জামালপুরের সেই ডিসির সাজা, কমানো হয়েছে বেতন
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৩:২৬ পিএম, ৪ মার্চ,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:১৫ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
নারী কর্মচারীর সঙ্গে অসংগত সম্পর্কের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া জামালপুরের সাবেক ডিসি (জেলা প্রশাসক) আহমেদ কবীরকে বিভাগীয় মামলায় শাস্তি দিয়েছে সরকার। তার বেতন এক গ্রেড কমিয়ে নিম্নধাপে নির্ধারণ করার প্রজ্ঞাপন গত ১৮ ফেব্রুয়ারি জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
তদন্ত কমিটির সুপারিশের আলোকে আহমেদ কবীরের এ শাস্তি রাষ্ট্রপতি অনুমোদন করেছেন। মতামত দিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশনও (পিএসসি)।
বেতন কমিয়ে সাজা আহমেদ কবীর এ শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন রাষ্ট্রপতির কাছে। আহমদ কবীর ছিলেন ডিসি, স্থানীয় প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা। সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন একই অফিসের সবচেয়ে নিম্ন গ্রেডের নারী কর্মচারী সানজিদা ইয়াসমিন সাধনার সঙ্গে। মেলামেশা করেছেন অফিস প্রাঙ্গণেই। প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা হয়ে অধস্তন কর্মচারীর সঙ্গে এ মেলামেশার খবরে সারা দেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিল। প্রশাসনে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি উঠেছিল। সেই সময় সচিবালয়ের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, ‘ডিসি নিয়োগ করা হয় সবচেয়ে চৌকস কর্মকর্তাদের। উপসচিব পর্যায়ের এ কর্মকর্তাকে দেখে অনুসরণ করেন জুনিয়র কর্মকর্তারা। ডিসি জুনিয়র কর্মকর্তাদের মাঝে ভালো কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্নের বীজ বুনে দেন। সেই ডিসি যখন অসংগত সম্পর্কে জড়ান তখন তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।’
তাদের সম্পর্কের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সরকার তাকে ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর প্রত্যাহার করে এবং সাময়িক বরখাস্ত করে। বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করার জন্য যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তার নেতৃত্বে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। সেই কমিটির সুপারিশে তাকে তিন বছরের জন্য এক গ্রেড নিচের বেতন স্কেলে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সরকারি কর্মচারি (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ অনুযায়ী দুই ধরনের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। গুরুতর অপরাধের জন্য দেওয়া হয় গুরুদন্ড। আর ছোটখাটো অপরাধের জন্য দেওয়া হয় লঘুদন্ড। আহমেদ কবীরকে দেওয়া হয়েছে গুরুদন্ড। তবে গুরুদন্ডের মধ্যে সবচেয়ে কম মাত্রার শাস্তি পেয়েছেন আহমেদ কবীর। গুরুদন্ড হিসেবে যেসব শাস্তি দেওয়া হয় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে বাধ্যতামূলক অবসর, চাকরি থেকে অপসারণ, চাকরি থেকে বরখাস্তকরণ এবং নিম্নপদ বা নিম্নবেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ। এ গুরুদন্ডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম মাত্রার শাস্তিটি হচ্ছে নিম্নবেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ বা নামিয়ে দেওয়া। সেটিই দেওয়া হয়েছে আহমেদ কবীরকে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ এর বিধি ৪(৩)(ক) মোতাবেক গুরুদন্ড হিসেবে ০৩ (তিন) বছরের জন্য নিম্নবেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ করা হলো। আহমেদ কবীর উপসচিব হিসেবে বর্তমানে পঞ্চম গ্রেডে বেতন পান। শাস্তির কারণে এখন থেকে তিনি ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী ষষ্ঠ গ্রেডের সর্বনিম্ন ধাপের বেতন পাবেন। অর্থাৎ একজন সিনিয়র সহকারী সচিব পদোন্নতি পাওয়ার পর যে বেতন পান আহমেদ কবীর এখন সেটা পাবেন। পঞ্চম গ্রেডের মূল বেতন প্রায় ৭০ হাজার টাকা। এখন থেকে তিনি মূল বেতন পাবেন ৩৫ হাজার টাকা। সঙ্গে এ গ্রেডের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ অন্যান্য ভাতা-সুবিধা পাবেন।
অভিযুক্ত আহমেদ কবীরকে প্রথমে অভিযোগ জানিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়। লিখিত কারণ দর্শানোর সঙ্গে তিনি ব্যক্তিগত শুনানি চান। তার জবাব গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তার বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বাজেট) মাসুদুল হাসানের প্রথম দফায় করা তদন্তে ভুল থাকায় দ্বিতীয় দফা তদন্তের প্রতিবেদন দিলে সেটি গ্রহণ করা হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আহমেদ কবীরকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।