avertisements 2

মাতৃধরায় শান্তির আবাহন মঙ্গল শোভাযাত্রায়

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৪ এপ্রিল,শুক্রবার,২০২৩ | আপডেট: ০৮:১২ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪

Text

মায়ের কোলে সন্তান যেমন নিরাপদ, তেমন নিরাপদ এক শান্তিময় বিশ্বের আবাহনে বৈশাখের প্রথম সকালে ঢাকার পথে নামল মঙ্গল শোভাযাত্রা। ডোরা কাটা বাঘ, মেটে রঙা ভেড়া, কালো হাতি, নীল গাই আর সাদা ময়ূর এল মিছিল করে; শিশু কোলে সঙ্গী হলেন টেপা পুতুল মা, বরাবরের মতই সামনে থাকলেন রাজা-রাণী।

শোভাযাত্রায় সামনে-পেছনে বাদ্যের তালে তালে চললো নৃত্য, বাহারি মুখোশ হাতে বৈশাখী সাজে সব বয়সের সব শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষ শামিল হলেন মঙ্গলের এই যাত্রায়। বরাবরের মতই বৈশাখের প্রথম সকালে চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়। শাহবাগ মোড় ঘুরে আবারও চারুকলা অনুষদে গিয়ে তা শেষ হয়।

১৪৩০ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নিতে ভোরের আলো ফুটতেই নানা বয়সী মানুষ জড়ো হতে থাকে রমনা আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। অল্প সময়ের মধ্যে ক্যাম্পাস পরিণত হয় লাল-সাদা জনস্রোতে। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান থেকে ‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি।

শোভাযাত্রা শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, “মঙ্গল শোভাযাত্রা আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এখন এটি ওয়ার্ল্ড মেমোরি অব হেরিটেজের অন্তর্ভুক্ত। ফলে এই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের, বিশ্বের প্রতিটি জনগোষ্ঠীর এটি অসাধারণ সম্পদ। সেটির রক্ষণাবেক্ষণ, সেটি সংরক্ষণ ও সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া এখন সকলের সম্মিলিত দায়িত্ব।

“এটি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টি ও দর্শনের প্রতিফলন। এটি  অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ার বার্তা  দেয়। যে আতঙ্ক ছিল, সেটির প্রতিবাদে সকল মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে। সকল ধরনের  উগ্রবাদ, সাম্প্রতিকতার বিরুদ্ধে এটি একটি প্রতিবাদ।”

১৯৮৯ সালে স্বৈরাচার বিরোধী ভাবমূর্তি নিয়ে চারুকলা থেকে শুরু হয় পহেলা বৈশাখের এই আনন্দ শোভাযাত্রা। সময়ের ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬ সালে তা ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নাম পায়। বাঙালির বর্ষবরণের মঙ্গল শোভাযাত্রা এখন ইউনেস্কোর ‘ইনটেনজিবল হেরিটেজ’ এর অংশ।

শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বলেন, “প্রত্যাশা ও সফলতার বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে বাংলা নববর্ষ ১৪৩০। মঙ্গল শোভাযাত্রা আমাদের সাংষ্কৃতিক ঐতিহ্য। ইউনেস্কোর ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত হয়েছে।

মাতৃধরায় শান্তির আবাহন মঙ্গল শোভাযাত্রায়
“সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা হয়েছে। জাতির পিতা যে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছেন।”

করোনাভাইরাস মহামারীর খাঁড়া কাটিয়ে এবার স্বাস্থ্য বিধির বেড়াজাল ছাড়াই নতুন বছরকে বরণ করে নিতে পেরেছে বাঙালি। তবে গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও মঙ্গল শোভাযাত্রা ছিল নিরাপত্তার কড়াকড়ি।

পুলিশ, র‍্যাব, এপিবিএন ও সোয়াটের সদস্যরা অস্ত্র হাতে সামনে-পেছনে গড়ে তোলেন নিরাপত্তা বলয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসির সদস্যরাও ছিলেন তাদের সঙ্গে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা বলয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা তার স্বকীয়তা হারাচ্ছে কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে কেএম খালিদ বলেন, “নিরাপত্তা বেষ্টনী যেটা দেখছেন, আগেও এটা ছিল। আমরা দেখেছি জোট সরকারের সময় রমনার বটমূলে বোমা হামলা হয়েছে। বোমা হামলাকে তাদের সরকারের একটি অংশ ছিল। এক সাথে ৬৪ জেলায় বোমা হামলা হয়েছিল।

“আপনারা জানেন, এবার মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে হুমকিও এসেছে, একজন আইনজীবী হাই কোর্টে মামলা পর্যন্ত করেছেন মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধ করার জন্য। সেই জায়গাটি থেকে নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখতে হয়।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নববর্ষ উদযাপন কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, “‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’। অর্থাৎ সুষ্ঠু পৃথিবীর জন্য পানি বর্ষণ প্রার্থনা। যাতে এই উত্তপ্ত বসুন্ধরা স্নিগ্ধ হয়, শান্ত হয়, মনোরম হয়, সুন্দর হয় এবং ফুলে ফলে ভরে উঠে।”

চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেনের পরিকল্পনা ও তত্ত্বাবধানে ২৪ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এবার শোভাযাত্রা আয়োজনের দায়িত্বে ছিলেন। তাদের সাথে যুক্ত ছিলেন চারুকলার বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা।

এবারের প্রতিপাদ্য ব্যাখ্যা করে অধ্যাপক নিসার এর আগে বলেছিলেন, “বর্তমানে মানুষের মাঝে হানাহানি, অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। তার চরম মাত্রায় পৌঁছে এই রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ। এর ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও চরম ধস নেমেছে। তাই আমাদের এবারের কামনা পৃথিবীতে শান্তি নেমে আসুক।”

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2