স্ত্রীকে পতিতা পল্লীতে বিক্রির টাকায় বিদেশ গেলেন স্বামী
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৭ জানুয়ারী,শনিবার,২০২৩ | আপডেট: ১২:০৬ এএম, ২৫ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
ছবি সংগৃহীত
পটুয়াখালীতে পতিতা পল্লীতে বিক্রি হয়ে যাওয়া এক নারী তার স্বামীর কাছে স্ত্রী’র অধিকারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) দুপুর ১২ টায় পটুয়াখালী জেলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ভুক্তভোগী নারী সাহিনুর বেগম সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
ভুক্তভোগী নারী সাহিনুর বেগম তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘বরিশাল সদর উপজেলার ১০নং চন্দ্রমোহন ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ভেদুরিয়া গ্রামের মৃত জালাল খান এর পুত্র মো: জাহিদ খান এর সাথে ১৪ বছর আগে কিশোরী বয়সে তার বিয়ে হয়। সে সময় ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক তার নিজ বাড়িতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও ভাই আলমগীর, ইসমাইল, বোন মিতু ও বকুল এবং তার মা খালেদার উস্থিতিতে সাহিনুর বেগমকে বিয়ে করেন। বিয়ের প্রায় ২ বছর পর জাহিদ বিদেশ যাওয়ার কথা বলে সাহিনুরের কাছে ২ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। যৗতুকের টাকা দিতে অপরগতা প্রকাশ করলে শুরু হয় শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন।
একদিন নির্যাতনের পরে চিকিৎসার নাম করে সাহিনুরকে বরিশাল শহরে নিয়ে আসে এবং কিছু ওষুধ খাওয়ায়। সে সময় সাহিনুর বেগম ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। সেখান থেকে তাকে পটুয়াখালীতে নিয়ে আসে এবং জাহিদের বোন পরিচয় দিয়ে এক বাসায় রেখে জাহিদ চলে যায়। পরে সাহিনুর জানতে পারেন তাকে পটুয়াখালী পতিতালয়ের দালালের কাছে বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা নেয়া হয়েছে। আর সেই টাকা দিয়েই বিদেশ পারি দেন স্বামী জাহিদ খান। ওষুধ খাওয়ার ২০ দিন পরে একটি মৃত সন্তান প্রসব করে সাহিনুর।
এদিকে দীর্ঘ ১০ বছর পতিতা বৃত্তি করার পর মুক্তি মেলে সাহিনুরের। এখন নিজে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে সেখানে বসবাস করছেন। তবে সম্প্রতি তিনি জানতে পারেন তার স্বামী মো: জাহিদ খান দেশে ফিরেছেন। এমন খবর পেয়ে ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর সহিনুর তার এক পরিচিত জনকে নিয়ে জাহিদের বাড়ি যায়। এ সময় পথে চন্দ্রমোহন ইউনিয়ন পরিষদের সামনে জাহিদকে দেখতে পায়। পরিষদের পথেই জাহিদের বাড়ি। সাহিনুরকে দেখে জাহিদ একটি দোকানে নিয়ে বসায় এবং তিনি কেন সেখানে গেছেন সে জন্য তাকে গালমন্দ করতে থাকে।’
সাহিনুর বলেন, ‘আমি স্ত্রী বলে দাবি করলে আমার উপর চড়াও হয়। এক পর্যায় ৬নং ওয়ার্ডের ভেদুরিয়ার ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন সুজন ও স্থানীয় গ্রাম্য ডাক্তার লিটন এর সহযোগিতায় পরিষদের এক রুমে আটকিয়ে আমাদেরকে মারধর করে। ওই সময় আমাদের সাথে থাকা টাকা পয়সা ও স্বর্ণ অলংকার নিয়ে যায় জাহিদের লোকজন। খবর পেয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান, বন্দর থানা পুলিশের মাধ্যমে আমাদেরকে উদ্ধার করে পটুয়াখালীতে পাঠিয়ে দেয়। সাহিনুর বর্তমানে পটুয়াখালী শহরে বসবাস করলেও তার গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার চানপুর ইউনিয়নের চর খাগকাটা গ্রামে।
সাহিনুর সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, ‘আমি কি অপরাধ করেছি, আমার জীবনটা কেন এমন ভাবে চলবে। আমিতো স্বামীর সংসার করতে চাই। আমাকে যখন বিয়ে করা হয়েছে তখন আমি সবে মাত্র সাবাল্যক হয়েছিলাম। সেই থেকে আমাকে নির্যাতন সহ্য করতে হচ্ছে। আমি আমার স্বামীর অধিকার ফিরে পেতে চাই। আর না হলে আমি বিচার চাই।’