ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে পর্যটনকেন্দ্রগুলো
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:০৩ পিএম, ১২ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২০ | আপডেট: ০৮:২৩ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
করোনাভাইরাসের হানায় অনেকটা ঘরবন্দি হয়ে পড়েছিল মানুষ। টানা কয়েক মাসের এই বন্দিদশায় হাঁপিয়ে উঠেছিল তারা। এখন তাই বুকভরে শ্বাস নিতে ছুটছে খোলা হাওয়ায়। ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলো। খরা কাটছে পর্যটকনির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্যের।
সাগরের নোনা পানিতে পা ভেজাতে এরই মধ্যে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ভিড় করছে বহু মানুষ। কুয়াকাটাও সাগরপ্রেমীদের পদচারণে মুখর হয়েছে। পাহাড়ের কোল থেকে নেমে আসা ঝরনার সৌন্দর্য, কাপ্তাই লেকের শোভা উপভোগ করতে রাঙামাটিতে বাড়ছে মানুষের আনাগোনা। হাওরাঞ্চলে ছুটছে অনেকে। চা বাগান আর পাহাড়ের টানে হবিগঞ্জে যাচ্ছে পর্যটকরা। তবে প্রশাসনের কড়াকড়িতে এখনো সেভাবে গতি ফেরেনি সিলেটের পর্যটনে।
কক্সবাজার : টানা পাঁচ মাস বন্ধ থাকার পর বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার পুরনো কোলাহলময় আবহে ফিরতে শুরু করেছে। ১৮ মার্চ থেকে শুরু হয়ে ১৭ আগস্ট কক্সবাজার ভ্রমণে প্রশাসনের বিধি-নিষেধ ছিল। বিধি-নিষেধ উঠে যাওয়ায় করোনাভীতির মধ্যেও বাড়ছে ভ্রমণপিপাসুদের উপস্থিতি। হাসি ফুটতে শুরু করেছে সাগরপারের ব্যবসায়ীদের মুখে। হোটেল-রেস্তোরাঁর খরা কাটতে শুরু করেছে। গাজীপুর থেকে আসা নাসির উদ্দিন বললেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে লকডাউনে ঘরে বন্দি জীবন কাটিয়ে যেন হাঁপিয়ে উঠেছি। তাই কক্সবাজার সৈকতে বসে নির্মল হাওয়া এবং সাগরের ঢেউ উপভোগ করতে এসেছি।’
রাঙামাটি : টানা ছয় মাস বন্ধ থাকার পর সেপ্টেম্বর থেকে চালু হয়েছে সাজেক পর্যটনকেন্দ্র। স্বাস্থ্যবিধি মানার সাতটি শর্তে সাজেক ভ্যালির রিসোর্ট-হোটেল-মোটেল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রশাসন। পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ছে পর্যটননির্ভর পাহাড়ের এই জনপদে। এত দিনের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখছেন হোটেল মালিকরা।
রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বলেন, ‘পর্যটকদের আগমন এখনো চেনা ছন্দে ফেরেনি। আশা করছি শিগগিরই সব স্বাভাবিক হবে।’
হবিগঞ্জ : এ জেলার পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেওয়ার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি প্রশাসন। তবে পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে। জেলার ২৪টি চা বাগান, তিনটি রাবার বাগান, হাওর, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, রেমা-কালেঙ্গা জাতীয় উদ্যান, খাসিয়া পুঞ্জি, গ্রিনল্যান্ড পার্ক, শাহজীবাজার ফ্রুটস ভ্যালি, সাগরি দিঘি, মহাগ্রাম বানিয়াচং, সিপাহসালার সৈয়দ নাছির উদ্দিনের মাজারসহ অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদের উপস্থিতি আশানুরূপ বাড়ছে। এ ছাড়া কালারডোবা থেকে নৌকা নিয়ে হাওর ভ্রমণ এবং স্পিডবোট ভ্রমণে আসছে হাজারো মানুষ।
সিলেট : সবুজে মোড়ানো বহু চা বাগান ছাড়াও জাফলং, রাতারগুল ও বিছনাকান্দি, সাদাপাথর, শ্রীপুর, মায়াবী ঝরনা, লালাখাল, জৈন্তাবাড়িসহ বহু পর্যটনকেন্দ্রের অবস্থান সিলেটে। রয়েছে হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরাণ (রহ.)-এর মাজার। কিন্তু সব স্থান এখনো খাঁ খাঁ করছে। সিলেট নগরীর প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজারের হোটেল গোল্ডেন সিটির ব্যবস্থাপক মৃদুল কান্তি দত্ত বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে এখন এই শিল্পে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। অবস্থা আসলেই খুব খারাপ।’ এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দ্রুত পর্যটনকেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
কলাপাড়া : সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের শোভা উপভোগ করতে আবার কুয়াকাটায় ভিড় করছে সৌন্দর্যপিপাসুরা। গঙ্গামতিচর, ঝাউবন, মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধবিহার পর্যটক এবং দর্শনার্থীদের আনাগোনায় মুখরিত হচ্ছে। দুপুরে কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্টে হাজার হাজার পর্যটক সাগরে নেমে শরীর জুড়িয়ে নিচ্ছে। বিশেষ করে বৃহস্পতি ও শুক্রবার পর্যটকে সয়লাব হয়ে পড়ছে কুয়াকাটার দর্শনীয় স্পটগুলো।
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব শরীফ জানালেন, ১ জুলাই থেকে কুয়াকাটা পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এর পর থেকে পর্যটকের আগমন বাড়ছে।
কুয়াকাটা হানিমুন কটেজের ম্যানেজার মো. জামাল হোসেন জানালেন, তাঁদের ১০টি কটেজ সপ্তাহের বৃহস্পতি ও শুক্রবার সম্পূর্ণ বুকিং থাকছে। অন্যান্য দিনে ৫০ শতাংশ ঘর বুকিং থাকছে।