অনলাইন জুয়ায় বছরে হাজার কোটি টাকা পাচার!
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২১ মে,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ১০:৩৬ এএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
স্ট্রিমকার নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জুয়া খেলার অ্যাপস পরিচালনা করে মাসে শত কোটি টাকা পাচার করে আসছিলো একটি চক্র। বছরে পাচারকৃত এই টাকার পরিমাণ প্রায় হাজার কোটি টাকা।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের ৪ সদস্যকে আটক করেছে পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)। আটকরা হলেন—জমির উদ্দিন (৩৫), মো. হোসেন রুবেল (৩৯), ইসলাম হৃদয় (২৬) এবং অনামিকা সরকার (২৪)।
এটিইউ জানায়, স্ট্রিমকার নামে অ্যাপসটি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হলেও ভিপিএনের মাধ্যমে ঠিকই ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি দেশে ব্যবহার-প্রসারে হাতেগোনা কয়েকজন জড়িত থাকলেও না বুঝে ব্যবহার করছেন লক্ষাধিক বাংলাদেশি। যেখানে ডিজিটাল কারেন্সির মাধ্যমে বিপুল অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে।
বুধবার (১৯ মে) দুপুরে রাজধানীর বারিধারায় এটিইউ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান এটিইউর পুলিশ সুপার (মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস) মোহাম্মদ আসলাম খান।
তিনি জানান, স্ট্রিমকার অ্যাপসে গ্রুপ চ্যাট, লিপ সিং, ড্যান্স, গল্প, কবিতা আবৃত্তিসহ বিভিন্ন ধরনের অনলাইন জুয়া খেলার অপশন রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের এই অ্যাপটিতে দুই ধরনের আইডি রয়েছে। একটি হচ্ছে ইউজার আইডি এবং একটি হোস্ট আইডি। ইউজাররা সাধারণত সুন্দরী মেয়েদের ও সেলিব্রেটিদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার জন্য এই অ্যাপটি ব্যবহার করে আর হোস্টররা একটি হোস্ট এজেন্সির মাধ্যমে এই অ্যাপে হোস্টিং করেন। সুন্দরী মেয়ে এবং সেলিব্রেটিরাই সাধারণত এই এজেন্সির মাধ্যমে হোস্ট আইডি খোলেন।
এতে দুই ধরনের এজেন্সি রয়েছে—বিন্স এজেন্সি ও হোস্ট এজেন্সি। বিন্স এজেন্সিগুলো বিদেশি অ্যাপটির অ্যাডমিনদের কাছ থেকে বিন্স ক্রয় করে ইউজারদের কাছে বিক্রি করে। এই অ্যাপের ইউজাররা এই বিন্স, হোস্টদের সঙ্গে লাইভ স্ট্রিমিংয়ে আড্ডা দেওয়ার জন্য গিফট হিসাবে প্রদান করেন। বিন্স এক ধরনের ডিজিটাল কারেন্সি।
দুই ধরনের ডিজিটাল কারেন্সি রয়েছে—বিন্স ও জেমস। প্রতি এক লাখ বিন্সের মূল্য এক হাজার আশি টাকা এবং প্রতি লাখ জেমসের মূল্য ৬০০ টাকা। কিন্তু এক বিন্স সমান এক জেমস। ইউজাররা হোস্টদের গিফট হিসেবে বিন্স দেন কিন্তু এই বিন্স হোস্টদের কাছে এলেই তা জেমসে পরিণত হয়। সঞ্চিত জেমসের পরিমাণের উপরই নির্ভর করে হোস্টদের ইনকাম। তবে হোস্টদের মাস শেষে বেতন পাওয়ার জন্য শুধু সঞ্চিত জেমস যথেষ্ট নয়। তাকে প্রতি দিন এবং প্রতিমাসে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য লাইভ স্ট্রিমিংয়ে থাকতে হয়।
এসপি আসলাম বলেন, এই বিন্স এবং জেমস নামক ডিজিটাল কারেন্সিই আমেরিকান এই অ্যাপস স্ট্রিমকারের একমাত্র চালিকা শক্তি। দেশীয় বিন্স এজেন্সিসমূহ সাব-এজেন্সি নিয়োগসহ কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দরী মেয়েদের বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে লোভনীয় অফার দিয়ে লাইভ স্ট্রিমিংয়ে এনে ইউজারদের সঙ্গে প্রতারণাও করে থাকে।
এটিইউ দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে এসব প্রতারণা ও ডিজিটাল মুদ্রা পাচার রোধে গোয়েন্দা নজরদারির ধারাবাহিকতায় স্ট্রিমকারের চার মাস্টারমাইন্ডকে আটক করে। আটক চার সদস্য ও তাদের পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধে সাভার থানায় ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান এসপি আসলাম।
এটিইউর সাইবার অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের পুলিশ সুপার মো. মাহিদুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে এই অ্যাপসের ১১ জন এজেন্ট রয়েছে। তারাই ডিজিটাল বা ভার্চ্যুয়াল কারেন্সি কেনাবেচা করেন। লক্ষাধিক বাংলাদেশি ইউজার বিকাশ, রকেট, নগদসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে, হুন্ডি, হাওয়ালা, ক্রিপ্টো কারেন্সি এবং বিদেশি একটি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ডিজিটাল বা ভার্চ্যুয়াল কারেন্সি কিনছেন। যার মাধ্যমে প্রতি মাসে শত কোটির বেশি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে।