মুক্তির পর ইসরায়েলি নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন আল-শিফা পরিচালক
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১ জুলাই,সোমবার,২০২৪ | আপডেট: ০৪:৪০ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
ইসরায়েলে বন্দি ফিলিস্তিনিরা ১ জুলাই মুক্তির পর আল-আকসা শহীদ হাসপাতালে চেক-আপের জন্য পৌঁছন। ছবি : এএফপি
গাজা উপত্যকার সবচেয়ে বড় হাসপাতালের প্রধান সাত মাসের বেশি সময় বন্দি থাকার পর সোমবার মুক্তি পেয়েছেন। বন্দিদশায় ইসরায়েলের ‘নির্যাতনের’ শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। তার সঙ্গে এদিন ৫০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি মুক্তি পেয়েছেন।
একজন ইসরায়েলি মন্ত্রী এবং অবরুদ্ধ অঞ্চলের একটি চিকিৎসা সূত্র জানিয়েছে, আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়াসহ ৫০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
তারা চিকিৎসার জন্য গাজায় ফিরে গেছেন। এ ছাড়া খান ইউনিসে অবস্থিত গাজা ইউরোপীয় হাসপাতাল জানিয়েছে, তাদের অর্থোপেডিক ইউনিটের প্রধান বাসাম মিকদাদও এদিন মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন।
মুক্তি পেয়ে সালমিয়া বলেন, আটকের সময় তাকে ‘কঠোর নির্যাতন’ করা হয়েছে। তার একটি আঙুল ভেঙে গেছে।
বন্দিদের সব ধরনের নির্যাতন করা হয় জানিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বেশ কিছু বন্দি জিজ্ঞাসাবাদকেন্দ্রে মারা গেছে এবং খাবার ও ওষুধ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।’
সালমিয়া বলেন, ‘দুই মাস ধরে কোনো বন্দি দিনে একটি রুটির বেশি খায়নি। আটকদের শারীরিক ও মানসিকভাবে অপমান করা হয়েছে।’ তবে হাসপাতাল প্রধান জানান, তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি।
ইসরায়েলি বাহিনী আল-শিফায় বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছিল। তার একটি অভিযানে সালমিয়াকে আটক করা হয়েছিল। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর গাজায় আক্রমণ শুরু করে দেশটি। এর পর থেকে ক্রমাগত অভিযান চালিয়ে হাসপাতালটির অনেকাংশকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে।
দেইর আল-বালাহের আল-আকসা হাসপাতালের একটি মেডিক্যাল সূত্র জানিয়েছে, সালমিয়া ও অন্যান্য মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিরা ইসরায়েল থেকে গাজায় খান ইউনিসের পূর্বে ফিরে গেছেন।
পাঁচজন বন্দিকে আল-আকসা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং অন্যদের খান ইউনিসের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। দেইর আল-বালার একজন এএফপি সংবাদদাতা কিছু বন্দিকে তাদের পরিবারের সঙ্গে আবেগপূর্ণ পুনর্মিলনে দেখেছেন।
এদিকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা মুক্তির বিষয়টি ‘যাচাই’ করছে। তবে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গভির এক্সে এক পোস্টে সালমিয়াসহ অন্যদের সম্পূর্ণভাবে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর অভিযোগ, গাজা উপত্যকার হাসপাতালগুলোর আড়ালে থেকে হামাস সামরিক অভিযান পরিচালনা করে। আল-শিফা ও অন্যান্য হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে তারা সুড়ঙ্গ ও অন্যান্য অবকাঠামো খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছে। ২০০৭ সাল থেকে অঞ্চলটি পরিচালনা করা ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটি ইসরায়েলি সেনাদের এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এর আগে মে মাসে ফিলিস্তিনি অধিকার গোষ্ঠীগুলো বলেছিল, আল-শিফার একজন জ্যেষ্ঠ সার্জন আটক হওয়ার পর ইসরায়েলি কারাগারে মারা গেছেন। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই মৃত্যুর বিষয়ে কিছু জানে না বলে জানিয়েছিল।
ইসরায়েলি পরিসংখ্যান অনুসারে, হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলায় এক হাজার ১৯৫ জন নিহত হয়েছিল। সেই হামলার পর গাজা উপত্যকারজুড়ে যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েল। হামাস পরিচালিত গাজায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধে ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক আক্রমণে কমপক্ষে প্রায় ৩৭ হাজার ৯০০ জন নিহত হয়েছে। দুই পক্ষের নিহতদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।
সূত্র : এএফপি