ক্রেডিট কার্ডের লেনদেনে ব্যাপক ধস
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২০ অক্টোবর,রবিবার,২০২৪ | আপডেট: ০১:১৩ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
আগস্ট মাসের ৫ তারিখ এক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুরো আগস্ট মাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। তার প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে ক্রেডিট কার্ডের লেনদেনে। আগস্ট মাসে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ডলার খরচ ১৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে নেমে এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন এভাবে কমার মূল কারণ গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশজুড়ে অস্থিরতা, কিছু ব্যাংকের তারল্য সংকট ও আর্থিক খাতের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন বলছে, আগস্টে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ডলার লেনদেন হয়েছে ৩৭৩ কোটি টাকা। এক বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে এই লেনদেন সবচেয়ে কম। গত বছরের একই মাসে এই লেনদেন ছিল ৪১৮ কোটি টাকা।
একটি শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের প্রধান বলেন, জুলাই ও আগস্ট মাসে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার অনেক কমে গিয়েছিল। চলমান মূল্যস্ফীতির কারণে গ্রাহকরা খরচের রাশ টেনে ধরার পাশাপাশি দেশজুড়ে অস্থিরতার কারণে ব্যাংকও স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারেনি। ফলে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনে পতন হয়েছে। একই সঙ্গে ওই দুই মাসে ব্যাংক খাতে নতুন ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করাটাও বেশ কমেছে।
তবে সেপ্টেম্বর থেকে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিকের দিকে যাচ্ছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্রেডিট কার্ডধারীরা বিদেশে কার্ড সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছেন ডিপার্টমেন্ট স্টোরে। মোট লেনদেনের ২৭ শতাংশ হয়েছে এ খাতে। অন্য গুরুত্বপূর্ণ ক্যাটাগরির মধ্যে রিটেইল আউটলেট সার্ভিসে ১৭ শতাংশ, ফার্মাসিউটিক্যালসে ১২ শতাংশ, পরিবহনে ১০ শতাংশ, ব্যাবসায়িক সেবায় ৭ শতাংশ, পোশাকে ৭ শতাংশ ও অন্যান্য ক্যাটাগরিতে ২০ শতাংশ লেনদেন হয়েছে।
দেশভিত্তিক লেনদেনের পরিসংখ্যান বলছে, ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি খরচ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।
মোট লেনদেনের ২০.১৭ শতাংশই হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশভিত্তিক অন্যান্য লেনদেনের মধ্যে ভারতে ১৪ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৯ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ৯ শতাংশ, সিঙ্গাপুরে ৮ শতাংশ, কানাডায় ৭ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ৪ শতাংশ, আরব আমিরাতে ৪ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ায় ৩ শতাংশ, নেদারল্যান্ডসে ৩ শতাংশ ও আয়ারল্যান্ডে ৩ শতাংশ লেনদেন হয়েছে।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘ইসলামী ধারার অনেক ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে ঠিকমতো লেনদেন করা যায়নি। এটি সমস্যা তৈরি করেছে। তারল্য সংকটে থাকা অনেক ব্যাংক থেকে ঠিকমতো টাকা তুলতে না পারায় অনেক মার্চেন্ট পিওএস-এর মাধ্যমে পেমেন্ট নেওয়া বন্ধ রেখেছে।
পাশাপাশি সমস্যাগ্রস্ত অনেক ব্যাংক ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ক্যাশ উত্তোলন বন্ধ রেখেছে। একই সঙ্গে সরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশে কর্মরত পার্শ্ববর্তী দেশের অনেক নাগরিক তাঁদের দেশে ফেরত গেছেন। এদের একটা বড় অংশ ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন করত। ফলে সব মিলিয়ে লেনদেনে একটা নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগস্টে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রা টাকার লেনদেনও হয়েছে ১১ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। আগস্টে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কেনাকাটা হয়েছে দুই হাজার ৩৩২ কোটি টাকার। এর চেয়ে কম দুই হাজার ২৪৯ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ডিপার্টমেন্ট স্টোরে ক্রেডিট কার্ড লেনদেন আগস্টে কমে এক হাজার ১৮০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, জুলাইয়ে যা ছিল এক হাজার ১৯৬ কোটি টাকা। একইভাবে নগদ উত্তোলন, অর্থ স্থানান্তর, পরিবহন, পেশাগত সেবা ও সরকারি সেবা খাতে লেনদেন কমেছে।
অন্যদিকে রিটেইল আউটলেট সার্ভিস, ইউটিলিটি বিল, ফার্মেসি, পোশাক ও ব্যাবসায়িক সেবাসংক্রান্ত লেনদেন আগস্ট মাসে বেড়েছে।
একই সঙ্গে বিদেশিরাও বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন কমিয়েছেন আগস্টে। এ মাসে তাঁরা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে খরচ করেছেন ১১১ কোটি টাকা। গত বছরের আগস্টে বিদেশিদের খরচের পরিমাণ ছিল ২১৮ কোটি টাকা অর্থাৎ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে তাঁদের খরচ কমেছে প্রায় ৯৬ শতাংশ।