‘ওরা অভদ্র, অশিক্ষিত; সাহস থাকলে আমার সামনে আসুক’
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০:৪৭ পিএম, ৮ এপ্রিল,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০২:৫২ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমানে বোর্ড পরিচালকসহ ক্রিকেটের বিভিন্ন উন্নয়নে নিয়োজিত থাকা খালেদ মাহমুদ সুজনকে নিয়ে অন্তর্জালের দুনিয়ায় মানুষের উপহাসের শেষ নেই। এসব হীন কাজ যারা করেন তাদেরকে সরাসরি অভদ্র, অশিক্ষিত বলেছেন সুজন। বিডিক্রিকটাইমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি মনের সব রাগ উগরে দেন।
খালেদ মাহমুদ সুজন
ফেসবুকে খালেদ মাহমুদ সুজন নাম লিখে খুঁজলেই মুহূর্তেই শতশত অ্যাকাউন্ট ও পেইজ সামনে চলে আসে। এসব অ্যাকাউন্ট ও পেইজ থেকে সুজন ও বাংলাদেশ ক্রিকেটকে ছোট করে বিভিন্ন স্ট্যাটাস ও মন্তব্য করা হয়। তবে এসব নিয়ে সুজন কোনো চাপ নেন না। তিনি বলেন,
‘আমি আসলে চাপ নিই না। আমি মনে করি যারা এসব বলে তারা একদম অশিক্ষিত। মূলত যারা অশিক্ষিত হয়, যাদের ক্রিকেট জ্ঞান বলতে কিছু নেই; যারা আমাদের চিনে না, আমাদের কাজ সম্মন্ধে জানে না, তারা এগুলো করে। একজন কাজ করা মানুষের এসব সময় নেই। ট্রল করার মতো সময় আমার নেই, আমাকে সারাদিন কাজ করতে হয়।’
সুজনের আয়ের উৎস নিয়েও অনেকে মশকরা করেন, বিভিন্ন ভুল তথ্য ছড়ান। সুজন নিজেই নিশ্চিত করেছেন তার আয়ের উৎস। তিনি জানান,
‘অনেকে বলে আমি অনেক কাজ করি। হ্যা, আমি আসলেই অনেক কাজ করি কিন্তু আমি কি রাজনীতি করি? আমি কি ব্যবসা করে ক্রিকেট চালাই? আমি যা করি সব ক্রিকেট নিয়েই করি। আমি বেক্সিমকো চাকরি করি সেটার ক্রিকেট দেখি। ঢাকা ডায়নামাইট আর আবাহনী দেখি। রাজশাহীতে ক্রিকেট একাডেমি চালাই, আমি ফুটবল একাডেমি চালাই না।’
‘আমি অন্য যেখানেই কাজ করি, বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়েই করি। আমার তো সারাদিন ক্রিকেট। আমি ঘুম থেকে উঠি আর রাতে শোয়া পর্যন্ত ক্রিকেট ছাড়া কিছু নাই। আমি তো আর কিছু করি না, তাহলে মানুষ আমাকে নিয়ে ট্রল করবে কেন? আমাকে নিয়ে অনেক কথা লেখে। আমি এত টাকা পাচ্ছি। অনেকে বলে আমি বাংলা ট্র্যাক একাডেমি থেকে অনেক অনেক টাকা নিচ্ছি। কিন্তু ওরা আসলে কিছু জানেই না।’
‘আমি ওদের উদ্দেশে বলে দিই, আমি ওখানে ১২ দিন কাজ করি মাসে। আমি একদিন কাজ না করলেই আমার একদিনের বেতন কেটে রাখা হয়। অবশ্যই আমার টাকার দরকার। কিন্তু আমি কোটি কোটি টাকা বেতন পাই না। সামান্য একটা বেতন পাই, যেটা আমার প্রয়োজন। আর বেক্সিমকো থেকে পাই। এই দুইটা জায়গা থেকেই পাই। এটা দিয়েই আমাকে চলতে হয়।’
‘আমি ক্রিকেট খেলে এমন কোনো টাকাপয়সা জমাইনি। বাংলাদেশে মনে হয় একমাত্র ক্রিকেটার আমি যার একটা জায়গা নেই, বাড়ি নেই ঢাকা শহরে। এসব অনেকে জানে না, তারা মনে করে আমি কোটি কোটি লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে নিচ্ছি। আমি আসলেই রাগ থেকে কথাগুলো বলছি যে ভাই আপনারা শুনে রাখেন, ঢাকায় আমার নিজস্ব কোনো জায়গাও নেই। আমার অনেক টাকা থাকলে নিশ্চয় ৩টা থাকত আজকে, পূর্বাচলে জমি থাকত। সব ক্রিকেটারদের পূর্বাচলে ৫-১০ কাঠা জমি আছে, আমার তো একটা কাঠাও নাই। আমার সেইজন্য কোনো দুঃখ নেই। আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।’
তার সম্পর্কে যারা মিথ্যা তথ্যা ছড়ায় তাদেরকে তার সামনে গিয়ে সব শুনে, দেখে আসারও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সুজন। তিনি বলেন,
‘আমার সম্পর্কে কথা বলার আগে জেনে বলবেন। নাহলে যারা দেখতে চান, আমার থেকে শুনে যান, আমাকে দেখে যান আমি কীভাবে থাকি, কী খাই, কীভাবে চলি। ফালতু, মিথ্যা কথা, মানুষকে বানানো এসব যারা করে তারা বেকার। তাদের কোনো কাজকাম নেই। তারা এগুলো করেই মানুষকে ছোট করে। আমি মনে করি, তাদের পরিবারও ভালো না। কোনো ভদ্র পরিবারের ছেলে এরকম কথা লিখতে পারে না, এভাবে ট্রল করতে পারে না। অভদ্র, অশিক্ষিত পরিবার থেকেই এরা আসে। আমি সরাসরিই বললাম আজকে। যদি তাদের সাহস থাকে আমার সামনে এসে কথা বলুক।’
‘আমি শহরে বেড়ে ওঠা একটা ছেলে। কারো ভয়ভীতিতে আমি কাজ করি না। আমি নিজের যোগ্যতায় কাজ করি। যেদিন মনে হবে, আমার যোগ্যতা নেই, আমি সেদিন আর কাজ করব না। কিন্তু আমি কারো দয়ায় বিসিবিতে আসিনি, নির্বাচন করে জিতে এসেছি। এটাও মনে হয় ওরা জানে না। তাই আমাকে নিয়ে যা খুশি লিখুক, আমি এসব গায়ে মাখি না, একদমই না।’
শেষের আগে সুজন যেন আরও একবার মনে করিয়ে দিলেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব ১৯ দলের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের গৌরব অর্জন করার কথা। তিনি বলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটকে বড় জায়গায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন নিয়েই তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। তারই তত্ত্বাবধানে কিন্তু বাংলাদেশের যুবার ছিলেন এবং বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। সুজনের ভাষায়, ‘আমার স্বপ্ন হলো বাংলাদেশ ক্রিকেটকে একসময় অনেক বড় জায়গায় নিয়ে যাওয়া। আমি সেই লক্ষ্যেই কাজ করি।’