জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস এবং বাংলাদেশের সাংবিধানিক সংকট: ১৯৭২ সালের সংবিধানের ত্রুটি ও সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১১ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪ | আপডেট: ০৬:৩৭ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
১০ই নভেম্বর, ২০২৪, অস্ট্রেলিয়া: ১৯৭১ এর যুদ্ধ পরবর্তী স্বাধীন-সর্বভৌম বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও গণ-মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান দিবস এবং বাংলাদেশের সাংবিধানিক সংকট: ১৯৭২ সালের সংবিধানের ত্রুটি ও সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা শীর্ষক একটি বিশেষ আলোচনা সভার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) অস্ট্রেলিয়া আয়োজন করে। সভায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসন মজলুম দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তির জন্য দোয়া এবং বাংলাদেশে সাংবিধানিক সংকট ও ঊত্তরণের পথ নিয়ে আলোচনা হয়।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মো. রাশেদুল হক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জাতীয় নির্বাহী কমিটি । অনুষ্ঠানটি লাকাম্বা লাইব্রেরী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের অস্ট্রেলিয়া শাখার সভাপতি এফএম তাওহীদুল ইসলাম এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের অস্ট্রেলিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হায়দার আলী। বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অমি ফেরদৌস।
বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের অস্ট্রেলিয়া শাখার সহ সভাপতি সেলিম লিয়াকত, ফয়জুর চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল অস্ট্রেলিয়া শাখার আহবায়ক মশিউর রহমান তুহিন, জাতীয়তাবাদী যুবদল অস্ট্রেলিয়া শাখার আহবায়ক জাহাঙ্গীর আলম, শরিফুল ইসলাম শিবলী, খাদিজা জামান রুম্পা এবং ইন্জিনিয়ার রেজয়ানোর রহমান রুপন।
অনুষ্ঠানটি পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত ও দোয়া দিয়ে শুরু হয়, পরিচালনা করেন অস্ট্রেলিয়া বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন।
অনুষ্ঠানে সংবিধান বিষয়ে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর সহকারী অধ্যাপক সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয় এর পিএইচডি ফেলো এম এ সাঈদ।
এম এ সাঈদ এই নিবন্ধটি বাংলাদেশের চলমান সাংবিধানিক সংকটের আলোচনা করেন, যার মূল উৎস ১৯৭২ সালের ত্রুটিপূর্ণ সংবিধানে। এতে বলা হয়েছে যে, সংবিধানটি জনগণের দ্বারা গৃহীত হয়নি, বরং একটি রাজনৈতিক দল দ্বারা প্রণীত হওয়ায় এটি ত্রুটিপূর্ণ হয়েছে । ৭২ এর সংবিধানের অনেক সমস্যার মধ্যে অন্যতম হলো এর সংশোধনী প্রক্রিয়া অনেক সহজ ও বিপজ্জনক। এটা খুব সহজে উপেক্ষিত এবং সহজেই পরিবর্তন করা যায় বিধায় এই সংবিধান নিজেই নিজেকে রক্ষা করতে পারে না। লেখক জোর দেন যে, এই সংশোধনী প্রক্রিয়া পরিবর্তন না হলে টেকসই সংস্কার সম্ভব নয়।
সংবিধানের মূলত তিনটি মৌলিক উপাদান থাকে, যথা রাষ্ট্রের পরিচয়, নাগরিক অধিকার এবং কাঠামো। তিনি দাবি করেন যে, এই তিন ধরনের উপাদানের মধ্যেই পরিবর্তন আনতে হবে।
রাষ্ট্রের পরিচয় সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি দাবি করেন যে, বাংলাদেশের নাম "পিপল'স রিপাবলিক" হতে পারে না। এর কারণ হলো, "রিপাবলিক" শব্দটির মধ্যেই "পিপল" বা জনগণের ধারণা অন্তর্ভুক্ত, তাই "পিপল'স" শব্দটি যোগ করার প্রয়োজন নেই। "পিপল'স রিপাবলিক" নামটি মূলত সোভিয়েত রাজনৈতিক প্রভাবের বহিঃপ্রকাশ, যা চীন এবং উত্তর কোরিয়ার মতো একনায়কতান্ত্রিক দেশগুলো ব্যবহার করে। উপরন্তু, এই নাম ব্যবহারের ফলে বাংলাদেশি রিপাবলিকান রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সংবিধান এখানে ফুটে ওঠেনি। রিপাবলিকানিজমের মূল ধারণা হলো নাগরিক পরিচয়, যা জাতিগত পরিচয়ের চেয়ে অগ্রাধিকার পায়। তাই একটি প্রকৃত রিপাবলিকান রাষ্ট্র গড়তে হলে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ধারণা এই নাগরিকত্বের ভিত্তিকে শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে।
সাংবিধানিক কাঠামোর ক্ষেত্রে, লেখক ক্ষমতার বিভাজন ও নিয়ন্ত্রণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, শুধুমাত্র আইনসভায় পরিবর্তন আনার প্রস্তাবনা যথেষ্ট নয় এবং এটি কাঠামোগতভাবে অসম্পূর্ণ। কারণ, আইনসভার পরিবর্তন নির্বাহী শাখার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য পর্যাপ্ত নয়। এজন্য লেখক একটি চতুর্থ শাখা প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দেন, যা হবে স্বতন্ত্র এবং নির্বাহী শাখার কার্যক্রমের ওপর নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য রক্ষার দায়িত্ব পালন করবে।
উদাহরণ হিসেবে তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের কথা তুলে ধরেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে, যা নির্বাহী শাখার সিদ্ধান্তগুলো পর্যালোচনা ও মূল্যায়নের ক্ষমতা রাখে।
ফেডারেলিজমের বিষয়ে উল্লেখ করেন যে, আমাদের দেশে ফেডারেলিজম সম্পর্কে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে, তা হলো—ফেডারেলিজম গ্রহণ করলে বিচ্ছিন্নতার ঝুঁকি বাড়বে। তিনি এই ধারণার সমালোচনা করে বলেন যে, ফেডারেলিজম বরং বিচ্ছিন্নতার ঝুঁকি কমাবে এবং একইসঙ্গে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এবং অধিকার সংরক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করবে। এ প্রসঙ্গে তিনি নেপালের উদাহরণ তুলে ধরেন, যেখানে ফেডারেল রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
শেষে, লেখক একটি গণতান্ত্রিক ও কঠোর সংশোধনী প্রক্রিয়ার জন্য আহ্বান জানান, যেখানে গণভোটের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। তিনি যুক্তি দেন যে, এই পরিবর্তনগুলো সাধারণ সংসদ দ্বারা করা উচিত নয়, বরং একটি দলনিরপেক্ষ গণভোটের মাধ্যমে করতে হবে, যাতে ৭২ সালের সংবিধানের দুষ্টচক্র থেকে বের হতে পারা যায়।
অনুষ্ঠানে এছাড়াও, বিএনপির কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং বিভিন্ন স্টেট থেকে অসংখ্য নেতাকর্মী জুমের মাধ্যমে সংযুক্ত ছিলেন।