ট্রাম্পের শুল্কনীতি অবৈধ ঘোষণা: মার্কিন আদালত
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৩০ মে,শুক্রবার,২০২৫ | আপডেট: ১১:২৪ পিএম, ২ জুন,সোমবার,২০২৫

মার্কিন শুল্কনীতির প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক আমদানি-রফতানিতে | ছবি: রয়টার্স
নতুন মোড় নিয়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি সৃষ্ট উত্তেজনা। কারণ বাণিজ্যবিষয়ক মার্কিন এক আদালত ‘লিবারেশন ডে’ নামে পরিচিত ট্রাম্পের শুল্ক পরিকল্পনাকে অবৈধ বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আদালত বলছেন, আইনগতভাবে এ ধরনের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বিশ্লেষকরা বলছেন, আদালতের এ রায় হোয়াইট হাউজের জন্য বড় একটি ধাক্কা, যা ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্যনীতি বাস্তবায়নকে আরো কঠিন করে তুলবে। খবর এফটি।
ইউএস ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব ট্রেড গত বুধবার জানিয়েছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প যে জরুরি ক্ষমতা আইন ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী শুল্ক আরোপ করেছিলেন, সে পদক্ষেপ নেয়ার আইনগত কোনো ক্ষমতা তার ছিল না।
গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউজে ফিরে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর ব্যাপক হারে শুল্ক বসাতে থাকেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই নীতি অনুসারে, সর্বজনীনভাবে মার্কিন আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য হবে। এর মধ্যে চীনের ওপর রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বেড়ে দাঁড়ায় ১৪৫ শতাংশ। তবে বেশির ভাগ শুল্ক স্থগিত রেখে দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনায় যুক্ত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি ইস্পাত ও গাড়ি আমদানির মতো খাতভিত্তিক শুল্কের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ। তবে এ রায় মার্কিন করপোরেট সংস্থা, কংগ্রেসের শুল্কবিরোধী পক্ষ ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর দর কষাকষিতে আরো সাহস জোগাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আদালতের রায়ের ইতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্র ও এশিয়ার পুঁজিবাজারে। গতকাল এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ফিউচার সূচক বেড়েছে ১ দশমিক ৫ শতাংশ। ইউরোপিয়ান সূচক ইউরো স্টক ৫০ ফিউচার ১ শতাংশ, জাপানের নিক্কেই ২২৫ ১ দশমিক ৮, হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক দশমিক ৯ ও দক্ষিণ কোরিয়ার কসপি সূচক বেড়েছে ১ দশমিক ৮ শতাংশ। এছাড়া ৬টি মুদ্রার বিপরীতে মার্কিন ডলার দশমিক ৩ শতাংশ শক্তিশালী হয়েছে।
মূলত দুটি মামলার ভিত্তিতে বাণিজ্য আদালত ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি বিষয়ে এ রায় দিয়েছেন। মামলা দুটি করেছে মার্কিন ক্ষুদ্র ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর একটি জোট এবং ওরেগনের নেতৃত্বে ১২টি মার্কিন অঙ্গরাজ্য।
আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশগুলো আইনের পরিপন্থী এবং আমদানির ওপর শুল্ক আরোপের জন্য প্রেসিডেন্টকে যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, তা তিনি ছাড়িয়ে গেছেন।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় হোয়াইট হাউজের এক মুখপাত্র বলেন, ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা কীভাবে মোকাবেলা করতে হবে তা নির্ধারণ অনির্বাচিত বিচারকদের কাজ নয়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে অগ্রাধিকারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং এ সংকট মোকাবেলায় নির্বাহী ক্ষমতার প্রতিটি পথ ব্যবহার করবেন তিনি।’
অন্যদিকে আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন বিরোধীপক্ষ ডেমোক্র্যাটরা। ওরেগনের সিনেটর রন ওয়াইডেন বলেন, ‘আমি শুরু থেকেই বলে আসছি, প্রেসিডেন্টের শুল্ক ঘোষণাগুলো সংবিধানকে বিকৃত করছে। এসব শুল্ক আমদানি পণ্যের দাম বাড়িয়েছে, সরবরাহ সংকট সৃষ্টি এবং ছোট-বড় ব্যবসার জন্য ক্ষতির কারণ হয়েছে।’
ইউএস ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব ট্রেডের বিচারক জেন রেস্টানি বলেন, ‘শুধু রাজনৈতিক কারণে আমরা প্রেসিডেন্টকে এমন কিছু করতে দিতে পারি না, যা আইন তাকে অনুমতি দেয় না।’
ডোনাল্ড ট্রাম্পের আইনজীবীরা যুক্তি দেন, শুল্ক ঘোষণার পর অনেক দেশ বাণিজ্য চুক্তির জন্য আলোচনা শুরু করেছে। কিন্তু বিচারক জেন রেস্টানি উত্তর দেন, নীতিনির্ধারণ নিয়ে বিতর্ক আদালতের কাজ নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, শুল্ক নির্ধারণের ক্ষমতা কংগ্রেসের। ট্রাম্প প্রশাসন বলেছে, ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ইকোনমিক পাওয়ার্স অ্যাক্ট (আইইইপিএ) প্রেসিডেন্টকে জরুরি অবস্থায় শুল্ক আরোপের ক্ষমতা দেয়। গত ২ এপ্রিল নির্বাহী আদেশ জারির সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তি দেন, আমদানি-রফতানির অংশীদারদের সঙ্গে শুল্কজনিত ভারসাম্যহীনতা বিরাজ করেছে। এছাড়া বিদেশী নীতির কারণে মার্কিন শ্রমবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিষয়গুলো জাতীয় অর্থনীতির জন্য অস্বাভাবিক ও গুরুতর হুমকি।
অবশ্য গত জানুয়ারির পর থেকে ঘোষিত বেশির ভাগ শুল্ক আপাতত স্থগিত রেখেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সর্বশেষ ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েনের সঙ্গে আলোচনার পর তিনি অঞ্চলটির ওপর আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্ক ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেছেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও চীন ৯০ দিনের জন্য রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মোবাইল ফোন ও ইলেকট্রনিক পণ্যের ওপর শুল্ক অব্যাহত রাখা হলেও ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, এটি অস্থায়ী।
এদিকে ফেডারেল রিজার্ভ কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে ‘নিরাপদ বিনিয়োগ আশ্রয়স্থল’ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মর্যাদা হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা দেশটির অর্থনীতির ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে।
চলতি মাসের শুরুতে অনুষ্ঠিত ফেডারেল ওপেন মার্কেট কমিটির বৈঠকে বলা হয়, শুল্ক আরোপের পর মার্কিন ট্রেজারি বন্ড, স্টক ও ডলারের দাম একসঙ্গে পড়ে যায়। অথচ অতীতে এ রকম বাজার অস্থিরতার সময় বিনিয়োগকারীরা ডলার ও মার্কিন সম্পদে আশ্রয় খুঁজতেন। চলমান প্রবণতা যদি স্থায়ী হয়ে যায় অথবা মার্কিন সম্পদের নিরাপদ আশ্রয় ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে তা অর্থনীতির ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে।
এ বিষয়ে কংগ্রেসনাল বাজেট অফিসের পরিচালক ফিলিপ সোয়াজেল বলেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আন্তর্জাতিক মূলধন প্রবাহ সরে যায়, তবে তা প্রবৃদ্ধি কমাবে, চাকরি সংকুচিত করবে এবং সরকারকে ঋণ বাবদ আরো বেশি সুদ দিতে হবে।’