মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোকে খণ্ড-বিখণ্ড করার ইসরাইল-মার্কিন ষড়যন্ত্র ফাঁস
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৭ জানুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২৫ | আপডেট: ০২:২৯ পিএম, ৮ জানুয়ারী,
বুধবার,২০২৫
ইরাকের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং ইসলামিক দাওয়া পার্টির সেক্রেটারি জেনারেল নুরি আল-মালিকি, পশ্চিম এশিয়ার মুসলিম দেশগুলোকে খণ্ড-বিখণ্ড করার এবং ইরাকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে ইসরাইলের ঘৃণ্য পরিকল্পনার বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছেন।
প্রকৃতপক্ষে, পশ্চিম এশিয়া অঞ্চল জটিল ও সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গাজা ও লেবাননের বিরুদ্ধে ইসরাইলি আগ্রাসনের পর, ইসরাইল-মার্কিন পরিকল্পনায় সিরিয়ার আসাদ সরকারেরও পতন ঘটে এবং বিস্ময়করভাবে সন্ত্রাসী ও সশস্ত্র বিরোধী দল সিরিয়ার ক্ষমতা দখল করে। পার্সটুডে জানায়, সিরিয়ার দৃশ্যপটের এ পরিবর্তনে এ অঞ্চলের দেশগুলো খুবই উদ্বিগ্ন উদ্বেগ এবং সবার মধ্যে সতর্কতা বেড়েছে।
এ পরিস্থিতিতে, নুরি আল-মালিকি ইহুদিবাদী ইসরাইলের আরও আগ্রাসন এবং সীমানা পুনর্নির্মাণের পরিকল্পনার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, আশঙ্করা করা হচ্ছে, এই অঞ্চলের ব্যাপারে শত্রুদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হল প্রথম ধাপে মুসলিম দেশগুলোকে ভেঙে ছোট ছোট দেশে পরিণত করা এবং পরবর্তী ধাপে সরকারগুলোর প্রকৃতি পরিবর্তন করা। এ ধরনের কৌশল বাস্তবায়নে ইহুদিবাদী ইসরাইল উপকৃত হবে। কারণ একদিকে বৃহৎ মুসলিম দেশগুলো খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে ছোট ছোট দেশে পরিণত হবে, অন্যদিকে এই ছোট দেশগুলোকে ইচ্ছে মতো ইসরাইল ও পশ্চিমাদের পথে পরিচালনা করা যাবে। অর্থাৎ এ দেশগুলোকে এমনভাবে আপোস বা নতজানু হয়ে চলতে বাধ্য করা যাবে যেমনটি বর্তমানে পারস্য উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আপোককামী মনোভাব দেখা যাচ্ছে। এরই মধ্যে কিছু আরব দেশ ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে এবং তারা এখন আর ইসরাইলের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেনা। এসব দেশে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিও রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাগদাদের জুমার নামাজের ইমাম আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ ইয়াসিন আল-মুসাভি এই অঞ্চলের বিরুদ্ধে শত্রুদের নতুন চক্রান্তের কথা উল্লেখ করে স্পষ্ট করে বলেছেন: এই চক্রান্তের উদ্দেশ্য হল ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, জর্দানসহ এই অঞ্চলের মুসলিম দেশগুলোকে খণ্ড-বিখণ্ড করা এবং আমেরিকা ও তার মিত্রদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়া।
বাগদাদের জুমার নামাজের ইমাম জোর দিয়ে বলেছেন: এই অঞ্চলে যা কিছু ঘটছে তা সুন্নি, শিয়া কিংবা কুর্দিদের সুবিধার জন্য নয় বরং এটি একটি গভীর মার্কিন ষড়যন্ত্রের অংশ যা আমেরিকা এবং তার মিত্রদের স্বার্থ রক্ষা করবে।
তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল-মার্কিন ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র বুঝতে হলে কয়েকটি বিষয়ের দিকে নজর দিতে হবে। এগুলোর মধ্যে একটি হল এ অঞ্চলের সরকারগুলোর বিরুদ্ধে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে উস্কানি দেয়া এবং আপোসকামিতার বিরোধী ও স্বাধীন গোষ্ঠীগুলোকে নির্মূল করা। আরেকটি বিষয় হল ইরাকের অভ্যন্তরে বিভেদ সৃষ্টি করা এবং জনপ্রিয় গোষ্ঠীগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনা।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে, আমেরিকা এবং তাদের মিত্ররা ইরাকের জনপ্রিয় সংগঠন হাশদ আশ-শাবি ভেঙে দেওয়ার বিষয়টি উত্থাপন করেছে। এমনকি ইরাক সরকারকে ইরাককে সিরিয়ার মতো পরিস্থিতিতে পরিণত করাসহ হাশদ আশ-শাবিকে ভেঙে না দেওয়ার পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় এ অঞ্চলের দেশগুলোর অস্তিত্বের বিরুদ্ধে যে ভয়াবহ ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে তার বিরুদ্ধে সরকার ও জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতা জরুরি হয়ে পড়েছে।
পরিশেষে, এটা জোর দিয়ে বলা যায় যে এই অঞ্চলের স্বাধীন দেশগুলোর বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী-মার্কিন ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল মুসলিম দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ অবস্থান। এখনই সতর্ক না হলে পশ্চিম এশিয়ার মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্য ভয়াবহ দুর্ভোগ অপেক্ষা করছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। #