প্রভাবশালীদের আইনের আওতায় আনা হবে: দুদক
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৭ আগস্ট,শনিবার,২০২৪ | আপডেট: ০৭:৪৬ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
অনিয়ম ও দুর্নীতি দমনে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) স্বাধীন ও কার্যকর ভূমিকা রাখবে এমন প্রত্যাশা করা হলেও বাস্তবে তা পূরণ করতে পারেনি সংস্থাটি। টানা সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এবার প্রভাবশালীদের আইনের আওতায় আনতে চায় তারা।
প্রভাবশালীদের বদলে চুনোপুঁটি ধরে সমালোচিত হওয়া দুদক গত মে ও জুন মাসে আলোচিত কয়েকজন প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে। যার মধ্যে রয়েছে ‘ছাগল কাণ্ডে’ নাম আসা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। এছাড়া করোনা রিপোর্ট জালিয়াতি কাণ্ডে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) ডা. আবুল কালাম আজাদ, সাদিক এগ্রোর মালিক ইমরান হোসেনের নামে মামলা করেছে দুদক। মধ্য জুলাই থেকে দুদকের কার্যক্রমে কিছুটা ধীর গতি দেখা যায়। এসময় কমিশনের মামলা, অভিযোগপত্র কিংবা অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত ছিল কম।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পর থেকে বড় পরিবর্তন এসেছে সরকার এবং ক্ষমতাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে। এসব প্রতিষ্ঠানের কেউ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন নয়তো বদলি করে, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে বা বাধ্যতামূলক অবসর দিয়ে অন্যদের আনা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দুদকের শীর্ষ পদে থাকা তিন কর্মকর্তাকে (চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনার) নিয়েও শুরু হয়েছে গুঞ্জন। যদিও সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, দুদকের শীর্ষ পদে নিয়োগ অন্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় ভিন্নতর ও সময় সাপেক্ষ হওয়ায় বর্তমান কমিশনকে রেখেই দুর্নীতি দমন কার্যক্রম চালাতে চায় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
তবে দুদক চেয়ারম্যান, কমিশনার ও সচিবকে পদত্যাগের জন্য আলটিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
দুদক সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদত্যাগ নয়, ছাত্র-জনতার আস্থা অর্জনে নির্ভয়ে কাজ করতে ইচ্ছুক দুদকের হাইকমান্ড। এ জন্য বিগত সরকারের দুর্নীতিবাজ শীর্ষ আমলা-মন্ত্রী ও অনিয়মে জড়িত ব্যবসায়ীদের দুর্নীতি অনুসন্ধান শুরু করেছে সংস্থাটি।
আসাদুজ্জামান খান, নাফিজ সরাফাত ও এস আলমের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তার পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসে নিয়োগ বাণিজ্য করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
অনুসন্ধান দলে আরও রয়েছেন দুদকের উপপরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদিন, সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, মোহাম্মদ জিন্নাতুল ইসলাম ও মো. নাছরুল্লাহ হোসাইন।
আসাদুজ্জামান খান ছাড়াও যাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে তারা হলেন মন্ত্রীর সাবেক পিএস ও অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব হারুন অর রশিদ বিশ্বাস, যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোল্লা ইব্রাহিম হোসেন, সহকারী একান্ত সচিব মনির হোসেন ও জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু। জানা গেছে, দুদকের তদন্ত দলকে সার্বক্ষণিক একটি গাড়ি সরবরাহ করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ে অভিযুক্তদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান করার নির্দেশনা রয়েছে।
এ বিষয়ে দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে আসাদুজ্জামান খান ও তার সহযোগীরা সিন্ডিকেট করে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসে নিয়োগ দিতেন। আসাদুজ্জামান খান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই ঘুস হিসেবে বস্তা বস্তা টাকা নিতেন। পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিস থেকে এই টাকা আদায় করা হতো। এজন্য তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব ড. হারুন অর রশীদ বিশ্বাসের নেতৃত্বে সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে হারুন অর রশীদ অবসরে গেলেও এই মন্ত্রণালয়ের সব ঘুস দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। ঝুঁকি এড়াতে টাকাগুলো পাঠানো হয়েছে দেশের বাইরে।
এছাড়া অনুসন্ধান শুরু হয়েছে আলোচিত ব্যবসায়ী সাইফুল আলম (এস আলম) ও পদ্মা ব্যাংকের পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের বিরুদ্ধে। এই দুই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে দেশের ব্যাংকগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ রয়েছে। এস আলমের দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদকের উপ-পরিচালক ইয়াসিন আরাফাতের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদকের উপ-পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেনকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
দুদক সূত্রে আরও জানা যায়, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ) একাধিক প্রভাবশালীর সম্পদের তথ্য চাওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এসব তথ্য পাওয়া গেলে আরও প্রভাবশালীর দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করতে পারে দুদক। যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সদ্য পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, সাবেক ডাক, টেলিযোগযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ঢাকা ওয়াসার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী প্রমুখ।