অস্ট্রেলিয়ার কোয়ালা কি বিলীন হচ্ছে?
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৮ ফেব্রুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২০ | আপডেট: ১১:০৩ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
অস্ট্রেলিয়াতে এ বছরের দাবানলে প্রচুর কোয়ালা মারা পড়েছে। এছাড়া চোরাকারবারিরা প্রতিনিয়তই কোয়ালা মারছে। সবমিলিয়ে রীতিমতো অস্তিত্ব হুমকির মুখে তাদের। আবার দাবানল নামক নরকের মাঝেই অস্ট্রেলিয়া কোয়ালা হত্যায় মেতে ওঠে। পৃথিবীতে অনেক প্রাণী আছে বিশ্বের সব দেশেই যাদের দেখা মেলে। অথচ কোয়ালা এমন এক প্রাণী পৃথিবীর আর কোথাও যাদের প্রাকৃতিক বিচরণ নেই।
এই প্রাণীটিকে টেলিভিশনের কল্যাণে অনেকে দেখলেও তাদের সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই। শান্তশিষ্ট এর প্রাণী মানুষের সাথে বন্ধুসুলভ। অস্ট্রেলিয়ার এক আইকনিক প্রাণী। অথচ এর অস্তিত্ব আজ বিলীনের পথে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। কোয়ালা এক ধরনের মারসুপিয়াল অর্থাৎ ক্যাঙ্গারুর মতো থলিযুক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণী। সেই হিসেবে এরা ক্যাঙ্গারুর জাতভাই। তারা ক্যাঙ্গারুর মতো দেখতে নয়, তবে কোয়ালাও ক্যাঙ্গারুর মতো বাচ্চাকে পেটের মধ্যে একটা আলাদা থলেতে বহন করে।
এই থলেতেই মায়ের পেটে বাচ্চাটা বড় হয়। কোয়ালা একটামাত্র জোয়িকে বহন করতে পারে। কোয়ালার থলের মধ্যের সেই বাচ্চাটাকে জোয়ি বলে। এ বিশেষ নামের কারণ হল, কোয়ালার বাচ্চা জন্মের পরে একদম জেলি বিনের মতো দেখতে হয়। তারা তখন চোখে দেখে না, ওদের তখন কানও থাকে না। এইভাবেই তারা মায়ের পেট থেকে বের হয়। মায়ের থলের মধ্যে জোয়িরা সাত মাস কাটায়। জন্মের পরে যখন তারা প্রথম মায়ের থলেতে আসে তখন তাদের শুধু ঘ্রাণশক্তি আর স্পর্শশক্তি থাকে। বাকি সবকিছুর গঠন হয় এই সাত মাসে মায়ের থলের ভিতরে।
থলের মধ্যে বাচ্চাগুলো যখন ছয় মাস পার করে তখন তাদের মায়েরা প্যাপ নামের একটি বিশেষ পদার্থ তৈরি করে। এই পদার্থটি জোয়িদের খাওয়ানো হয়। মায়েদের পেটের অন্ত্রে অবস্থিত কিছু ব্যাকটেরিয়াকে জোয়িদের অন্ত্রে দিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে জোয়িরা ইউক্যালিপটাস গাছের পাতা খেয়ে হজম করতে পারে। কোয়ালারা আকারে অনেক ছোট। ক্যাঙ্গারুর মতো লাফালাফিও করে না বললেই চলে। তাদের চলাফেরা দেখলে খুবই অলস মনে হয়। কিন্তু এদের শরীরের পেশি বেশ মজবুত। শারীরিক শক্তির ওপর নির্ভর করে এরা অস্ট্রেলিয়ার জঙ্গলের গাছগুলোতে রাজত্ব করে বেড়ায়।
ইউক্যালিপটাস অরণ্য কোয়ালাদের প্রধান আশ্রয়স্থল। এই গাছের পাতা খেয়ে থাকে এরা। কোয়ালার মতো খুব কম স্তন্যপায়ী আছে যারা ইউক্যালিপটাস পাতা হজম করতে পারে, কারণ ইউক্যালিপটাস পাতায় অনেক বিষাক্ত ফেনল ও তেল জাতীয় পদার্থ থাকে। এই গাছটিতে অধিক পরিমাণে তেল থাকায় এটা বেশ দাহ্য এবং এর আবাসভূমি অস্ট্রেলিয়াতে একে অগ্নি সৃষ্টিকারী হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। আর এই ভয়ংকর পাতা তারা খুব আনন্দের সাথেই খেয়ে থাকে। এই গাছের পাতা খেয়েও তাদের তেমন পানি খাওয়ার প্রয়োজন হয় নাহ।
এদের ‘কোয়ালা’ নামটি সম্ভবত এখানকার আদিবাসীদের দেয়া। যার অর্থ ‘নো ড্রিঙ্ক’ বা ‘পানবিমুখ’। প্রাণী হিসেবে এদের বৈশিষ্ট্য বিচিত্র। এরা খুবই আরামপ্রিয় এবং শান্ত প্রাণী। কারণ এরা ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুমিয়ে কাটাতে পারে। কোয়ালারা দেখতে বেশ ছোটখাটো প্রাণী। প্রাপ্ত বয়সে ২০ পাউন্ডের মতো ওজন হয়। কোয়ালা বেঁচে থাকে প্রায় ২০ বছর। এই প্রাণীদের খাবারের চাহিদা সামান্য এবং তা যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যায়। তারা কারো জন্যে ক্ষতিকর নয়। তারপরও কোয়ালারা বাস করছে ঝুঁকির মুখে। প্রতিবছর চোরা শিকারীরা নির্বিচারে হত্যা করে অসংখ্য কোয়ালা। লোভীদের হাত থেকে নিরাপদে থাকুক প্রকৃতির এই শান্ত প্রাণীরা। সূত্র : ইন্টারনেট