দাম্ভিক এক প্রেসিডেন্টের ঐতিহাসিক পতন!
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৯:০৭ পিএম, ৫ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২০ | আপডেট: ১২:২৭ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
একবার বিপক্ষে সংবাদ প্রচারের জন্য মার্কিন প্রভাবশালী গণমাধ্যম সিএনএনকে ‘মিথ্যুক’ আখ্যা দিয়ে আক্রমণ করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। আক্রমণ করতে ছাড়েননি নিউ ইয়র্ক টাইমসকেও।
ট্রাম্প বলেছিলেন, নিউ ইয়র্ক টাইমসেরও সিএনএনের মতো অবস্থা। গণমাধ্যমগুলোর সামনে অহংকার করে বলেছিলেন, এরা বেশি দিন ব্যবসা করতে পারবে না। মজার ব্যাপার হলো ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের পর নিউ ইয়র্ক টাইমসের গ্রাহকের সংখ্যা ছিল আকাশচুম্বী।
২০১৬ সালে মার্কিন নির্বাচনের প্রচারণা থেকে শুরু করে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর মূলধারার গণমাধ্যমকে তুলোধুনো করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যা এখনো অব্যাহত। তার প্রশাসনের সঙ্গে গণমাধ্যমের যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, তা বহু বছরেও অন্য কোনো মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে দেখা যায়নি। ট্রাম্পের ক্ষেপাটে আচরণের জন্য পশ্চিমা মিডিয়ার সাংবাদিকরা অনেকটা তটস্থ থাকেন।
হোয়াইট হাউজে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প প্রশাসন এবং মূলধারার গণমাধ্যমের মাঝে একটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে বার বার। নানা সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তার প্রশাসনের হেনস্থার শিকার হতে হয় সাংবাদিকদের। শুধু সংবাদ সম্মেলনে নয়, নির্বাচনী সমাবেশেও মূলধারার বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমের সঙ্গে দাম্ভিকতা নিয়ে বেশ সমালোচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প। একসময় হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভেবেছিলে তিনি। যা রীতিমত সমালোচনার জন্ম দেয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তার এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে নিন্দাও জানায়।
ঐতিহাসিক প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সড়ে দাড়ানো:
বিশ্বব্যাপী অস্বাভাবিক ভাবে বাড়ছে তাপমাত্রা। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধের লক্ষ্যে ২০১৫ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে জাতিসংঘের নেতৃত্বে জলবায়ু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর প্যারিস চুক্তিকে মার্কিন স্বার্থবিরোধী চুক্তি অ্যাখা দিয়ে সরে দাঁড়ান। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জাতিসংঘ, জাপান, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা এক হয়েও তাকে বোঝাতে ব্যর্থ হন। এক সঙ্গে দাঁড়িয়ে বিশ্ব নেতারা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, আর ট্রাম্প হাতগুটিয়ে বসে আছেন এমন একটি ছবি তখন ভাইরাল হয়ে পড়ে দুনিয়াজুড়ে।
বর্ণবাদ:
ট্রাম্পের আমলে দেশটিতে বর্ণবাদী আচারণ তীব্রভাবে লক্ষ্য করা গেছে। একবার তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধ বা এ রকম বিপর্যয়ের শিকার দেশগুলোর মানুষদের আশ্রয় দেয়ার চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বরং উচিত নরওয়ে বা উন্নত দেশগুলো থেকে অভিবাসীদের আনা। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে এমন দুঃখজনক বক্তব্য আশা করা যায় না বলে নিন্দা জানায় জাতিসংঘ।
সম্প্রতি দেশটির পুলিশের হাতে নির্মমভাবে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড নামের এক মার্কিনি নিহত হন। দেশজুড়ে এর প্রতিবাদে গণআন্দোলন শুরু হলে তখনও প্রশাসনের পক্ষ নেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের সময় শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার বিষয়টি চোখে পড়ার মতো।
অভিবাসন ইস্যু:
বরাবরই অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে ট্রাম্প। আশ্রয়রত বা অভিবাসীদের বিপজ্জনক ও হিংস্র অপরাধীও আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপকে তিনি আমেরিকার শক্তিশালী করার পথ প্রতিজ্ঞা করেন। আর এই পথেই মহান আমেরিকা গঠন সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। ট্রাম্পের এমন কর্মকাণ্ডকে অহংকার আর ক্ষেপাটে স্বভাবের প্রতিফলন মন্তব্য করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
নিষেধাজ্ঞা ইস্যু:
কথায় কথায় বিভিন্ন দেশর ওপর অবরোধ বা নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিতে বেশ পটু ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার আগে কোনো প্রেসিডেন্ট হুটহাট কোনো উচ্চপদস্থ ব্যক্তি বা দেশের ওপর অবরোধ দেয়ার নজিরে নেই। ইরান, ভেনেজুয়েলা, রাশিয়া, কিউবা এবং উত্তর কোরিয়াসহ অনেক দেশ তার নানা কঠোর অবরোধে জর্জরিত। বিশেষ করে ট্রাম্পের সঙ্গে কোনো ইস্যুতে বনিবানা না হলেই নিষেধাজ্ঞার খড়্গ নেমে আসে।
এছাড়া নানা সমাবেশ বা কোনো সম্মেলনে নিজকে সবার উপরে রাখতে পছন্দ করেন তিনি। তার অঙ্গভঙ্গি নিয়ে বিভিন্ন সময় ভাইরাল হয়েছেন নেট দুনিয়ায়। এক্ষেত্রে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের দাম্ভিক প্রেসিডেন্টও আখ্যা দেন অনেকে।
এমন পাগলামি স্বভাব এবারের নির্বাচনে জয়ী হলেও থাকবে নাকি পুরানো স্বভাব পাল্টে ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হয়ে হোয়াইট হাউজে ফিরবেন ট্রাম্প-সেটাই দেখার বিষয়।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের ৪৫ জন প্রেসিডেন্টের মধ্যে ১০ জন দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় যেতে পারেনি। এদের মধ্যে সবশেষ জর্জ এইচ. ডব্লিউ. বুশ ১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচনে তিনি ডেমক্র্যাটিক প্রার্থী বিল ক্লিনটনের কাছে হেরে যান।