avertisements 2

এমপি জিল্লুলের রাজবাড়ী ‘শাসন’

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:৪৫ পিএম, ৪ অক্টোবর,রবিবার,২০২০ | আপডেট: ১১:১৪ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪

Text

রাজবাড়ীর এমপি জিল্লুল হাকিমের ছেলে মিতুল হাকিম বিদেশে গিয়ে অস্ত্রের দোকানে অস্ত্র দেখছেন। এমপির বাড়ির একসময়ের কেয়ারটেকার বর্তমানে জেলা পরিষদের সদস্য মজনু পুলিশ না হয়েও সশস্ত্র অবস্থায় এই ছবি তোলেন।

পাঁচ বছর আগে ইউসুফ হোসেন মেম্বার ওরফে ইউসুফ মেম্বার ছিলেন কালুখালী উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক। এখন তিনি ক্ষমতাসীন দলের উপজেলা আওয়ামী লীগের সহপ্রচার সম্পাদক এবং ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিমের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগদান করে হয়ে ওঠেন বেপরোয়া। এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে বেছে বেছে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের ওপর চলে হামলা এবং নির্যাতন। পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতাকর্মীর ওপর চলে তাঁর অমানবিক নির্যাতন। অভিযোগ রয়েছে, তাঁর নির্দেশে খুন করা হয় কালুখালী ইউনিয়নের বেতবাড়িয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আছির উদ্দিনের ছেলে ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা রবিউল ইসলামকে। এই খুনের মামলাসহ পাঁচটি মামলা রয়েছে ইউসুফ মেম্বার ও তাঁর দুই পুত্রের বিরুদ্ধে।

সংসদ সদস্য ও রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিল্লুল হাকিমের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত জেলার তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী জজ আলী বিশ্বাসের নির্দেশে খুন করা হয় একজন নিরীহ স্কুল শিক্ষককে।

সংসদ সদস্যের আশ্রিত ক্যাডারদের হামলা থেকে বাদ যাননি পাংশা উপজেলার সাংবাদিক মো. আবুল কালাম আজাদও।

এমন আরো খুন, পিটিয়ে জখমসহ বহু ঘটনায় রাজবাড়ী-২ (কালুখালী-পাংশা ও বালিয়াকান্দি) আসনের সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিম ও তাঁর ছেলে আশিক মাহমুদ মিতুল হাকিমের মদদ থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জিল্লুল হাকিম গত তিনটি সংসদ নির্বাচনে ওই আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।

এমনকি পুলিশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও তাঁর আশ্রিত ক্যাডার বাহিনীর নির্যাতনের ঘটনা উঠে এসেছে। সম্প্রতি জিল্লুল হাকিমের নির্বাচনী এলাকা ঘুরে ও অনুসন্ধানে এসব ঘটনার আলামত পাওয়া গেছে।

গত ১৫ আগস্ট ইউসুফ মেম্বারের নির্দেশে তাঁর দুই ছেলে সোহেল মোল্লা ও রাসেল মোল্লাসহ স্থানীয় ক্যাডাররা যুবলীগ নেতা রবিউলকে বাড়ি থেকে ধরে পানিতে চুবিয়ে খুন করে। ওই ঘটনার পর গ্রামবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে অভিযুক্ত ইউসুফ মেম্বারের দুই ছেলেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁরা যুবলীগ নেতা খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধাপুত্র রবিউলের খুনিদের বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিম ও তাঁর ছেলে মিতুল হাকিম।

কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কালুখালী উপজেলার ত্রাস ইউসুফ মেম্বার ১৯৯০ সালে ছাত্রদলের কর্মী থাকা অবস্থায় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন অনেক দিন। জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। একসময়ে বিএনপির দুর্ধর্ষ ক্যাডার হিসেবেই পরিচিত ছিল। ২০১৪ সাল পর্যন্ত উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক ও উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৫ সালে সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিমের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন।

অভিযোগ রয়েছে, জিল্লুল হাকিমের পৃষ্ঠপোষকতায় অবৈধ বালুর ব্যবসা, মাদক, চোরাচালান, চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ নানা অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত এই ইউসুফ মেম্বার।

