মাচাদোর শান্তিতে নোবেলজয় নিয়ে কেন এত সমালোচনা?
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১২ অক্টোবর,রবিবার,২০২৫ | আপডেট: ১০:৩১ পিএম, ১২ অক্টোবর,রবিবার,২০২৫

ভেনেজুয়েলার গণতন্ত্রপন্থি নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো চলতি বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার পর তা নিয়ে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সমালোচকরা বলেছেন, মাচাদো ইসরায়েলের সমর্থক এবং গাজায় হামলার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছিলেন। এছাড়াও নিজ দেশের সরকার উৎখাতের জন্য বিদেশি হস্তক্ষেপেরও আহ্বানও জানিয়েছিলেন তিনি।
মাচাদো গত কয়েক বছর ধরে ভেনেজুয়েলার বেসামরিক নাগরিকদের সাহসের এক শক্তিশালী প্রতীক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। দেশটিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের স্বীকৃতি হিসেবে নোবেল কমিটি তাকে শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।
মাচাদোর নাম ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হোয়াইট হাউস এই পুরস্কারের ক্ষেত্রে ‘শান্তির চেয়ে রাজনীতিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে’ বলে সমালোচনা করে। মূলত বিশ্বজুড়ে ৮টি যুদ্ধ থামানোর দাবি করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে বৈশ্বিক শান্তির দূত হিসেবে নোবেল পাওয়ার তীব্র আকাঙ্খা প্রকাশ করেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্মাননাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার পাননি ট্রাম্প।
পরে অবশ্য মাচাদো তার নোবেল ট্রাম্পকে উৎসর্গ করেন। ট্রাম্পও তাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘আমি তার জন্য খুশি।’
মাচাদো কেন নোবেল পেলেন
নোবেল কমিটি জানিয়েছে, ভেনিজুয়েলার সাধারণ জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের আদায়ে উদ্বুদ্ধ করা এবং ন্যায়সঙ্গত ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে একনায়কতন্ত্র থেকে দেশকে গণতান্ত্রিক পথে নেওয়ার আন্দোলনের জন্য তাকে মনোনীত করা হয়েছে। গত এক বছর ধরে মাচাদোকে আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে। নিজের জীবনের গুরুতর হুমকি থাকা সত্ত্বেও তিনি দেশেই থেকে গেছেন, এমন একটি সিদ্ধান্ত যা লাখ লাখ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি তার দেশের বিরোধী দলকে একত্রিত করেছেন। ভেনেজুয়েলার সমাজের সামরিকীকরণ প্রতিরোধে তিনি কখনও দ্বিধা করেননি। গণতন্ত্রে শান্তিপূর্ণ উত্তরণের জন্য অবিচল ছিলেন মাচাদো।
নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান জর্গেন ওয়াটনে ফ্রিডনেস মাচাদোকে ‘রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত বিরোধীদলের মধ্যে ঐক্যের প্রতীক’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
মাচাদোর বিরুদ্ধে সমালোচনা
সমালোচকরা এখন মাচাদোর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টগুলো শেয়ার করছেন, যেখানে তিনি ইসরায়েল ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টির প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন। তাদের অভিযোগ, গাজায় গণহত্যা চালানো ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন দিয়েছেন তিনি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক আক্রমণের পর মাচাদো ইসরায়েলের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছিলেন। তবে কখনোই প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনিদের হত্যার পক্ষে অবস্থান নেননি তিনি। তবে তার দীর্ঘদিনের পোস্টগুলোতে এটা পরিষ্কার যে, তিনি নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন।
সমালোচকরা এমন এক পোস্টের বরাত দিয়ে বলেছেন, যেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘ভেনেজুয়েলার সংগ্রামই ইসরায়েলের সংগ্রাম।’ এর দুই বছর পর তিনি ইসরায়েলকে ‘স্বাধীনতার প্রকৃত মিত্র’ বলে অভিহিত করেন। এমনকি তিনি ক্ষমতায় এলে ভেনেজুয়েলার দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তর করবেন বলে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন।
শান্তিতে নোবেল দেওয়া দেশ নরওয়ের সংসদ সদস্য বিয়র্নার মক্সনেস বলেছেন, মাচাদো ২০২০ সালে ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির সঙ্গে একটি সহযোগিতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। এই লিকুদ পার্টি গাজায় গণহত্যার জন্য দায়ী। তাই এই পুরস্কার নোবেলের মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মুসলিম নাগরিক অধিকার সংগঠন— কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (সিএআইআর) এই সিদ্ধান্তকে ‘অবিবেচনাপ্রসূত ও অগ্রহণযোগ্য’ বলে সমালোচনা করেছে। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, এই সিদ্ধান্ত নোবেল কমিটির সুনাম ক্ষুণ্ন করেছে এবং তাদের পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটির উচিত এমন কাউকে সম্মান জানানো, যিনি নৈতিকভাবে দৃঢ় থেকেছেন এবং সবার জন্য ন্যায়ের পক্ষে লড়েছেন; যেমন সেই শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, কর্মী কিংবা চিকিৎসক, যারা নিজেদের জীবন ও পেশার ঝুঁকি নিয়ে আমাদের সময়ের সবচেয়ে ভয়াবহ অপরাধ গাজায় গণহত্যার বিরোধিতা করেছেন।’
ভেনেজুয়েলায় বিদেশি হস্তক্ষেপের আহ্বান
মাচাদো ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বিদেশি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছিলেন, নোবেল জয়ের পর এ নিয়েও তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। ২০১৮ সালে নিজ দেশের ‘শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের’ জন্য সহায়তা চেয়ে ইসরায়েল ও আর্জেন্টিনার নেতাদের চিঠি দিয়েছিলেন তিনি।
অনলাইনে চিঠির একটি অনুলিপি প্রকাশ করে মাচাদো লিখেছিলেন, ‘আজ আমি আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মৌরিসিও মাক্রি এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে চিঠি পাঠাচ্ছি, যাতে তারা নিজেদের প্রভাব ও শক্তি ব্যবহার করে ভেনেজুয়েলার মাদক ও সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত অপরাধী শাসনব্যবস্থাকে গুঁড়িয়ে দেয়।’