avertisements 2

পাঁচ মাসে ২২ হাজার কোটি টাকা জব্দ : বিএফআইইউ

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৫ জানুয়ারী, বুধবার,২০২৫ | আপডেট: ০৭:২৩ পিএম, ১৫ জানুয়ারী, বুধবার,২০২৫

Text

সরকার বদলের পর রেকর্ড ২২ হাজার কোটি টাকা জব্দ করেছে বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। পাশাপাশি সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার শেয়ারও জব্দ করা হয়েছে। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর গত পাঁচ মাসে তিন শতাধিক সাবেক মন্ত্রী-এমপি, গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার শীর্ষ পদে থাকা ব্যক্তিসহ দেড় সহস্রাধিক ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে সংস্থাটি। এখনো সন্দেহজনক লেনদেন এবং বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে প্রতিদিনই শতাধিক ব্যাংক হিসাব জব্দ করছে বিএফআইইউ।

সূত্র জানায়, আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক হিসাব, পুঁজিবাজারের শেয়ারসহ ২২ হাজার কোটি টাকা জব্দ করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ১১২টি মামলায় ৩৬৬ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বিএফআইইউ। এই ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাবে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি জমা রয়েছে। এ ছাড়া সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার জব্দ করা শেয়ারের মধ্যে ‘দরবেশ বাবা’ নামে পরিচিত সালমান এফ রহমানের শেয়ারের দামই ছয় হাজার ৮০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ। অনিয়মের ধরন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপের প্রস্তুতিও চলছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাটি।

বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের গণসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ‘২০০টির বেশি বিও অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ আছে। এসব অ্যাকাউন্টের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকের গ্রাহকের অ্যাকাউন্টও আছে। কিন্তু সেসব অ্যাকাউন্টের ডিটেইল আমরা জানি না। সিডিবিএল ভালো বলতে পারবে।’

সূত্র আরো জানায়, আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা জোট এগমন্টের সঙ্গে যুক্ত ১৭৭টি দেশ ছাড়াও একাধিক দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি রয়েছে বিএফআইইউর। বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া সম্ভাব্য সব দেশে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক সহায়তায় পাচার হওয়া অর্থ ফেরতে সব রকম প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশ থেকে প্রতিবছর ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়েছে।
 
এর অন্যতম মাধ্যম ছিল বাণিজ্য। পাচার হওয়া এসব অর্থ ফেরত আনা সম্ভব। তবে তা সময়সাপেক্ষ। অর্থপাচার বন্ধে রাজনীতি, আমলাতন্ত্র ও ব্যবসাকে আরো দায়িত্বশীল হতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

কালের কণ্ঠকে তিনি আরো বলেন, আর্থিক খাতে যেসব বড় দুর্নীতি হয়েছে, তার যথাযথ তদন্ত হবে এবং প্রত্যাশা থাকবে, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যাঁরা এসব অনিয়মে জড়িত ছিলেন, তাঁদের সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। তিনি আরো বলেন, প্রাথমিক তথ্য অনুসন্ধানে যদি কোনো ব্যক্তির সম্পর্কে দুর্নীতির প্রমাণ না থাকে, তাহলে তাদের নাম মামলাভুক্ত করা যৌক্তিক হয় না। কিন্তু তদন্ত যদি যথাযথ হয় তাহলে দুর্নীতির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবাইকে চিহ্নিত করা সম্ভব। পটপরিবর্তনের আগে সরকার যে ভুলগুলো করেছে, সেই ভুল বর্তমানে অব্যাহত থাকবে না—এটাই প্রত্যাশিত।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ দেশে ফেরত আনা এবং ব্যবস্থাপনার জন্য আন্ত সংস্থা টাস্কফোর্স পুনর্গঠন করেছে সরকার। এই টাস্কফোর্সের সভাপতি করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে। আর টাস্কফোর্সকে সাচিবিক সহায়তা দেবে বিএফআইইউ।

পাচারের টাকা ফেরাতে প্রধান উপদেষ্টা ও অর্থ উপদেষ্টা কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকের সময় পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে সহায়তা চেয়েছেন তাঁরা। এ ছাড়া বিএফআইইউ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থসম্পদ সম্পর্কে জানতে বিভিন্ন দেশে চিঠি দেওয়া শুরু করেছে। সিআইডি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), কাস্টমস, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিএসইসি ও দুদক অর্থপাচার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি ও ইভিন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরাতে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটা বেশির ভাগ ব্যবসায়ীর জন্য ভালো খবর। কারণ ৯৮ শতাংশ ব্যবসায়ী অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত নন। দেশের সম্পদ দেশে ফিরে এলে স্বস্তি ফিরে আসবে। ব্যাংক খাতের সমস্যারও সমাধান হবে।’

বিএফআইইউর একাধিক কর্মকর্তা জানান, ‘অর্থপাচার রোধ ও পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আপসহীন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রথমত, পাচারের সঠিক তথ্য উদ্ধার, পরিমাণ নির্ণয় এবং পরে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দিকে আগানো হবে। এ ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
 

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2