avertisements 2

অস্ট্রেলিয়ার পোশাক বিক্রেতা ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশের কাছে ক্রয়াদেশ স্থগিত বা ডিসকাউন্ট চায়

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৪ মে,বৃহস্পতিবার,২০২০ | আপডেট: ১১:১১ এএম, ১৪ মে,মঙ্গলবার,২০২৪

Text

অস্ট্রেলিয়ার খুচরা পোশাক বিক্রেতা ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশের কাছ থেকে পোশাক ক্রয়াদেশ বাতিল করছে, অর্থ পরিশোধে দেরি করছে, অথবা কোটি কোটি টাকার পোশাকে বড় অঙ্কের ডিসকাউন্ট দাবি করছে। ফলে ব্যপক চাপে পড়েছে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প কারখানাগুলো। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এই প্রবণতার ফলে বিশ্বের সবচেয়ে স্বল্প মজুরির গার্মেন্ট শ্রমিকরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অস্ট্রেলিয়ার এবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে বিশদভাবে এসব বলা হয়েছে।

খবরে বলা হয়, অস্ট্রেলিয়ান খুচরা পোশাক বিক্রেতা কোম্পানি মোজাইক ব্রান্ডস প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার মূল্যের ক্রয়াদেশ বাতিল করেছে কিংবা অর্থ দিতে দেরি করছে। অস্ট্রেলিয়ার এই শীর্ষ কোম্পানির কিছু ইমেইল হাতে পেয়েছে এবিসি, যেখানে দেখা যায় যে, প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোকে বলছে কিছু ক্রয়াদেশের অর্থ প্রদান করতে ৮ মাস লেগে যেতে পারে। কেমার্ট নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে ফরমায়েশকৃত পোশাকের মূল্যের ওপর ৩০ শতাংশ ডিসকাউন্ট চেয়েছে। তবে কারখানা থেকে এতে রাজি না হয়, পিছু হটেছে প্রতিষ্ঠানটি।

কিন্তু অ্যাডিডাস, এইচঅ্যান্ডএম, মার্ক্স অ্যান্ড স্পেন্সার, নাইকি ও ইউনিকল্প্র মতো ব্রান্ডগুলো ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে বা উৎপাদনে রয়েছে এমন ক্রয়াদেশের পূর্ণ মূল্য পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিজিএমইএ’র প্রেসিডেন্ট রুবানা হক বলেন, কিছু অস্ট্রেলিয়ান প্রতিষ্ঠানের আচরণ ছিল ‘আশ্চর্য্যজনক।’ তিনি বলেন, উত্তর আমেরিকা বা ইউরোপিয়ান কোম্পানিগুলোর চেয়ে অস্ট্রেলিয়ার অবস্থা ভালো। তাদের ব্যবসা অতটা বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তাই আমরা যখন শুনলাম যে তারা ৩০ শতাংশ ডিসকাউন্ট চেয়েছে, আর ৩০ শতাংশ অর্ডার বাতিল চেয়েছে, আমরা বেশ বিস্মিত হয়েছি।

তিনি বলেন, ছয় মাসের বেশি অর্থ ছাড় আটকে রাখাও অগ্রহণযোগ্য। মোজাইক ব্র্যান্ডস-এর একজন মুখপাত্র বলেছেন, সাপ্লাইয়ারদের সঙ্গে কাজ করতে তারা অঙ্গীকারাবদ্ধ। তিনি বলেন, ‘কভিড-১৯ মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আমাদের সকল সাপ্লাই পার্টনারের সঙ্গে কাজ করছি যেন এমন সমঝোতায় আসতে পারি যা সকলের জন্য সন্তোষজনক হয়।’ কেমার্ট নামে একটি কোম্পানি ৩০ শতাংশ ডিসকাউন্ট দাবি করে পরে পিছিয়ে আসে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ক্রয়াদেশ দেওয়া সকল পণ্য তারা গ্রহণ করবে ও পূর্ণ টাকা দেবে। তবে শর্ত হচ্ছে, নতুন একটি ডেডলাইন আরোপ করা হয়েছে, যার মধ্যে অবশ্যই ওই পণ্য সরবরাহ করতে হবে। অন্যথায় অর্ডার কোনো দায় ছাড়াই বাতিল হয়ে যাবে। কেমার্টের অন্তত একজন সাপ্লাইয়ার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, তাদের সময়সীমার মধ্যে ওই পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। এবিসি জানায়, কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেওলিয়া না হয়ে গেলে, আদেশ করা পণ্য বাতিল করার ঘটনা সম্পূর্ণ নজিরবিহীন। কটন অন নামে আরেক প্রতিষ্ঠানও অর্ডার বাতিলের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে ১.৮ কোটি ডলার মূল্যের অর্ডার বাতিল করতে চেয়েছিল।

