খুলনায় ৪ কোটি টাকা নিয়ে সমিতির চেয়ারম্যান লাপাত্তা, বিপাকে হাজার গ্রাহক

সমিতির চেয়ারম্যান শেখ আহসাবুর রহমান

খুলনায় প্রায় দেড় হাজার গ্রাহকের ৪ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছেন স্যাংগুইন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান শেখ আহসাবুর রহমান। চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের সদস্যদের গত ৫ আগস্ট থেকে খুঁজে খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বিপাকে পড়েছেন সমিতির মাঠকর্মী ও গ্রাহকরা।

এমন পরিস্থিতিতে গত ৫ আগস্ট সব কর্মচারীদের পক্ষে খুলনা সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই সমিতির ব্যবস্থাপক ও মাঠকর্মী আবু ছাত্তার সানা । চেয়ারম্যান শেখ আহসাবুর রহমান যেন বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছে তিনি।

সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, স্যাংগুইন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতিটি সমবায় দপ্তর থেকে রেজিস্ট্রেশন নেওয়া হয়েছে । এর চেয়ারম্যান শেখ আহসাবুর রহমান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার ছেলে শেখ মেহেদী হাসান। গত ১১ বছরেরও বেশি সময় ধরে এটি কার্যক্রম চালিয়ে আসছে । খুলনা নগরীর টুটপড়া এলাকায় এই সমিতির কার্যালয়।

গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করাই ছিল সমিতির প্রধান কাজ। বর্তমানে গ্রাহক প্রায় দেড় হাজারের মতো। ফিক্সড ডিপোজিট করার অনুমোদন না থাকলেও চেয়ারম্যান নিজে অবৈধভাবে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে বেশি মুনাফা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে টাকা জমা রাখতেন। বর্তমানে ১৭ জন মাঠকর্মী রয়েছেন। ওই মাঠকর্মীরাই বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রাহক ও আমানত সংগ্রহ করে ওই সমিতিতে জমা রাখতেন।

সমিতির ব্যবস্থাপক আবু ছাত্তার সানা বলেন, তিনি ওই সমিতির নামেমাত্র ব্যবস্থাপক ছিলেন। কিন্তু তার কাছে কাগজপত্র বা কোনো কিছুই দেওয়া হতোনা । ৫ আগস্ট সকালে মাঠকর্মীরা কার্যালয়ে গিয়ে দেখেন সেটি তালা দেওয়া। এরপর কয়েকদফা চেয়ারম্যানকে ফোন করে দেখেন তার ফোন বন্ধ। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও ফোন বন্ধ পাওয়ায় তারা নগরীর পূর্ব বানিয়াখামার এলাকায় থাকা তার ভাড়া বাসায় গিয়ে খোঁজ নেন। এ সময় ওই বাড়ির মালিক জানান গত বৃহস্পতিবার পরিবার ও মালামাল নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন আসাবুর রহমান।

তিনি আরও জানান, পরে তার ছেলে ও সমিতির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহেদী হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাবার পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে জানান। চেয়ারম্যানের পালিয়ে যাওয়ার খবরটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে গ্রাহকরা টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন।

তিনি বলেন, সমিতিতে গ্রাহকদের ৪ কোটি টাকারও বেশি জমা রয়েছে । তার নিজের তিন লাখ টাকাসহ আত্মীয়-স্বজনদের ৩০ লাখ টাকা জমা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। প্রতি মাসের ৫ তারিখে সমিতির মাঠকর্মীদের বেতন দেওয়া হয়। এ মাসে দেওয়া হয়নি। একদিকে সমিতির গ্রাহকদের চাপ অন্যদিকে মাঠকর্মীদের মানবেতর জীবন, সব মিলিয়ে খুব ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন তারা।

সমিতির মাঠকর্মীরা জানান, চেয়ারম্যানের কাছে ওই সমিতির পাস বই, টাকা জমা ও ঋণ দেওয়ার রশিদসহ সব ধরণের কাগজপত্র রয়েছে।

নগরীর মিস্ত্রিপাড়া এলাকার বাসিন্দা স্বামী না থাকা রাফেজা বেগম জানান, সমিতিতে ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা জমা রেখেছিলেন। এর মধ্যে এক লাখ টাকা তার মেয়ের। তিনি মিস্ত্রিপাড়া বাজারে দোকানে পানি সরবরাহ করে ও বিভিন্ন
জায়গা থেকে চেয়েচিন্তে ওই টাকা জোগাড় করেছিলেন। ইচ্ছে ছিল মরে গেলে যেন ওই টাকা দিয়ে তার দাফন ও দোয়ার অনুষ্ঠান করা হয়। সমিতির চেয়ারম্যান পালিয়েছেন শুনে পাগলের মতো হয়ে গেছেন । তিনি কাঁদতে
কাঁদতে বলেন, ‘তিল তিল করে জমানো টাকা ওই সমিতিতে রেখেছিলাম। এখন কী করবো বাবা । আমার তো সবই গেল।’

 সমিতির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মেহেদী হাসান দাবি করেন, ২০১৪ সালের দিকে তার মায়ের সঙ্গে বাবার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর থেকে তারা মায়ের সঙ্গে আলাদা হয়ে যান। তার বাবা আরেকটা বিয়ে করে সেই পরিবার নিয়ে
থাকতেন। তাদের সঙ্গে বাবার কোনো যোগাযোগ ছিল না। কেন ও কী কারণে সমিতির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তার নাম রাখা হয়েছে তিনি জানেন না। কখনো তিনি ওই সমিতিতে যাননি। কখনো কোনো কাগজে স্বাক্ষরও
করেননি। তিনি দাবি করছেন, তাকে ফাঁসাতেই ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তার নাম রেখে গ্রাহকদের টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন তার বাবা। 

এ ব্যাপারে খুলনা থানার ওসি হাসান আল মামুন জানান, সমিতির একজন কর্মচারী থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। তবে কোনো কাগজপত্র দিতে পারেনি। সে কারণে মামলা রেকর্ড না করে অভিযোগ হিসেবে গ্রহণ করা
হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।