পদ-টেন্ডার বাণিজ্যে কোটিপতি শেখ বাড়ির দালাল রাসেল
                                    
                                    
                                        
                                            ডেস্ক রিপোর্ট
                                        
                                    
                                   
                                     প্রকাশ:  ১২:০০ এএম,  ১ ফেব্রুয়ারী,শনিবার,২০২৫ | আপডেট:  ০২:১২ পিএম,  ৪ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৫
                                
                        
                    সংগৃহীত ছবি
একটি ছাত্রসংগঠনের পদ বদলে দিয়েছে আসাদুজ্জামান রাসেলের ভাগ্য। বর্তমানে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের খুলনা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। সেই পদে থেকেই আবার বাগিয়ে নিয়েছেন নগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদকেরও পদ। আর এভাবেই দশ বছরে পদ-টেন্ডার বাণিজ্য করে অঢেল সম্পত্তি গড়েছেন শেখ বাড়ির দালাল হিসেবে পরিচিত রাসেল।
গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে এবং খুলনার বিভিন্ন উপজেলায় নামে-বেনামে গড়েছেন কোটি টাকার সম্পত্তি। ব্যবহার করতেন দামি গাড়ি। তার বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক ব্যবসায় শেল্টার, টেন্ডার বাণিজ্য, চাঁদাবাজি এবং ছাত্রলীগের পদ বাণিজ্যের একাধিক অভিযোগ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আসাদুজ্জামান রাসেল খুলনা-২ আসনের সাবেক এমপি মিজানুর রহমানের অনুসারী হয়ে ২০১৫ সালে খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পান। এরপর শুরু করেন চাঁদাবাজি এবং মাদকব্যবসা। অল্পদিনে কোটি টাকার মালিক বনে যান। খুলনার বিভিন্ন কলেজের ক্যাম্পাস আয়ত্তে নিয়ে নিজ অনুসারীদের দিয়ে মাদক ব্যবসা চালাতেন।
পদ-টেন্ডার বাণিজ্যে কোটিপতি শেখ বাড়ির দালাল রাসেলশেখ বাড়ির শেখ সোহেলের সঙ্গে রাসেল-সংগৃহীত ছবি
ছাত্রলীগের পদ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কৌশলে কর্মীদের দিয়ে করাতেন চাঁদাবাজি এবং মাদকব্যবসা। সেই সময় রাসেলের প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠেন অপর এক ছাত্রনেতা সৈকত রোহান। রাসেলের অন্যতম বাধা হওয়ায় ২০১৬ সালে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয় সৈকত রোহানকে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় খুলনায় চাপা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এই আতঙ্কের কারণে রাসেলের মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
২০১৮ সালে খুলনা-২ আসন শেখ বাড়ির দখলে গেলে চাটুকারিতা করে রাসেল হয়ে ওঠেন শেখ বাড়ির আশীর্বাদপুষ্ট একজন দালাল। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থাকতেও আবার বাগিয়ে নেন নগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ। এরপর থেকে ঠিকাদারি কাজ বাগানো শুরু করেন। গড়ে তোলেন বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে নিজস্ব সিন্ডিকেট। তার অনুমতি এবং কমিশন ছাড়া কোনো সাধারণ ঠিকাদার কাজ পেতেন না। এমনকি নিলাম টেন্ডারেও তাকে মোটা অঙ্কের কমিশন দিতে হতো। প্রায় পাঁচ বছরেই কোটি কোটি টাকার মালিক হন তিনি। তার এ টেন্ডার বাণিজ্যে সহযোগিতা করেন খুলনার বিভিন্ন দপ্তরের এক ডজন প্রকৌশলী। বিভিন্ন তথ্য এবং ঠিকাদারদের বিল তোলার সময় এসকল প্রকৌশলী রাসেলকে খবর দিতেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় সাত বছর ধরে নগরীর আমতলা মোড়ে একটি বাড়িতে বসবাস করতেন রাসেল। তবে বাড়িটি বেনামে কেনা। ২০১৮ সালে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে রাসেল নগরীর ৩১নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচনও করেন। অঢেল অর্থ ব্যয় করেও শেষ পর্যন্ত প্রতিপক্ষের কাছে হেরে যান। তখন থেকেই প্রতিদিন মোটরসাইকেল বহর নিয়ে বিভিন্ন লোকজন তার সঙ্গে দেখা করতে আসতো। তার অনুসারীরা রাস্তায় গাড়িবহর নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো। রাত বারোটা-একটার দিকেও নেতাকর্মীরা গাড়িবহর নিয়ে তাকে বাসায় দিয়ে যেতো। তবে গত ৫ আগস্টের পর থেকে এলাকায় তার আর দেখা মিলছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঠিকাদার বলেন, রাসেলকে কমিশন না দিয়ে সাধারণ ঠিকাদাররা কাজ পেতেন না। আর কেউ কাজ পেলেও রাসেলকে অগ্রিম ক্যাশ টাকা না দিয়ে বিল উত্তোলন করা ছিল অসম্ভব। তার সঙ্গে একাধিক প্রকৌশলী জড়িত। শুধু রাসেল একা নন এরকম প্রভাবশালী দালাল আরও কয়েকজন রয়েছেন। রাসেল বিনোদনের জন্য বিভিন্ন সময়ে ভারত এবং মালয়েশিয়া যেতেন। ৫ আগস্টের পর রাসেল মালয়েশিয়া চলে গেছেন বলে জানা গেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনার মুখ্য সংগঠক আজিম ইসলাম জিম বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের এ নেতার সব অবৈধ সম্পদ জব্দ করে সরকারি কোষাগারে নেওয়া হোক। তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। ছাত্রলীগের নামে এরা নিরীহ ছাত্রদের ওপর অমানবিক ও নিষ্ঠুরভাবে হামলা করেছে। কোমলমতি ছাত্রদের দিয়ে জোরপূর্বক মাদকব্যবসা করিয়েছে। তাদের দিয়ে দখলবাজি করিয়েছে। কলেজের হোস্টেলের সিটে থাকতে দিয়ে তাদেরকে জোরপূর্বক মিছিল মিটিংয়ে নিয়ে যেতো।
তিনি আরও বলেন, আসাদুজ্জামান রাসেলকে আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে।


                                    
                                    
                                    
                                    
                                    


