avertisements 2

মহানবী (সা.) যেভাবে বিজয়ের স্বাদ উপভোগ করেছেন

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৬ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:৪৮ এএম, ২৩ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২৪

Text

মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা মানুষের স্বভাবজাত বিষয়। তারা যত দূরেই যাক, মাতৃভূমির প্রতি এক অদৃশ্য টান তাদের মধ্যে থেকেই যায়। এই ভালোবাসা মহান আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন। আমাদের প্রিয়নবী (সা.)-ও তাঁর জন্মভূমিকে ভীষণ ভালোবাসতেন। 

জন্মভূমির প্রতি মহানবীর ভালোবাসা : আবদুল্লাহ ইবনে আদি ইবনে হামরাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে আমি মক্কার একটি ক্ষুদ্র টিলার ওপর দণ্ডায়মানরত দেখলাম। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর কসম! তুমি নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলার সব ভূমির মধ্যে সর্বোত্তম এবং আল্লাহ তাআলার কাছে তুমিই সবচেয়ে প্রিয়ভূমি। আমাকে যদি তোমার বুক থেকে (জোরপূর্বক) বিতাড়িত না করা হতো, তবে আমি কখনো (তোমায় ছেড়ে) চলে যেতাম না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৯২৫)

মাতৃভূমির কথা স্মরণ : মাতৃভূমির প্রতি অগাধ ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও মহানবী (সা.)-সহ তাঁর সাহাবিদের তাঁদেরই মাতৃভূমির লোকদের দ্বারা জুলুমের শিকার হয়ে নিজ এলাকা ত্যাগ করতে হয়েছিল। কিন্তু মাতৃভূমি থেকে দূরে গেলেও তার প্রতি তাঁদের ভালোবাসা মোটেও কমেনি; বরং দূর থেকে তাঁরা তাঁদের মাতৃভূমিকে স্মরণ করতেন।

রাসুল (সা.) বলেন, হে আল্লাহ, আপনি শায়বা ইবনে রাবিআ, উতবা ইবনে রাবিআ ও উমায়্যাহ ইবনে খালফের প্রতি অভিসম্পাত করুন; যেভাবে তাঁরা আমাদের মাতৃভূমি থেকে বের করে মহামারির দেশে ঠেলে দিয়েছে। (বুখারি, হাদিস : ১৮৮৯)

একজন নবী যিনি ছিলেন রহমাতুল্লিল আলামিন, তিনি তাঁর মাতৃভূমিকে কতটা ভালোবাসলে মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত করা পোড়াকপালী শত্রুদের অভিসম্পাত করতে বাধ্য হন। একসময় মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীর আকুতি কবুল করেন, তাঁকে স্বীয় মাতৃভূমির বিজয় দান করেন।

মক্কা বিজয়ের স্মরণীয় ঘটনা : সেদিন মক্কার অধিবাসীরা ভয়ে একেবারে মুহ্যমান হয়ে পড়েছিল। ইসলামের মূলোৎপাটনে যারা নেতৃত্বভার গ্রহণ করেছিল, অশ্লীল ভাষায় মহানবী (সা.)-কে অজস্র গালাগাল করত, বিষাক্ত বর্শা হাতে তাঁকে হত্যা করতে ওত পেতে থাকত, তাঁর দেহ মুবারক থেকে রক্ত ঝরাত, নামাজে নাড়িভুঁড়ি চাপা দিত, মাতৃভূমি ত্যাগ করতে যারা বাধ্য করেছিল, আজ তারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায় দলে দলে কাবা প্রাঙ্গণে সমবেত হলো। আজ তাদের সেই দর্প, গর্ব ও আস্ফাালন নেই। ১০ হাজার মুসলিম বাহিনী দ্বারা বেষ্টিত হয়ে আজ তারা শিয়ালের মতো লেজ গুটিয়ে দুরুদুরু বুকে চেয়ে আছে দয়ার সাগর মহানবী (সা.)-এর ফায়সালার দিকে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কানগরে প্রবেশের দুটি পথ দিয়েই সৈন্য প্রবেশ করানোর সিদ্ধান্ত নেন। খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.)-এর নেতৃত্বে একটি বাহিনীকে মক্কার নিচু পথে নগরে প্রবেশের নির্দেশ দেন। অবশিষ্ট বাহিনী নিয়ে স্বয়ং রাসুল (সা.) মক্কার উঁচু পথ ধরে নগরে প্রবেশ করেন। বিনা বাধায় রক্তপাতবিহীন তিনি হাজুন নামক স্থানে পৌঁছে বিজয় পতাকা উড্ডয়ন করানোর নির্দেশ দেন।

সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা : মহানবী সরাসরি চলে যান কাবাগৃহে। একপর্যায়ে মহানবী (সা.) কাবাঘর থেকে বের হয়ে এলেন। তিনি দরজার উভয় পাশের কপাটে হাত রেখে এক নাতিদীর্ঘ হৃদয়গ্রাহী ভাষণ দেন। তিনি বলেন, ‘তোমাদের প্রতি আজ কোনো অভিযোগ নেই। যাও! তোমরা সবাই মুক্ত।’ শুধু তা-ই নয়, কাফির নেতা আবু সুফিয়ানের গৃহে যে ব্যক্তি আশ্রয় নেবে, তাকেও তিনি ক্ষমা করেন। তিনি ঘোষণা করেন, ‘যে ব্যক্তি আবু সুফিয়ানের বাড়িতে আশ্রয় নেবে, সে নিরাপদ থাকবে।’ (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা ৪০৫, ৪০১)

বিজয়ের সুরা পাঠ : বিজয় লাভ করে মহানবী (সা.) নিজ মাতৃভূমিতে প্রবেশ করছিলেন, তখন তিনি পবিত্র কোরআনের একটি বিশেষ সুরা তিলাওয়াত করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল (রা.) থেকে বর্ণিত, মক্কা বিজয়ের দিন আমি রাসুল (সা.)-কে (উটের পিঠে) আরোহণ অবস্থায় ‘সুরা আল ফাতহ’ তিলাওয়াত করতে দেখেছি।’ (বুখারি, হাদিস : ৫০৩৪)

মক্কায় পৌঁছার পর তিনি কাবাগৃহে প্রবেশ করে মহান আল্লাহর দরবারে সিজদায় লুটিয়ে পড়েন। তিনি দীর্ঘক্ষণ সেখানে অবস্থান করেন, নামাজ পড়ে মহান আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন। (বুখারি, হাদিস : ২৯৮৮)

এভাবেই প্রিয় নবী (সা.) মহান আল্লাহর শুকরিয়া ও তাঁর প্রশংসার মাধ্যমে বিজয়ের আনন্দ উদযাপন করেছিলেন। মহান আল্লাহ সবাইকে মহানবী (সা.)-এর আদর্শ আঁকড়ে ধরার তাওফিক দান করুন।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2