বাবার সঙ্গে মই টানা সেই মেয়েটি খেলবে জাতীয় দলে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৭ সেপ্টেম্বর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০২:২৯ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
ছবি: সংগৃহীত
হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান মারুফা আক্তার। বাবা বর্গাচাষি আর মা করেন সংসারের কাজ। অভাব-অনটনে দিন কোনোরকমে কেটে যায়। এর মধ্যেও ক্রিকেট খেলতে ভালো লাগে তাঁর। পড়ালেখার পাশাপাশি মারুফা ক্রিকেট খেলেন, বাবাকে কৃষিকাজেও সহায়তা করেন।
সংগ্রামী সেই মারুফা এবার সুযোগ পেয়েছেন জাতীয় নারী ক্রিকেট দলে। গত রোববার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের জন্য দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ১৫ সদস্যের এই দলে নতুন মুখ হিসেবে ডাক পেয়েছেন ১৯ বছর বয়সী ডানহাতি পেসার মারুফা। তাঁর এই সাফল্যে পরিবার ও এলাকায় বইছে খুশির বন্যা।
নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার প্রত্যন্ত ঢেলাপীর এলাকার দরিদ্র কৃষক আইমুল্লাহর ছোট মেয়ে মারুফা আক্তার। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি ভালো লাগা তাঁর। প্রথম দিকে ছেলেদের সঙ্গেই খেলতেন। পরে বিকেএসপিতে প্রশিক্ষণের সুযোগ পান। খেলেছেন বিভিন্ন ক্লাব ও দলে। ২০২১ সালে করোনাকালে ক্রিকেট খেলা বন্ধ থাকায় বাবা আলিমুল্লার সঙ্গে বর্গা জমিতে মই টানার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনায় আসেন মারুফা।
অভাব-অনটনের সংসারে দুবেলা ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য যেখানে সংগ্রাম করতে হয়, সেখানে ক্রিকেট খেলা বিলাসিতা মনে হয়েছিল সেই সময়ে মারুফার। তাই করোনার সময়ে পারিবারিক দুরবস্থায় ক্রিকেট থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার কথাও ভেবেছিলেন। তবে এগিয়ে আসে বিসিবি। মারুফা ফিরে যান আগের ঠিকানা বিকেএসপিতে। বছর না পেরোতেই ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক নৈপুণ্য দেখিয়ে ১৯ বছর বয়সেই ডাক পেলেন জাতীয় দলে।
করোনা মহামারি শেষে ওয়ানডে ফরম্যাটের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে বাজিমাত করেন মারুফা। বিকেএসপির হয়ে ১১ ম্যাচে ৩.২১ ইকোনমিতে ২৩ উইকেট নেন তিনি। এর মধ্যে এক ম্যাচেই নেন ৭ উইকেট। দারুণ বোলিংয়ের স্বীকৃতি হিসেবে জিতে নেন টুর্নামেন্টের ‘বেস্ট প্রমিজিং প্লেয়ার’-এর পুরস্কার। এ পথ ধরেই ২৮ সদস্যের জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পেয়ে সবাইকে অবাক করে দেন মারুফা।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৮ সেপ্টেম্বর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ বাছাই শুরু হবে বাংলাদেশের, সূচি চূড়ান্ত হয়েছে আগেই। ক্যাম্প করার জন্য আগেভাগে সেখানে যাবে লাল-সবুজের মেয়েরা। ৮ সেপ্টেম্বর যাত্রা করবে বাংলাদেশ। এটাই হবে মারুফার প্রথম বিদেশ সফর।
মারুফা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কতটা ভালো লাগছে যে তা বোঝাতে পারব না। জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছি এটাই শেষ না। এখন আমার লক্ষ্য ১১ জনের মধ্যে থাকা এবং ভালো খেলা। অভাব-অনটনের কারণে ক্রিকেট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে চেয়েছিলাম। তবে বিসিবির সহযোগিতায় আজ জাতীয় দলে জায়গা পেয়েছি। বিসিবির অনুদান না পেলে করোনার প্রথম ওয়েভের সময় থমকে যেত স্বপ্ন। বিসিবিকে আমার পাশে দাঁড়ানোর জন্য ধন্যবাদ।’
মারুফা আরও বলেন, ‘পড়ালেখার পাশাপাশি ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজে বাবাকে সাহায্য করতাম। সেই সঙ্গে আমার বড় ভাই আল-আমিনের সঙ্গে পরিত্যক্ত রেললাইনের পাশে নিয়মিত ক্রিকেট অনুশীলন করতাম। ২০১৮ সালে আমি বিকেএসপিতে সুযোগ পাই। সেখানে দুই মাস ক্যাম্প করি। ক্যাম্প শেষে খুলনার ইমতিয়াজ হোসেন পিলু স্যার আমাকে ২০১৯ সালে মোহামেডানের হয়ে প্রিমিয়ার লিগে খেলার সুযোগ করে দেন। এরপর স্যার আমাকে খুলনা দলে নেন। অনূর্ধ্ব-১৮ দলে সুযোগ পাই।’
মেয়ের সাফল্যে বেজায় খুশি মারুফার বাবা আলিমুল্লাও। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নিজের কোনো জমি কিংবা বসতভিটা নেই। শ্বশুরের দেওয়া বাড়িতে থাকি। অন্যের জমি বর্গা চাষ ও দিনমজুরি করে কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছি। খেলার প্রতি মারুফার খুব আগ্রহ ও ভালোবাসা। শুরুতে মেয়ের খেলা সমাজের অনেকেই ভালোভাবে নেননি। সে অনেক বড় খেলোয়াড় হবে এটাই আমার স্বপ্ন।’ মারুফার জন্য দোয়া করতে সবার প্রতি অনুরোধ জানান এই বাবা।