তবে সেই সিদ্ধান্ত পরে বাতিল করে প্রতিষ্ঠানটি। এদিকে শ্রমিক সংগঠক নাজমা আক্তার বলেছেন, ইতিমধ্যে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। আরও ১০ লাখ শ্রমিক আগামী কয়েক মাসে চাকরি হারাতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘ব্রান্ড থেকে শুরু করে সাপ্লাইয়ার, কেউই শ্রমিক ও শ্রমিকদের জীবিকা নিয়ে ভাবছেন না। কেউই তাদের জন্য ভালো কিছু করছে না।’ নাজমা বলেন, বেশ গার্মেন্ট শ্রমিকদের সিংহভাগ হলেন নারী। তারা ইতিমধ্যেই দারিদ্র্যতার দ্বারপ্রান্তে বসবাস করেন। তিনি বলেন, ‘প্রথমত, এই দায় যাওয়া উচিৎ ব্রান্ডের ওপর। কারণ তারা যখন ক্রয়াদেশ বাতিল করেন, বা স্থগিত করেন, তখন তারা শ্রমিক বা সাপ্লাইয়ারের কথা ভাবেন না।’ তবে তিনি এ-ও বলেন, এ ধরণের জরুরী অবস্থায় শ্রমিকরা যেন সুরক্ষিত থাকতে পারেন, সেই যথাযথ আর্থিক কাঠামো থাকা উচিৎ ছিল সাপ্লাইয়ারদের। তবে রুবানা হক বলছেন, এ ধরণের মহামারির সময় চালানোর জন্য আলাদা সঞ্চয় থাকবে কারখানার, এমনটা অবাস্তবসম্মত।

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘প্রথমত, আমরা এত দ্রুত বেড়েছি যে আমাদের বেশিরভাগ মুনাফাই আমরা পুনরায় বিনিয়োগ করেছি। আমাদের বিশ্বমানের উৎপাদন সরঞ্জাম ও স্থাপনা আছে। ফলে ৩ মাসের বেতন আলাদা করে রাখা আমাদের জন্য কঠিন।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রতি মাসে শ্রমিকদের বেতন দেয় ৪২ কোটি ডলার। সুতরাং এই সময়ে বিপুল অঙ্কের অর্থ আলাদা করে রাখা সম্ভব নয়। শ্রমিক অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন অক্সফামের শ্রমিক অধিকার বিষয়ক মুখপাত্র সারাহ রোগান বলেন, পুরো উৎপাদন খরচের মধ্যে শ্রমিকদের বেতনভাতার হার অত্যন্ত কম। তিনি বলেন, ‘একটি পোশাকের খুচরা মূল্যের মাত্র ৪ শতাংশ ব্যয় হয় শ্রমিকের বেতনের পেছনে। ১০ ডলারের টি-শার্টে মাত্র ৪০ সেন্ট যায় শ্রমিকদের পকেটে।

ফলে অস্ট্রেলিয়ার বড় বড় ব্রান্ডগুলো এই অর্থ দিতে না পারার কোনো কারণ নেই।’ রোগান বলেন, যদিও শ্রমিকরা কারখানায় কর্মরত, তবুও তাদের বেতন নিশ্চিতের দায় ব্রান্ডগুলোর ওপরও পড়ে। তিনি আরও বলেন, এই মহামারির সময়ে শ্রমিকদের বেতন নিয়ে কী করা হবে ও ক্রয়াদেশ গ্রহণ করবে কিনা, সেই বিষয়ে অক্সফাম থেকে বিভিন্ন ব্রান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু একটি ব্রান্ডও কোনো উত্তর বা সাড়া দেয়নি। মানবজমিন -এবিসি নিউজ

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2