প্রয়োজনের ১২ শতাংশ ধাত্রী দিয়ে চলছে মাতৃত্বকালীন সেবা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৫ মে,রবিবার,২০২৪ | আপডেট: ০৩:০৫ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
প্রতীকী ছবি
দেশে প্রতিবছর গড়ে ৩২ লাখ শিশু জন্ম নেয়। প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের জন্য দেশে অন্তত ২২ হাজার দক্ষ ধাত্রী প্রয়োজন। অথচ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত ধাত্রী আছেন দুই হাজার ৫৫৭ জন, প্রয়োজনের তুলনায় যা মাত্র ১২ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাভাবিক প্রসব বিষয়টির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভয়ভীতি আর শঙ্কা।
অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের ক্ষেত্রে রয়েছে দক্ষ ধাত্রীর সংকট। যে কারণে দেশে অস্ত্রোপচারে জন্ম দেওয়া শিশুর সংখ্যা বাড়ছে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে আজ রবিবার বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মিডওয়াইফ দিবস-২০২৪। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘মিডওয়াইফ, জলবায়ু সংকটে অপরিহার্য জনশক্তি’।
ইন্টারন্যাশনাল কনফেডারেশন অব মিডওয়াইফস (আইসিএম) বলছে, জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ। দিন যত যাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব তাপপ্রবাহ, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছে, যা উল্লেখযোগ্যভাবে নারী ও শিশু স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. নাসির উদ্দিন বলেন, আমাদের আড়াই হাজারের কিছু বেশি মিডওয়াইফ রয়েছে। জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে এ সংখ্যা খুবই অপ্রতুল।
ঘাটতি পূরণে পাঁচ হাজার পদ সৃষ্টির আবেদন করা হয়েছিল। নানা জটিলতায় ৪০১ জনের অনুমোদন পাওয়া গেছে। তবে এরই মধ্যে তিন হাজার নার্স নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। আরো পাঁচ হাজার পদ সৃষ্টি হয়েছে। আগামী বছরের মধ্যে নিয়োগের প্রক্রিয়া শেষ হবে।
তখন সংকট কমে যাবে। প্রসূতি মায়ের জন্য ব্যথামুক্ত স্বাভাবিক প্রসব, দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফ তৈরিতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও কর্মপরিবেশ জরুরি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) তথ্য মতে, একটি দেশে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব হওয়া উচিত ৮৫ শতাংশ। অস্ত্রোপচারে শিশু জন্ম কোনোভাবেই ১৫ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। বাংলাদেশে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় শিশু জন্মের হার ৪৯.৩ শতাংশ। আর অস্ত্রোপচারে জন্ম নিচ্ছে ৫০.৭ শতাংশ শিশু।
বাংলাদেশ মিডওয়াইফারি সোসাইটির সভাপতি আসমা খাতুন বলেন, দেশে ২০২০ সালে প্রসবকালে প্রতি লাখে ১৬৩ জন মায়ের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রতি লাখে ১২১ জনে নামিয়ে আনা; এভাবে ২০২৫ সালের মধ্যে প্রতি লাখে ৮৫ জনে নামিয়ে আনা। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে এই হার ৭০ জনে নামিয়ে আনতে হবে।
দেশে এক বছরে অস্ত্রোপচারে প্রসবের হার ৯ শতাংশের বেশি বেড়েছে বলে ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২৩’-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ২০২২ সালে মোট প্রসবের ৪১.৪ শতাংশ ছিল অস্ত্রোপচারে প্রসব। ২০২৩ সালে এই হার বেড়ে হয় ৫০.৭ শতাংশ।
প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনিকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. সামিনা চৌধুরী বলেন, অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের কারণে মা ও শিশুর মৃত্যুঝুঁকি থাকে। এই ঝুঁকি এড়াতে প্রতিষ্ঠানিক প্রসব বাড়াতে হবে। এ জন্য প্রসবের সময় ধাত্রী নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, দেশে প্রসবকালীন মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, খিঁচুনি, বিলম্বিত প্রসব এবং মায়েদের যথাসময়ে হাসপাতালে আনতে না পারা। হাসপাতালে আনতে পারলে মাতৃমৃত্যু বহুলাংশে কমে যেত।