কার নির্দেশে খোলা ছিল এমসি কলেজের ছাত্রাবাস?
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৫:২১ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর,রবিবার,২০২০ | আপডেট: ০১:১৩ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সিলেট এমসি কলেজ বন্ধ রাখা হয়। তবে কলেজ বন্ধ থাকলেও খোলা ছিল ছাত্রাবাস।
এ নিয়ে প্রশ্ন এখন সব মহলে। অভিযোগ উঠেছে, জনৈক আওয়ামী লীগ নেতার দাপটে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে বহিরাগত ছাত্ররা থাকতেন। এ ব্যাপারে অবগত ছিল কলেজ কর্তৃপক্ষও। অবশ্য কলেজ অধ্যক্ষ বলছেন, বন্যার কারণে অতিদরিদ্র ছাত্রদের থাকার জায়গা দিয়েছেন ছাত্রাবাসে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনাকালে ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে গেলেও কলেজ ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত কতিপয় বখাটে ছাত্র ছাত্রাবাসে অবস্থান করছিলেন। টিলাগড় কেন্দ্রিক আওয়ামী লীগের দুই নেতায় দ্বিধাবিভক্ত ছাত্রলীগ ক্যাডাররা ছাত্রাবাসে অবস্থান করে এলাকায় ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্ম করতেন। আর প্রশাসনের হাত থেকে তাদের বাঁচাতে শেল্টার দিতেন বলয় ভারী করা আওয়ামী লীগ নেতারা।
স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যার পর ছাত্রাবাসে অবস্থানকারী ছাত্রলীগ নামধারী বখাটেরা রাস্তা থেকে লোকজনকে তুলে ছাত্রাবাস কিংবা এমসি’র মাঠে নিয়ে মোবাইল ও টাকা পয়সা রেখে ছেড়ে দিতেন।
সূত্র জানায়, করোনাকালে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করেই এমসি কলেজের কর্তৃপক্ষ ছাত্রাবাসে বহিরাগতসহ কলেজ শিক্ষার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করে দিতেন। অবশ্য কিছুদিন আগেও ছাত্রাবাস থেকে বহিরাগত এসব ছাত্রদের বের করে দিতে চাইলেও টিলাগড় কেন্দ্রিক আওয়ামী লীগের এক নেতা হোস্টেল সুপারকে ধমক দিয়ে তাদের থাকার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করে দেন।
সরকারের নির্দেশনা থাকার পরেও এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে প্রভাব খাটিয়ে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে থাকতেন ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীরা। আর সবকিছু জানার পরেই মুখ বন্ধ করে থাকতে হতো কলেজ কর্তৃপক্ষকে। আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট রনজিত গ্রুপের সাইফুর রহমান ও রানা তাদের নেতৃত্বে ছিলেন বলে জানা গেছে। গণধর্ষণের ঘটনার পর অভিযান চালাতে গিয়ে সাইফুর রহমানের কক্ষ থেকেই অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ।
বহিরাগত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি কলেজের বিভিন্ন বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও ছাত্রাবাসে বসবাস করে আসছিলেন। বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষের জানা থাকলেও কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
এ বিষয়ে সিলেট এমসি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সালেহ আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে ১৮ মার্চ কলেজ ও ছাত্রাবাস বন্ধ করে দেওয়া হয়। অবশ্য বন্যাকবলিত সুনামগঞ্জ এলাকার অনেক শিক্ষার্থী চাকরি ও টিউশনি করে থাকার জন্য ছাত্রাবাসে আশ্রয় নেয়। কলেজ কর্তৃপক্ষও মানবিক কারণে তাদের স্থান দিয়েছিল। তবে তাদের থাকার জন্য কোনো নেতা আমাকে হুমকি দেননি। হোস্টেল সুপারকে হুমকি দিলেও দিতে পারেন।
তিনি বলেন, ঈদের সময় থেকে ৪/৫ জন ছাত্র হোস্টেলে আসছে, যাচ্ছে। কিন্তু ছাত্রাবাসে যাতে থাকতে না পারে সে জন্য ছাত্রাবাসের ডাইনিং বন্ধ রাখার পাশাপাশি গ্যাস সংযোগও বন্ধ করে রেখেছিলাম।
অধ্যক্ষ আরো বলেন, ছাত্রাবাসের ৬টি ব্লক ও পূর্ব দিকে একটি ৪তলা ভবন রয়েছে। সেখানে প্রায় ৩শ’ শিক্ষার্থী থাকত। কলেজ ও ছাত্রাবাস বন্ধ হওয়ার পর মানবিক দিক বিবেচনা করে ছাত্রাবাসে প্রায় ২০-৩০ জনকে থাকতে মৌখিকভাবে বলা হয়। বহিরাগত কেউ থাকছে কিনা বা কলেজের শিক্ষার্থীরা নির্দেশনা মানছে কিনা সে বিষয় দেখতেন হোস্টেল সুপার। শুক্রবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে ছাত্রাবাসের কয়েকটি কক্ষ তল্লাশি করে বন্ধ করা হয়।
ছাত্রাবাসের কক্ষে অস্ত্র নিয়ে অবস্থান করার বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষ বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। এ জন্য ৩ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কারো গাফিলতি পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) জ্যোর্তিময় সরকার বলেন, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ছাত্রাবাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কলেজ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ছাত্রাবাস ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা। তবে গণধর্ষণের ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।
শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটক রেখে এক গৃহবধূকে ছাত্রলীগের ৬ জন নেতাকর্মী গণধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই দম্পতিকে ছাত্রাবাস থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরবর্তীতে ধর্ষণের শিকার তরুণীকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় শনিবার ভোর রাতে ৬ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ২/৩ জনকে অভিযুক্ত করে নগরের শাহপরান থানায় মামলা দায়ের করেন ধর্ষিতার স্বামী।
এছাড়া অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় পৃথক আরেকটি মামলা দায়ের করেন শাহপরান থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিল্টন সরকার। ছাত্রলীগ ক্যাডার সাইফুর রহমানকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন তিনি।