কাবিন ছাড়া বিয়ের ২৫ দিনেই লাশ হয়ে বাড়ি ফিরল স্কুলছাত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:২০ এএম, ১৮ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২০ | আপডেট: ০৫:১৯ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
মাত্র ২৫ দিন আগে কাবিন ছাড়াই বিয়ে হয়েছিল কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার কোরপাই গ্রামের ফাহিমা (১৮) নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর। এর মধ্যেই স্বামী ও পরিবারের নির্যাতনে লাশ হয়ে বাবার বাড়ি ফিরে আসতে হল ওই তরুণীর।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, জেলার বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের কোরপাই গ্রামের জাহাঙ্গীরের মেয়ে স্থানীয় নিমসার উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল ফাহিমা। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে একই গ্রামের প্রতিবেশী ফজলু মিয়ার ছেলে নিমসার বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ফয়সাল (২২) নানাভাবে ফাহিমাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল।
গত ২২ আগস্ট সকালে ফয়সাল ফাহিমাকে ঘরের সামনে থেকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। খোঁজাখুঁজি করেও না পেয়ে ২৩ আগস্ট পরিবারের পক্ষ থেকে বুড়িচং থানায় অভিযোগ করার খবর পেয়ে অপহরণকারী ফয়সালের পিতা ফজলু মিয়া, বড় ভাই সাদ্দামসহ গ্রামের কিছু লোক এসে মেয়েকে ফিরিয়ে দেয়ার অঙ্গীকার করেন।
এরপর ছেলের কাছে মেয়েটির বিয়ে দেয়ার সম্মতি আদায় করে ২৫ আগস্ট রাত ৮টায় ফাহিমাকে কিছু সময়ের জন্য তার পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেয়। রাত ৯টায় স্থানীয় সমাজপতিদের উপস্থিতিতে কাবিন ছাড়াই হুজুর ডেকে মুখে মুখে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়।
এ সময় সমাজপতিরা মেয়েপক্ষকে জানান, আগামী ৫ দিনের মধ্যে কাবিনসহ যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হবে। ২৭ আগস্ট সে বাবার ঘরে যেতে চাইলে স্বামীসহ পরিবারের লোকজন বাধা দেয় ও মারধর করলে একপর্যায়ে ফাহিমা দৌড়ে বাবার ঘরে চলে আসে।
নিহতের খালাতো ভাই কাদের জানান, এ সময় বাবা-মাসহ তিনি বুঝিয়ে ফাহিমাকে স্বামীগৃহে পাঠিয়ে দেন। পরে পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে ফাহিমার যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। গত ১৩ সেপ্টেম্বর ফয়সালের কাছে পাওনা ১০ হাজার টাকা ফেরত চান ফাহিমার বড় বোন শারমিন। এ নিয়ে ফয়সালের মায়ের সঙ্গে তর্কবিতর্ক হয়। এরপর ফয়সাল, তার মা, বাবা, বড় ভাই সাদ্দাম, ছোটভাই ফয়েজ, সাদ্দামের স্ত্রীসহ পরিবারের লোকজন নানাভাবে তাকে অত্যাচারের একপর্যায়ে মুখে বিষ ঢেলে দেয়। এরপর তাকে নিয়ে যায় পার্শ্ববর্তী চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
নিহতের চাচাতো ভাই হালিম, ফুফাতো বোন তানিয়া জানান, চান্দিনা হাসপাতালে দুইদিন চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার কথা বলে ফাহিমাকে বাড়িতে নিয়ে আসে ফয়সাল। বুধবার সন্ধ্যায় ফাহিমার অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে রাত ১১টায় ভর্তি করে। এক ঘণ্টারও কম সময়ে সেখানে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পরপরই হাসপাতালে থাকা নিহতের স্বামীসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা লাশ ফেলে পালিয়ে যায়।
নিহতের খালাতো ভাই কাদের আরও জানান, লোক মারফত খবর পেয়ে বুধবার গভীর রাতেই নিহতের পিতা জাহাঙ্গীরসহ পরিবারের লোকজন ঢাকায় হাসপাতালে ছুটে যান। বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্ত শেষে বিকালে কোরপাই গ্রামে লাশ নিয়ে আসার পর সন্ধ্যায় পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন সম্পন্ন হয়।
নিহত ফাহিমার সুরুতহাল বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে শেরেবাংলা নগর থানার এসআই মোবারক আলী জানান, প্রাথমিকভাবে নিহতের মুখে বিষের আলামত পাওয়া গেছে।