পাংশা উপজেলার সুবর্ণখোলা গ্রামের মৃত খোরশেদ আলী খানের ছেলে খলিলুর রহমান খানকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয় শীর্ষ সন্ত্রাসী জজ আলী বিশ্বাসের নির্দেশে। তাঁর ছোট ভাই আসাদুল খান কুষ্টিয়ার খোকশায় একটি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। গত ১৩ মার্চ সকালে আহত বড় ভাইকে দেখে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে জজ বিশ্বাসের নির্দেশে মতিন, বদিয়ার, জাকির তুহিনসহ সন্ত্রাসীরা শিক্ষক আসাদুল খানকে গুলি করে হত্যা করে।

আসাদুলের স্ত্রী রত্না খাতুন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এমপির ক্যাডার জজ আলী বিশ্বাস ও তাঁর দুই ছেলে এবং ভাতিজাসহ সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে দিনের বেলায় গুলি করে এবং কুপিয়ে হত্যা করে আমার স্বামীকে। আমার স্বামীর মতো নিরীহ মানুষকে যারা খুন করেছে, যারা খুনিদের রক্ষা করতে চায়, তাদের ফাঁসি চাই, প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাই।’

জিল্লুল হাকিমের নির্বাচনী এলাকা ঘুরে জানা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দলের নেতাকর্মীসহ অর্ধশত মানুষকে নির্মমভাবে খুন এবং পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে। সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিম ও তাঁর ছেলের আশ্রিত ক্যাডার বাহিনীর ভয়ে শতাধিক নেতাকর্মী এখনো এলাকা ছাড়া।

পাংশা উপজেলার সাংবাদিক মো. আবুল কালাম আজাদ দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিন পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। ২০১৮ সালে জিল্লুল হাকিমের ক্যাডার বাহিনীর অন্যতম কালুখালী উপজেলার মিজানুর রহমান মজনু ও আতিউর রহমান নবাব, পাংশা উপজেলার মনোয়ার হোসেন জনির সন্ত্রাস এবং দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ করেন তিনি। ওই সংবাদের পর মজনু, জনি, নবাবরা ওই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর হাতুড়ি ও রড দিয়ে পিটিয়ে আজাদের দুই পা ও হাত ভেঙে দেয়। প্রকাশ্যে দিনের বেলায় শত শত মানুষের সামনে আজাদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায়। ওই ঘটনার পর ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে দেড় মাস চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। এখন সারা শরীরে ক্ষত নিয়ে কোনো মতে বেঁচে আছেন।

সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘সত্য ঘটনা পত্রিকায় লেখায় আমার জীবনটাই শেষ করে দিয়েছিল এমপির ক্যাডাররা। বাঁ হাতে আটটি স্থানে ভাঙা এবং ডান হাতে দুই স্থানে ভাঙা। দুই পাও ভেঙে দিয়েছে তারা। থানায় ওই সময় মামলাও করতে দেয়নি এমপির ক্যাডার বাহিনী।’

শুধু আবুল কালাম আজাদই নন, পত্রিকায় সংবাদ হলেই হামলার পাশাপাশি মামলা দিয়ে সাংবাদিকদের হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। আর এসব করা হয় জিল্লুল হাকিম ও তাঁর ছেলে মিতুল হাকিমের নির্দেশে।

গত বছরের ১৭ জুন কালুখালী উপজেলার মোহনপুর গ্রামের কেছমত শেখের ছেলে ভ্যানচালক আব্দুর রহিমকে খুনের পেছনেও সংসদ সদস্য ও তাঁর ছেলের মদদ থাকার অভিযোগ রয়েছে। ক্যাডার ইউসুফ মেম্বার ও আনোয়ার ডাক্তারের মাধ্যমে পরিকল্পনা করে ভ্যানচালককে খুন করানো হয়। ভ্যানচালকের অপরাধ, তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সাইফুল ইসলামের পক্ষে কাজ করেছেন।

কালুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নেত্রী আমাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছিল। কিন্তু এমপি জিল্লুল হাকিম নৌকার বিরুদ্ধে পাল্টা প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দেন। ক্যাডার বাহিনী দিয়ে জোর করেই কেন্দ্র দখল করে আমাকে পরাজিত করেন। শুধু তা-ই নয়, নৌকার পক্ষ করায় আমার কর্মীকে নির্মমভাবে খুন করে এমপির লোকজন।’

একইভাবে জিল্লুল হাকিম ও তাঁর ছেলের আশ্রিত ক্যাডারদের হামলায় খুন হন কালুখালী উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের কৃষক লীগের সহসভাপতি মো. আমজাদ, পাংশা উপজেলার উপজেলা যুবলীগের সদস্য আবু হাসান হাপু, একই উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা কৃষক লীগের সভাপতি মুন্সি নাদের হোসেন, মৌরাট ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত হোসেন মেম্বার, কালুখালী উপজেলার সাওরাইল ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা ফিরোজ মিয়াসহ অনেকেই।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কালুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম খান দলের কঠিন সময়ে ১৯৮৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্যও ছিলেন তিনি। তাঁর গোটা পরিবারই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে হামলা-মামলার শিকার হয়েছিলেন। মিথ্যা মামলায় বেশ কয়েকবার জেলও খেটেছিলেন। সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিম ও তাঁর ছেলে মিতুল হাকিমের অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় গত বছরের ২ অক্টোবর ইউসুফ মেম্বারের ছেলে সোহেল ও রাসেলের নেতৃত্বে নজরুল ইসলাম খানকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে দুই পা ভেঙে দেয় সন্ত্রাসীরা।

নজরুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিএনপির আমলে হামলা-নির্যাতনের শিকার হয়েছি। একাধিকবার জেলও খেটেছি। কিন্তু আওয়ামী লীগ আমলে মেরেই ফেলতে চেয়েছিল হাইব্রিড আওয়ামী লীগ নেতা ইউসুফ মেম্বার ও তাঁর ছেলেরা। কালুখালীর মানুষ এখন জিম্মি হয়ে আছে।’

কালুখালীর আবুল কালাম মৃধা ২৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। ১৫ বছর ধরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে ৯টি মিথ্যা মামলায় আড়াই বছর ছিলেন এলাকা ছাড়া। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দুইবার মদাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় তাঁকে পাঁচ মাস এলাকায় ঢুকতে দেয়নি সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিমের বাড়ি ও মার্কেটের কেয়ারটেকার মিজানুর রহমান মজনু ও তাঁর ক্যাডার বাহিনী। দুইবার কুপিয়ে ও হাতুড়ি পেটা করে প্রায় মেরেই ফেলেছিল তারা। কালুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মজনু এমপির আশীর্বাদে এখন জেলা পরিষদের সদস্যও।

আবুল কালাম মৃধা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত থেকে আওয়ামী লীগে আসা ক্যাডাররাই এমপির মদদে এখন এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে।’

পাংশা উপজেলার সাওরাইল ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা নাদের হোসেন খানের ছেলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম আকমলের ওপর হামলা হয় গত বছর। মে মাসে তারাবির নামাজ পড়ে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার কুড়াপাড়ার বিদ্যুৎ অফিসের সামনে আকমল খান ও তাঁর শিশুপুত্র আহাত খানকে ইউসুফ মেম্বার এবং তাঁর ক্যাডাররা হামলা করে কুপিয়ে আহত করে।

একই উপজেলার সরিষা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বাহার বিশ্বাস বংশগতভাবেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রতীক নিয়ে বাহার বিশ্বাস জয়লাভ করেন। ওই নির্বাচনে সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিমের ঘনিষ্ঠ বিএনপি থেকে আসা আব্দুস সোবহান বিদ্রোহী প্রার্থী আনারস প্রতীকে নির্বাচন করেন। নির্বাচনের দুই বছর পর সংসদ সদস্যের প্রশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠে সোবহানের ছোট ভাই রতন, ফরিদ, ইকবাল, সাইফুলসহ একটি দল। একপর্যায়ে ইউপি চেয়ারম্যান বাহার বিশ্বাসের ছোট ভাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক পিকুল বিশ্বাসকে গুলি করে খুন করে সোবহানের ক্যাডাররা। বাহার বিশ্বাস কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে, তারা সবাই এমপি জিল্লুল হাকিমের লোক। বিএনপি থেকে দলে আসা ওই সব ক্যাডার বাহিনী আমার ভাইকে খুন করলেও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়।’

