

কেটে গেলো বহু বছর। ১৯৯৪ সালে ৫৪ বছর বয়সে ছিদ্দু কাকার মাথায় চাপলো কাজের জন্য সৌদি আরব যাওয়ার বাসনা। ‘শেষ বয়সে বিদেশ করতে পারবা না’ এ বলে সবাই তাকে না যাওয়ার পরামর্শ দিলেন। তিনি নাছোড়বান্দা, যাবেনই। অবশেষে ভিটে-মাটি লিজ দিয়ে আরো কিছু ধার-দেনা করে ৬০ হাজার টাকায় ক্লিনার ভিসায় পাড়ি দিলেন সৌদি আরব। এক বছর কাজ করলেন মক্কার একটি হাসপাতালে। এরপর স্বপ্ন তার বাস্তবে এলো। বদলি হয়ে এলেন মসজিদে হারামের এক নম্বার গেট ‘বাব আব্দুল আজিজ’-এ।

আগে কাবা ছিলো তার বুকে, আর এখন তিনি কাবার বুকে! ১২টি বছর কাটিয়ে দিলেন এক নম্বর গেটেই। সাতবার হজ করলেন, ওমরাহ করলেন অসংখ্যবার। আর সুযোগ পেলেই চলে যেতেন মাতাফে, কাবার তাওয়াফে। আহ, কী ভাগ্য!

গ্রামীণ একটা প্রবাদ আছে, ‘আল্লায় যারে দেয়, ছাপ্পর ফাইড়া দেয়।’ ছিদ্দু কাকার বেলায় এ প্রবাদ অত্যুক্তি হবে না। কারণ, হজ মৌসুম শেষ এক সকালে ডিউটির সময় দেখেন হেরেমের কোনায় এক লোক অচেতন হয়ে পড়ে আছে। আরো দু’জনের সহযোগিতায় লোকটাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিলেন তিনি। জ্ঞান ফিরে এলে জানতে পারলেন ইনি সাধারণ কেউ নন। বায়তুল্লায় নিয়োজিত নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বিতীয় প্রধান অফিসার। গোপনে কর্মীদের নজরদারি করতে বের হয়ে হাইফু আক্রান্তে জ্ঞান হারিয়েছিলেন।

সুস্থ হয়ে বৃদ্ধ ছিদ্দু কাকার কাছে অফিসার জানতে চাইলেন, প্রতিদান কী চাও? বললেন, আমি আল্লার জন্য করেছি, কোনো প্রতিদান চাই না! অফিসার বললেন, আল্লাহ তোমাকে বড় প্রতিদান অবশ্যই দেবেন। আমি তোমাকে কিছু একটা দিতে চাই। বলো, কী চাও? কাকা কিছু চায় না! অফিসারের পিড়াপিড়িতে অবশেষে বললেন হজ নিয়ে তার স্বপ্ন কাহিনী। আরো বললেন, জীবনে কল্পনাও করিনি আমি তোমাদের দেশে আসবো, হজ করবো। আমার সব আশাই আল্লাহ পূরণ করেছেন! তবে কিছুদিন ধরে একটা নতুন স্বপ্ন মনের কোণে বার বার উঁকি দিচ্ছে। যদি ভরসা দাও বলতে পারি।

বলো তোমার নতুন স্বপ্ন? কাকা বললেন, ক’দিন ধরেই তো কাবা ঘরের ভেতর-বাইরে সংস্কার কাজ হচ্ছে এ ফাঁকে যদি তুমি আমাকে কাবার ভেতর যাওয়ার একটা সুযোগ করে দাও জীবনভর তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো। অবাক-বিস্ময়ে অফিসার তার দিকে চেয়ে থাকলেন! এ কী বলে বুড়ো? টাকা-পয়সা, সোনা-দানা কোনো কিছু না চেয়ে চাচ্ছে কাবা ঘরের ভেতর ঢোকার অনুমতি! আর এর ভেতরে তো নির্দিষ্ট ইউনিফরম ছাড়া কোনো শ্রমিক ঢুকতে পারে না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, ঠিক আছে কাল বাদ এশা ৭৯ নম্বর গেটে থাকবে। আমি প্রবেশের ব্যবস্থা করবো।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2