জিল্লুল হাকিমের আশ্রিত ক্যাডার বাহিনী : সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিম ও তাঁর ছেলে মিতুল হাকিমের আশ্রিত ক্যাডারদের মধ্যে কালুখালীতে আরো রয়েছে আতিউর রহমান নবাব, কামাল বিশ্বাস, সুমনসহ অর্ধশত। পাংশায় অন্যতম হলেন মনোয়ার হোসেন জনি। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যকর্মী। সরকারি চাকরি করেও সন্ত্রাস মাদক কারবার, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে যাচ্ছেন। সংসদ সদস্যের নির্বাচনী এলাকার হাতুড়ি বাহিনীর পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করেন জনি। পাংশায় আরো আছে মো. শফিক, শাহেদ আলী, মো. আলী, নয়ন, ইফতেখার, নাজমুল হাকিম রুমী, মো. রিপন, মিলন, মারুফ সর্দার, খন্দকার ছিসিলসহ অর্ধশত ক্যাডার। বালিয়াকান্দি উপজেলায় সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠ ক্যাডার হিসেবে পরিচিত তাঁর চাচাতো ভাই এহসানুল হক সাধন। একসময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন সাধন। প্রভাব খাটিয়ে তাঁকে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদে বসিয়েছেন সংসদ সদস্য। এই সাধনের নেতৃত্বে উপজেলার সন্ত্রাস, মাদক কারবার, জমি দখলসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চলছে। তাঁর সঙ্গে আছেন সাহেব আলী, শ্যাম্পু মোল্লা ও মামুন মোল্লা, মিলন মেম্বার, হিল্লোল বসু, মাধব ঘোষ, বাদশা, বাদশা আলমগীর, আবুল কালাম আজাদ, রিপন বিশ্বাস, রাসেল খান রিজু, ফারুক বেশ কয়েকজন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, তিন উপজেলায় সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের নিয়ন্ত্রণ করেন সংসদ সদস্যের ছেলে মিতুল হাকিম। পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান রাজবাড়ীতে আসার পর থেকেই সন্ত্রাসী-মাদক কারবারিসহ অপরাধীদের ধরতে অভিযান শুরু করেন। এরই মধ্যে সংসদ সদস্য ও তাঁর ছেলের ঘনিষ্ঠ জজ আলী বিশ্বাস, ইউসুফ মেম্বারের ছেলে সোহেল মোল্লাসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু এসপিকে বদলি করার জন্য সরকারের ওপর মহলে নানাভাবে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিম।

গতকাল শনিবার বিকেলে রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সভা শেষে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিম বলেন, ‘আমরা যেমন সবাই ভালো না, তেমন পুলিশের যে সবাই ভালো তাও তো না। ভালো-খারাপ সব রকমেরই লোক আছে। আমরা সামগ্রিকভাবে পুলিশের বিপক্ষে না। পুলিশকে আমরা অনেক হেল্প করছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘সংগঠনকে পুলিশ কেন, অন্য কোনো সংগঠনও যদি ক্ষতিগ্রস্ত করে তাহলে আমরা সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। জজ আলী বিশ্বাস আওয়ামী লীগ করত বলেই বিএনপি তাঁর ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করেছে। এখন যে নির্যাতন করা হচ্ছে, তা করা উচিত হচ্ছে না। সে যেকোনো সময় মারা যেতে পারে। সে একজন ক্যান্সারের রোগী।’

এসপি মিজানুর রহমান বলেন, রাজবাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধার ছেলে ও শিক্ষক খুনের আসামিসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের পর জেলার একটি প্রভাবশালী মহল পুলিশের ওপর ক্ষুব্ধ হয়। তবে পুলিশ তাদের কাজ করে যাচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য গতকাল সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিমের দুটি মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাঁর দুটি নম্বরই বন্ধ পাওয়া গেছে। তাঁর মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা পাঠালেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2